নাসিরনগর হামলার নেপথ্য নায়করা গ্রেপ্তার হয়নি: শাহরিয়ার কবির

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ব্যবহার করে হিন্দুদের উপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শাহরিয়ার কবির।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2016, 10:50 AM
Updated : 11 Dec 2016, 10:50 AM

রোববার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ অভিযোগ তুলেন।

তিনি বলেন, “রামুর মতো নাসিরনগরেও ঘটনার নেপথ্য নায়কদের এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি। অজ্ঞাতনামা যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা রামুর ঘটনার মতো দ্রুত জামিনে বেরিয়ে আসবে।”

ফেইসবুকে ‘ইসলাম অবমাননার’ অভিযোগ তুলে গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে ১৫টি মন্দির ও হিন্দুদের শতাধিক ঘরে ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়।

নাসিরনগরে হামলার রেশ থাকার মধ্যে গত ৬ নভেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ও সাঁওতালদের সংঘর্ষ থামাতে গুলি চালায় পুলিশ।

এতে তিন সাঁওতাল নিহত হন, আহত হন অনেকে। পরে পুলিশ-র‌্যাব ওই দিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এক অভিযান চালিয়ে মিলের জমি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে।

এ দুই ঘটনায় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন শাহরিয়ার কবির।

তিনি বলেন, “নাসিরনগর ও গোবিন্দগঞ্জে নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় তদন্ত দল ঘটনার নেপথ্য কারণ সম্পর্কে যেসব তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন তা উদ্বেগজনক। এই তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বড় মাদরাসা কীভাবে শতাধিক বছর ধরে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াচ্ছে।”

নির্মূল কমিটির সরেজমিন প্রতিবেদনে নাসিরনগরের এমপি মৎস্য ও প্রাণীসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপির বিরোধের বিষয়ও তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি-জামায়াত, হেফাজত ও মৌলবাদী গোষ্ঠী হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বাড়িঘর ভাংচুরসহ লুটপাটের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।”

নাসিরনগরে হামলার পেছনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার কবির বলেন, ”আমাদের প্রতিবেদনে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগ নেতাদের বিষয় আমরা এড়িয়ে যায়নি। আমরা বলেছি, সরকারি দলের কেউ যদি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তাদেরকেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।”

সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন এবং সংখ্যালঘুদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় প্রসঙ্গে নির্মূল কমিটির দীর্ঘদিনের দাবির বিষয়টি আবার সামনে আসেন তিনি।

“প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জামায়াতের উপস্থিতি ছাড়াও প্রচলিত আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের শাস্তি এবং ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আমরা এ বিষয়ে আবারও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”

আইনি দুর্বলতা প্রসঙ্গে নির্মূল কমিটির সহসভাপতি সাবেক বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বলেন, “সাম্প্রদায়িক হামলা হলে সেটা ফৌজদারি অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয় না। এ জন্য পৃথক আইন দরকার।”

সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার কর্মী অ্যারোমা দত্ত বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী চক্র এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলায় প্রথম সারিতে থাকে। আজকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল ক্ষমতায়; তাও এ ধরনের ঘটনা তারা ঘটাচ্ছে।

“বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই বাংলাদেশে এ ধরনের জঘন্যতম ধর্মভিত্তিক দুর্ঘটনা যেন আর না ঘটে সেটা হোক আমাদের বিজয় মাসের অঙ্গীকার।”

অন্যদের মধ্যে সাবেক বিচারপতি শামসুল হুদা ও নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী এসময় উপস্থিত ছিলেন।