ভোটকেন্দ্র দখল ঠেকাতে অস্ত্রের ‘যথাযথ’ ব্যবহার চান সিইসি

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটকেন্দ্র দখল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে থাকা অস্ত্রের ‘যথাযথ’ প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।

মঈনুল হক চৌধুরী জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2016, 11:08 AM
Updated : 10 Dec 2016, 11:08 AM

আগের নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় তিনি বলেছেন, “কিছু লোক কেন্দ্র দখল করল আমার লোক অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে- এটা গ্রহণযোগ্য না।

“আর্মসের প্রোপার ইউজ করতে হবে। কেউ যেন জোরপূর্বক কেন্দ্রে ঢুকতে না পারে, কেন্দ্র দখল করতে না পারে- সে ব্যবস্থা নিতে হবে।”

আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এবং ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় জেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শনিবার ইসিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে একথা বলেন কাজী রকিব।

জেলা পরিষদ নির্বাচন সরাসরি ভোটে না হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনটিই ছিল বৈঠকের মূল আলোচ‌্য বিষয়। বিএনপি দাবি জানিয়ে এলেও নারায়ণগঞ্জে সেনা মোতায়েন না করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও জানিয়ে দেন তিনি।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে এই দুটিই হতে যাচ্ছে শেষ নির্বাচন। গত ৫ বছরে দায়িত্ব পালনের মধ‌্যে বিভিন্ন নির্বাচনে কেন্দ্র দখল ও সহিংসতা নিয়ে সমালোচনায় পড়তে হয়েছে বর্তমান ইসিকে।

কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ (ফাইল ছবি)

এবার নারায়ণগঞ্জে ভোটে সে ধরনের কোনো ধরনের শঙ্কা দেখা যাচ্ছে না বলে বৈঠকে গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়। সিইসিও বলেন, নারায়ণগঞ্জে পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিকের চেয়ে ভালো’ রয়েছে।

বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিজিবি মহাপরিচালক, আনসার মহাপরিচালক, র‌্যাব মহাপরিচালক, কোস্টগার্ড মহাপরিচালক, এসবি, এনএসআই, ডিজিএফআই, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি এবং সশ্লিষ্ট প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তা বা প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং রিটার্নিং কর্মকর্তাও এ বৈঠকে অংশ নেন।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি কাজী রকিব বলেন, “সেটার (কেন্দ্র দখল ঠেকাতে) জন্যে উপস্থিত কর্মকর্তাদের ক্লিয়ার ইন্সট্রাকশন দেওয়া হয়েছে, আগের রাত্রে কোনো রকমের জোরাজুরি সহ্য করা হবে না।

“তার জন্যে কেন্দ্রে পুলিশ ফোর্স বাড়ানো হবে। সতর্ক অবস্থায় থাকবে অন্য প্রেট্রোলরা; তারা যেন ইমিডিয়েটলি রেসপন্স করতে পারে।”

“দুষ্কৃতকারীরা সংখ্যায় যতই হোক, তারা যেন কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পারে এবং যেন কোনো সমস্যা সৃষ্টি করতে না পারে,” বলেন কাজী রকিব।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কেন্দ্র দখল নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন সিইসি। অনিয়ম রোধে কঠোর হতে বলেন তিনি।

গত মার্চে ইউপি ভোটে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের তোরাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র দখলে হাতবোমা বিস্ফোরণে ঘটানো হয়েছিল (ফাইল ছবি)। এই ধরনের ঘটনা বিভিন্ন নির্বাচনে আরও ঘটে

সিইসি বলেন, সন্ত্রাসী, মস্তান, বহিরাগতদের বিরুদ্ধে দৃশ‌্যমাণ ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিও দৃশ‌্যমাণ হতে হবে।

“প্রার্থীদের এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়েছে, এমন অভিযোগ পাই। কোনোভাবে এজেন্টদের যেন বের করে দেওয়া না হয়। “

বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠূ হয়েছে এটা দেখাতে হবে।

স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, সুষ্ঠূ, অবাধ নির্বাচন করতে সবাই অঙ্গীকারাবদ্ধ।

র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে। এ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ধরে রাখতে হবে।

এনএসআই মহাপরিচালক জানান, ভোটে কোনো ধরনের গোলযোগের আশঙ্কার তথ্য নেই।

এসবি জানায়, এ নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকির তথ‌্য তাদের কাছেও নেই। তবে নির্বাচনে সাধারণত যেসব ঝুঁকি আসে, তা মোকাবেলা করা হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জে এখন পর্যন্ত কোনো হুমকি তাদের চোখে পড়েনি।

আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানান নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার ।

বৈঠকে একজন বলেন, জেলা পরিষদের ১৯ জেলায় একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছে। ৩৬ জেলায় ৭৭ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে আওয়ামী লীগের। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা রয়েছে।

জেলা পরিষদের ভোটারদের প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে সবার চোখ কান খোলা রাখতে বলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব।