ফ্লাইওভারের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ইতোমধ্যে মাঠটি থেকে তাদের সব মালামাল সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে।
সব মালামাল সরিয়ে নেওয়া শেষে মাঠটির সংস্কার করে স্থানীয় কিশোর-তরুণদের জন্য খেলাধুলার উপযোগী অব্স্থায় ফিরিয়ে আনতে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল।
৪ দশমিক ৫২ একর আয়তনের গোলাপবাগ মাঠে ২০০৬ সাল থেকে ফ্লাইওভারের নির্মাণসামগ্রী ও যন্ত্রপাতি রাখছে ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার।
২০১৩ সালের ১১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ফ্লাইওভারের উদ্বোধনের পর তা দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হলেও মাঠ থেকে সরানো হচ্ছিল না নির্মাণসামগ্রী।
মাঠ ব্যবহারের সময় বাড়াতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) কয়েক দফা আবেদন করে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন। সর্বশেষ এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেয় ডিএসসিসি।
ফ্লাইওভার চালুর পরপরই এলাকাবাসী এ মাঠটি উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। এ দাবিতে সড়ক অবরোধ, মানববন্ধনও করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বৃহস্পতিবার গোলাপবাগ মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ফ্লাইওভার নির্মাণকাজে ব্যবহার করা বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি ইতোমধ্যেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। একটি ক্রেইন দিয়ে ভারী যন্ত্রাংশ ট্রাকে তোলা হচ্ছে। বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে ফ্লাইওভার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সাইট অফিস, কর্মচারীদের থাকার জায়গা। সেসব সরিয়ে নেওয়ার কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা।
এসময় ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের কোনো কর্মকর্তা সেখানে ছিলেন না। মালামাল সরিয়ে নেওয়ার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানায়, মালামাল সরিয়ে নিতে আরও দুই-তিন দিন সময় লাগবে।
মাঠটিতে যেন কোনো ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা না করা হয়, সেই দাবিও রয়েছে স্থানীয়দের।
ধলপুরের বাসিন্দা ব্যাংককর্মী মো. মানিক মাঠের একপাশের খালি জায়গায় বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলছিলেন। মাঠ থেকে নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নিতে শুরু করায় তাদের খুশির কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান তিনি।
“আমরা খুবই খুশি। এখন নিয়মিত খেলতে পারুম।”
ধলপুরের আরেক কিশোর আরিফ মাঠটি সমান করে দ্রুত খেলাধুলার উপযোগী করে দেওয়ার দাবি জানায়।
“মাঠে অনেক সিমেন্টের স্ল্যাব, লোহার রড গাড়া হইছে। অনেক গর্ত করছে। এগুলান তাড়াতাড়ি সরাইলে, খেলার উপযোগী কইরা দিলে আমাগো জন্য ভালো।”
এ মাঠ খুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন স্থানীয় তরুণ মোহাম্মদ বাবু।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এক দশক এ মাঠ বন্ধ থাকায় এলাকার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে।
“আগে আমাদের এলাকার বেশিরভাগ পোলাপান এই মাঠে খেলাধুলা করতো। এ মাঠ থেকে অনেক ফুটবলার ক্রিকেটার উঠে আসার কথা ছিল, কিন্তু আসে নাই। উল্টা অনেকে নেশার পথে পা বাড়াইছে।”
“অনেক খেলোয়াড় আছে, এখন স্টেশনে গিয়ে দেখবেন নেশা করার লাইগা মাল টোকাইতাসে। আর এখনকার বাচ্চারা বোঝেই না খেলাধুলা কী জিনিস।”
দীর্ঘ সময় মাঠটি বন্ধ থাকায় গোলাপবাগ এলাকা ক্রীড়াক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে পড়েছে বলে মনে করেন ওসমান গনি।
“এই মাঠে অনেক ভালো ভালো টুর্নামেন্ট হতো। মাঠকে ঘিরে স্থানীয় দু-একটি ক্লাব ছিল। মাঠ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ক্লাবের কার্যক্রমও এখন আর নাই। এ ওয়ার্ডসহ আশপাশের চারটি ওয়ার্ডে কোনো উন্মুক্ত মাঠ নেই। আমরা চাই এখানে একটি খোলা মাঠ থাকুক।”
মাঠটি খুলে দেওয়ায় খুশির কথা জানালেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর বাদল সরদারও।
“এখানে একটি মাঠ হবে, উন্মুক্ত জায়গা থাকবে। স্থানীয় বাসিন্দারা খেলাধুলা করবে, এলাকার মানুষজন হাঁটাচলা করবে। এখানে অন্য কোনো স্থাপনা করার কোনো সুযোগ নেই। আমরাও মেয়রের কাছে সেভাবেই চাহিদার কথা জানিয়েছি।”
এ মাঠ শুধু খেলাধুলার জন্যই ব্যবহার করা হবে; কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনা করে হবে না বলে জানান ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল।
“মাঠ মাঠই থাকবে। এখানে বাচ্চারা যেন খেলাধুলা করতে পারে, সেরকম আধুনিক সুযোগ সুবিধা তৈরি করে দেওয়া হবে।”
গোলাপবাগ মাঠকে নতুনভাবে সাজানো হবে বলে জানান ডিএসসিসির এই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার মাঠ ও পার্ক উন্নয়নে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে এই মাঠও রয়েছে।
এ মাঠে আবার খেলা গড়াতে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়ে খান মোহাম্মদ বিলাল বলেন, “এখানে অনেক ধরনের স্ট্রাকচার আছে; সেগুলো সরাতে সময় লাগবে।
“২০১৭ সালের মধ্যে আমরা সবগুলো মাঠের উন্নয়ন কাজ শেষ করব। গোলাপবাগ মাঠে অনেক স্থাপনা করা হয়েছিল। সেগুলো সরানোর পর মাঠ খেলাধুলার উপযোগী করতে সময় আরেকটু বেশি লাগবে।”