বাল্যবিয়ে নিয়ে বিশেষ বিধান ‘মশা মারতে কামান দাগার’ মতো: বার্নিকাট

‘বাল্যবিবাহ নিরোধ বিলে’ অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ের অনুমতির বিশেষ বিধানকে ‘মশা মারতে কামান দাগার’ মতো বিষয় বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2016, 09:33 PM
Updated : 9 Dec 2016, 09:40 PM

মেয়েরা যাতে ভুক্তভোগী না হয় সেজন্য সরকারের প্রতি বিকল্প খোঁজার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

মেয়েদের বিয়ের বয়সে ছাড়ের কারণ ব্যাখ্যায় অল্প বয়সী মেয়েরা গর্ভবতী হলে তাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ কী হবে বলে প্রধানমন্ত্রী যে প্রশ্ন রেখেছেন সে প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বলছেন, বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা ‘বিরল’।

বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের আয়োজন অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবার থেকেই হয় বলেই তার বিশ্বাস।

শুক্রবার রাজধানীতে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমি বলতে চাই, যে ঘটনা বিরল তার জন্য বিশেষ বিধান করা ‘মশা মারতে কামান দাগার’ মতো, খুব ছোট সমস্যার জন্য অনেক বড় যন্ত্রের ব্যবহার।”

প্রস্তাবিত আইনকে স্বাগত জানালেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ মেয়েদের বিয়ের বয়সে ছাড়ের বিধান বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে বাড়ার ঝুঁকি তৈরি করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মার্শা বার্নিকাট।

জাতিসংঘের সংস্থা ইউএন ওমেন আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার হাই কমিশনার, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কসহ অন্যান্য সংস্থা ও কূটনৈতিক মিশনের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

সফররত ইউএন ওমেনের উপ নির্বাহী পরিচালক লক্ষ্মী পুরির জন্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ইউএন ওমেন বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি ক্রিস্টিন হান্টারও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। 

বিভিন্ন মহলের আপত্তির মধ্যেই বৃহস্পতিবার ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ বিল-২০১৬’ সংসদে উত্থাপন করা হয়, যাতে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স আগের মতো ১৮ বছর রাখা হলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে।

‘বিশেষ প্রেক্ষাপট’ ব্যাখ্যা করে আগের দিন সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে তারা এই আইন করছেন।

“আমরা ১৮ বছর পর্যন্ত বিয়ের বয়স নির্ধারণ করে দিয়েছি। কিন্তু একটি মেয়ে যদি… যে কোনো কারণে ১২-১৩ বা ১৪-১৫ বছরের সময়ে গর্ভবতী হয়ে যায়, তাকে গর্ভপাত করানো গেল না, তাহলে যে শিশুটি জন্ম নেবে তার অবস্থান কী হবে? তাকে কী সমাজ গ্রহণ করবে? তাহলে এই বাচ্চাটির ভবিষ্যৎ কী হবে? তার ভাগ্য কী হবে? এ রকম যদি কোনো ঘটনা ঘটে তাহলে কী হবে?”

এই ধরনের কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে সেখানে বাবা-মার মত নিয়ে আদালতের মাধ্যমে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হলে বাচ্চাটি ‘বৈধতা’ পাবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

পশ্চিমা দেশগুলোতে বহু অপ্রাপ্তবয়স্ক মা রয়েছে এবং সেখানে বাবার পরিচয় ছাড়া সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করাতে কোনো সমস্যা হয় না বলেও বিশেষ বিধানের পক্ষে যুক্তি দেখান তিনি।

আলোচনায় রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট বলেন, অনেক দেশে পুরাতন আইন হালানাগাদ না হওয়ায় এখনও বাল্য বিয়ের বৈধতা রয়েছে।

“নতুন আইন করা উন্নত কোনো দেশে বাল্য বিয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই।”

“পশ্চিমে ওই বিধান পুরাতন। তবে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো বাবা-মা চান না তাদের মেয়ের আগে-ভাগে বিয়ে হয়ে যাক। কারণ সেখানে শিক্ষাগ্রহণ ও স্বাধীনভাবে ক্যারিয়ার গড়ার অনেক সুযোগ রয়েছে।”

এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি বলছি না, এখানকার অভিভাবকরা খারাপ। তবে এখানে সামাজিক রীতি রয়েছে, যা বাল্যবিয়েকে সমর্থন করে।”

বিকল্প খুঁজতে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতার প্রস্তাবও দিয়েছেন বার্নিকাট।

লিঙ্গভিত্তিক সংহিসতা বন্ধে বাল্য বিয়ে নির্মূল ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।