শুক্রবার বনানীর রাজউক মাঠে দিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করেন ঢাকায় অবস্থানরত গারোরা; ধর্মীয় রীতিতে দেবতাকে উৎসর্গের আগে ফসল গ্রহণের নিয়ম নেই তাদের মধ্যে।
আয়োজন সম্পর্কে এবারের ঢাকা ‘ওয়ানগালা’র স্মরণিকার সম্পাদক শুভ্র চিছাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পাহাড়ি জুম চাষকে কেন্দ্র করে কমপক্ষে তিনদিনের আনুষ্ঠানিকতায় ওয়ানগালা হয়ে থাকে। তবে রাজধানীর এ ওয়ানগালায় একদিনেই কিছু আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয়।
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী গারোদের বিশ্বাস, ওয়ানগালায় দেবদেবীরা অদৃশ্যভাবে উপস্থিত থাকেন ও ধনী-গরীব সবাইকে আশির্বাদ করেন।
অনুষ্ঠানের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সকালে শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে সূচনা হওয়া ঢাকায় ‘ওয়ানগালা’য় সারা দিন সূর্যের দেবতা সালজংয়ের উদ্দেশে নানা ধর্মীয় আচার পালন করেন তারা।
শোভাযাত্রার পরে ধর্মীয় আচার ‘রুদিতা’য় দেবতার উদ্দেশে সিক্তকরণ অনুষ্ঠান শেষে ‘সা’ত সাওয়া’য় তার উদ্দেশে ধূপ নৈবেদ্য দেন গারো পূজারীরা।
বনানী মাঠে প্রায় ৫০টি স্টলে গারো মতাবলম্বীদের পাশাপাশি আগতদের ঘোরাঘুরির মধ্যে বিকালে হয় আলোচনা অনুষ্ঠান।
স্টলগুলোতে ঐতিহ্যবাহী গারো পোশাক, খাবারসহ নানান কিছু রাজধানীর বাসিন্দা গারোর সামনে হাজির করে গ্রামীণ আমেজ।
ওয়ানগালার প্রধান অতিথি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এলে তাকে গারো আচারে নৃত্য ও ফুল ছিটানোর মাধ্যমে বরণ করা হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মাথায় পরিয়ে দেওয়া হয় কাপড় আর পালকে তৈরি ঐতিহ্যবাহী ‘খুতুপ’।
বক্তব্যে মোহাম্মদ নাসিম আওয়ামী লীগের সঙ্গে ‘সবসময় থাকা’ গারোদের কাছে আগের মতো ২০১৯ সালের নির্বাচনেও অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক নৌকার পক্ষে থাকার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, আদিবাসী- সবার। মুক্তিযুদ্ধের সময় সবাই একসঙ্গে রক্ত দিয়ে স্বাধীন দেশ অর্জন করেছিলাম আমরা। সবার মর্যাদা এখানে সমান, এটা বিবেচনায় নিয়েই বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে”।
অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য জুয়েল আরেং বলেন, ”সৃষ্টিকর্তাকে না দিয়ে আমরা ফসল গ্রহণ করি না। ঈশ্বর আমাদেরকে ফসল দিয়েছেন, সেজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাতে আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি। তাকে উৎসর্গ করার পর আমরা নতুন ফসল গ্রহণ করব।”
আদিবাসী সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের জন্য গারো তরুণদের রাজনীতিমুখী হওয়ার আহ্বান জানান প্রয়াত সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে জুয়েল।
ওয়ানগালার ‘নক্মা’ পৌল প্রীতিসন মৃর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য রেমন্ড আরেং, ইউনিসেফ ইন্ডিয়ার পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ গ্যাব্রিয়েল রোজারিও, সাংবাদিক নিখিল মানখিন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাকির হোসেন বাবুল এবং ওয়ানগালা উদযাপন কমিটির সদস্যসচিব বুলবুল আর মারাক বক্তব্য দেন।
সন্ধ্যায় আধুনিক গানের পরিবেশনা এবং র্যাফল ড্রয়ের মাধ্যমে শেষ হয় ঢাকা ওয়ানগালা।