তিনি বলেছেন, সমাজের অর্ধেক সদস্য নারী; তারা শিক্ষাবঞ্চিত থাকলে সমাজ কখনো গড়ে উঠতে পারবে না।
বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে শুক্রবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রোকেয়া পদক বিতরণ করে নিজেদের অধিকার আদায়ে নারীদের আরও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
নারী জাগরণ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সমাজকর্মী অ্যারোমা দত্ত ও শিক্ষিকা বেগম নূরজাহানের হাতে এবারের বেগম রোকেয়া পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
সবার উদ্দেশে তিনি বলেন, “শুধু মুখে বললে হবে না। আমাদের অধিকার দাও, অধিকার দাও বললে হবে না, আমাদের অধিকার দেবেটা কে? অধিকার আদায় করে নিতে হয়, অধিকার সহসা হয় না। পুরুষশাসিত সমাজ আমাদের।
“আমাদের পুরুষ সদস্যদের মনে রাখতে হবে মায়ের কোলে বড় হতে হয়, বোনের হাত ধরে হাঁটা শিখতে হয়, স্ত্রী রান্না-বান্না করে সেবা করে আর বৃদ্ধ বয়সে মেয়েই সেবা করে। কাজেই মেয়েদের অবহেলার করার কোনো সুযোগ নেই।”
সমাজের অর্ধেক নারী সদস্যের উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সমাজের অর্ধেক নারী। সেই অর্ধেক যদি শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নত না হয়, সেই সমাজ কখনোই গড়ে উঠতে পারে না। … অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, পরনির্ভরশীলতা না, এটাই সবথেকে বড় কথা।”
প্রতিটি সরকারি প্রকল্পে নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে নারীদের সম্পৃক্ত করতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “সংসদ নেতা, উপনেতা, বিরোধীদলীয় নেতা এবং স্পিকার নারীদের দখলে।”
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পেছনে যুক্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মেয়েদের দিলে তারা ভালোভাবে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন চালাতে পারে।”
নারী-পুরুষের যৌথ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্যের কথা এ অনুষ্ঠানেও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “আমরা আজকে যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেখানে আসতে পারতাম না যদি না বেগম রোকেয়া আমাদের পথ দেখাতেন। তিনি নারী জাগরণের অগ্রদূত। তিনি অবরোধবাসীনী নারীদের আলোর দূত হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিলেন।”
রক্ষণশীল মুসলমান সমাজে বড় হলেও রোকেয়া অনগ্রসর বাঙ্গালি নারীদের শিক্ষার আলোয় নিয়ে আসেন। পরিচিতি পান সাহিত্য ও সমাজ সংস্কারক হিসেবে।
সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নারীদের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নারীদের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে ৩০ ভাগ কোটা সুনির্দিষ্ট করে দেই, কাজটা সহজ মনে হলেও তখন এত সহজ ছিল না।”
নারীর উন্নয়নে জাতীয় মহিলা সংস্থা দেশের ৬৪টি জেলা ও ৪২৮টি উপজেলায় সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে বলেও সরকারপ্রধান অনুষ্ঠানে জানান।
মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদেরও পড়ালেখায় গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গর্বের সঙ্গে বলা যায়, এখন স্কুল-কলেজে মেয়েদের সংখ্যা ছেলেদের থেকে বেশি। ছেলেরা কেন এখন পিছনে পড়ে আছে সেটাও আমাদের একটা চিন্তার বিষয়। ছেলেদেরও সমানভাবে স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ছেলে-মেয়ে সকলেই সুশিক্ষিত হোক- সেটাই আমরা চাই।”
৯ ডিসেম্বর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জন্মদিন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ওর জন্য সকলের কাছে দোয়া চাই। সে প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদের জন্য দিনরাত কাজ করছে।”
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকীর সভাপতিত্বে এ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।