প্রকৃতিতে হামিদুজ্জামান খানের জীবন খোঁজা

শিল্পের আশ্রয়ে প্রকৃতির নানা উপাদানে করেছেন জীবন অন্বেষণ, জড় বস্তুতে খুঁজেছেন জীবনের নানা মানে- হামিদুজ্জামান খানের এই ধরনের এক গুচ্ছ ভাস্কর্য নিয়ে রাজধানীতে শুরু হয়েছে প্রদর্শনী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2016, 06:10 PM
Updated : 8 Dec 2016, 06:10 PM

আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে বৃহস্পতিবার বিকালে ‘জীবন অন্বেষণ’ শিরোনামের এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক।

খোলা মাঠে পাথর, মেটালের নানা ভাস্কর্য সাজানো। প্রকৃতি, জীবন, মাতৃত্ব, উদ্ভিদকূল, দেশজ সংস্কৃতির নানা অনুষঙ্গ এবং মানুষকে উপজীব্য করা হয়েছে এসব ভাস্কর্যে।

হামিদুজ্জামান খানের হাতের স্পর্শে পাথর খণ্ডে যেন প্রাণ সঞ্চারিত হয়, জড় বস্তুটি প্রাণসঞ্চারি হয়ে নজর কাড়ে শিল্পানুরাগীর।

২৯টি ভাস্কর্য নিয়ে সাজানো এই প্রদর্শনী সম্পর্কে ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাথর জড় সেখানে জীবন খুঁজি। আমাদের জীবনটাও তো তাই, আমরা চারপাশের জড় বস্তুর মাঝে জীবনকে খুঁজি। অন্বেষণই হচ্ছে জীবন।

“কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তো জীবন পার হয়ে যায় কিন্তু উত্তর মেলে না। কিন্তু তাতে জীবনের সেই অন্বেষণ থেমে যায় না। আমিও শিল্পের আশ্রয়ে প্রকৃতির নানা উপাদানের মধ্য থেকে জীবনকেই তো খুঁজছি। এভাবেই শিল্পের মাঝে জীবনের মানে খুঁজে বেড়াই আমি।”

উন্মুক্ত সবুজ চত্বরের পাশাপাশি আইএবি ভবনের ভেতরেও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এই ভাস্করের শিল্পকর্মগুলো। মাঠের ভেতরে প্রবেশের বাঁ পাশেই জলের ভেতর থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে মেটালে গড়া বুনো পাখি। মাঠ ধরে এগিয়ে গেলে শেষ সীমায় গিয়ে নজর পড়ে সন্তানের জন্য প্রতীক্ষারত মায়ের দিকে। স্টিলের আশ্রয়ে গড়া বিশাল আকৃতির শিল্পকর্মটি বলে যায় মাতৃত্বের চিরন্তন ভালোবাসার কথা।

এরপর বাঁয়ে চোখ ফেরালে স্বাগত জানায় ‘রাতের পরী’ নামের ভাস্কর্যটি। এছাড়াও সবুজ তৃণভূমিতে রয়েছে একাত্তরের স্মৃতিকথা মেলে ধরা কালো পাথরে গড়া ভাস্কর্য ‘রিমেমবারেন্স সেভেনটিওয়ান’।

ভবনের ভেতরে নজর কাড়ে ‘স্বর্গের দরজা’ শিরোনামে প্রদর্শনীর সবচেয়ে বড় ভাস্কর্যটি। সেখানেই দেখা মেলে শিল্পীর সদ্য আঁকা ‘আফটার সানসেট’ ও ‘সেলফ পোর্ট্রেট’ শীর্ষক দুটি চিত্রকর্ম।

ভবনের প্রাঙ্গণের সবুজ গাছকেও ব্যবহার করেছেন এই শিল্পী। সুচারু রডের আশ্রয়ে গড়েছেন মাছ মারার বিশেষ যন্ত্র ‘ফিশ ক্যাচার’ বা টেঁটা।

হামিদুজ্জামানর খান বলেন, “অনেক দিনের প্রত্যাশা ছিল খোলা প্রাঙ্গণে প্রদর্শনী করার। সেই আশা পূরণ হলো।”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির, স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ ও বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন স্থপতি শাহ আলম জহির উদ্দীন, মোবাশ্বের হোসেন ও ইকবাল হাবীব।

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে ‘অসুন্দর’ ভাস্কর্যগুলো সরাতে উদ্যোগ নেবে তার মন্ত্রণালয়।

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাংস্কৃতিক চর্চা বেগবান করতে নানা পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে সেখানেও একটি ভাস্কর্য উদ্যান গড়ার কথা বলেন তিনি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আধুনিকায়নে শিল্পী হামিদুজ্জামান খানের সহযোগিতা চেয়ে মেয়র আনিসুল হক বলেন, “আপনি যদি একক প্রদর্শনী করতে চান, তবে আমরা আপনার জন্য একটি মাঠ বরাদ্দ করে দিতে পারি।”

রফিকুন নবী বলেন, “শিল্পী হামিদুজ্জামান সব মাধ্যমে সমান পারদর্শী। তার কাজের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, যখন যে মিডিয়ায় কাজ করে সেই মিডিয়ার রস ধরার চেষ্টা করে। প্রভাবমুক্ত হয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে কাজ করে।”

৭ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।