রোকেয়া পদক পাচ্ছেন অ্যারোমা দত্ত ও নূর জাহান

নারী জাগরণ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এবার বেগম রোকেয়া পদক পাচ্ছেন সমাজকর্মী অ্যারোমা দত্ত ও শিক্ষিকা বেগম নূরজাহান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2016, 05:13 PM
Updated : 8 Dec 2016, 06:58 PM

মহিলা ‍ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম বৃহস্পতিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, শুক্রবার এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের হাতে পদক তুলে দেবেন। পদকপ্রাপ্ত দুজনকে দুই লাখ করে টাকা এবং ১৮ ক্যারেট মানের ২৫ গ্রাম সোনার পদক দেওয়া হবে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য অ্যারোমা দত্ত ১৯৮০ সাল থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারী জাগরণ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ  করেন। বর্তমানে বেসরকারি সংস্থা প্রিপ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক পদে আছেন তিনি।

স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা সেলাই করেন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার নূর জাহান। কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী এই নারী শিক্ষকতা করতেন।

নারী অধিকার ও মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নূর জাহান জাতীয় মহিলা সংস্থার কুষ্টিয়া জেলা শাখার নেতৃত্ব দেন দুই দফায়।

রোকেয়া পদক পাওয়ার খবরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় অ্যারোমা দত্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি অভিভূত, অনেক ভালো লাগছে। কান্না পাচ্ছে। কোনো দিন পদক পাব ভাবিনি। আমি আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে যাচ্ছি।”

যাদের জন্য এই পদক পাচ্ছেন সেই নারীদের এর অংশীদার করতে চান ৬৭ বছর বয়সী এই সমাজকর্মী।

অ্যারোমা বলেন, “রোকেয়া পদক পাওয়া বিশাল গর্বের বিষয়। আমি আরও আপ্লুত এজন্য যে, বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত থেকে এ পদক নিচ্ছি। এটা আরও বড় পাওয়া। যাদের জন্য করেছি তাদের জন্যই এটা পাচ্ছি, এটা তাদেরই প্রাপ্য।”

১৯৫০ সালের ২০ জুলাই কুমিল্লায় জন্ম নেওয়া অ্যারোমা দত্ত শহীদ পরিবারের সন্তান। পাকিস্তানের গণপরিষদে প্রথম যিনি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তুলেছিলেন সেই ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত তার দাদা।একাত্তরে তার দাদা ও কাকা দিলীপ দত্তকে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অ্যারোমার বাবা ছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক সঞ্জীব দত্ত, যিনি পাকিস্তান ও বাংলাদেশ অবজারভারের দ্বিতীয় শীর্ষ পদে কাজ করেছেন।

বাঙালি নারীর অগ্রগতির প্রত্যাশা করে অ্যারোমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নারী জাগরণের কাজ করতে যাওয়া অনেক কঠোর জায়গা। কঠোর শ্রম, সততা, নিষ্ঠা দিয়ে কাজ করতে হবে আমাদের। কষ্ট করেই যেতে হবে নারীদের।

“আমি তৃণমূলে নারীদের নেতৃত্ব দেখতে চাই। তারা আরও এগিয়ে আসবে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নারীদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বড় জায়গা তৈরি হবে।”

নারী নির্যাতন যেন কমে আসে সে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

নারী শিক্ষা, নারী অধিকার, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং গ্রামবাংলার লোকজ সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে নারী জাগরণ ও পল্লী উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এমন দুজন বাংলাদেশি নারীকে প্রতিবছর রোকেয়া পদকে ভূষিত করা হয়।

১৯৯৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩৯ জন নারীকে এ পদক দেওয়া হয়েছে।