সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে আইন চান প্রধান বিচারপতি

‘স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার’ মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের জন্য আইন চান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2016, 07:19 PM
Updated : 7 Dec 2016, 07:19 PM

তবে আইন না হওয়া পর্যন্ত বিচারক নিয়োগ বন্ধ রাখলে ‘বিচার ব্যবস্থা স্থবির হয়ে যাবে’ বলে আপাতত প্রচলিত নিয়মেই বিচারক নিয়োগের পক্ষে তিনি।

বুধবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন প্রধান বিচারপতি।  

তিনি বলেন, “আইনমন্ত্রীও আমাকে বলেছেন। গত মিটিংয়ে উনি আমার কাছে প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন, বিচারক নিয়োগের জন্য একটা আইন করা যায় কি না। আমি উনাকে অভিনন্দন জানাই। আমি নিজেও চাই এটা হোক। আইনের মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ হোক আমরা সবাই চাই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তা আছে। আশা করি এটা করতে পারব।”

অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন আইন করে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিচারক নিয়োগের দাবি জানান।

এ প্রসঙ্গ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, “সেক্রেটারি সাহেব বললেন স্বচ্ছতায় বিচারক নিয়োগ করতে। আমিও চাই। এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারকের যে স্বল্পতা, কয়েকজন অবসরে গেছেন, আরও কয়েকজন যাবেন, এখন যদি নিয়োগ বন্ধ করি সেটা হলে বিচার ব্যবস্থা স্থবির হয়ে যাবে।”

আইন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালতে আসা ব্যক্তিদের আদেশ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা যাবে বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি।

তিনি বলেন, “প্রত্যেকটা জামিনের আদেশ, নিষেধাজ্ঞার আদেশ সাথে সাথে পক্ষ বিপক্ষকে জানিয়ে দেওয়ার জন্য কয়েকজন বিচারক ও কর্মকর্তাকে দিয়ে একটা সেল করেছিলাম। প্ল্যানটি মন্ত্রণালয়ে দিয়েছিলাম। এখনও এটা পেন্ডিং। এটা আশা করি হয়ে যাবে। আইন মন্ত্রণালয় সহযোগিতা করলে এটা হয়ে যাবে।”

‘ঐক্য, উন্নয়ন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মাতৃভাষা ও দেশীয় সংস্কৃতির গুরুত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান বিচারপতি বলেন, “বলেছিলাম বাংলায় রায় দিব। আমি দুঃখিত। বাংলায় রায় দিতে পারি নাই। বিভিন্ন কারণে এটা সম্ভব হচ্ছে না। তবে হাই কোর্টের কিছু বিচারক সুন্দর করে বাংলায় রায় দিচ্ছেন।”

ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আমাদের ভাষা-সংস্কৃতি ভুলে যাচ্ছি। উচ্চবিত্তরা এখন ছেলে-মেয়েদের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ায়। আমি যদি ভালো বাংলা জানি তাহলে অন্য ভাষা বিশেষ করে ইংরেজি কোনো সমস্যা না। বাংলা ভাষার প্রতি কোনো ধরনের উন্নাসিকতা ঠিক না।

“নিজের ভাষার ওপর আমাদের আস্থা নেই, বিশ্বাস নেই। আমরা আমাদের মাতৃভাষাকে মর্যাদা দেই না, উপলব্ধি করি না।”

নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি মনোনিবেশের আহ্বান জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, “সাংস্কৃতিক ঐক্য না থাকলে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব। আমাদের কিছু দেশীয় সংস্কৃতি আছে, যা হিন্দু-মুসলমান সবাই পালন করি। এই আচার-অনুষ্ঠানগুলো ধর্ম-বর্ণ দিয়ে আলাদা করা যায় ন। সাংস্কৃতিক ঐক্য ছাড়া ধর্ম নিরপেক্ষতাও সম্ভব না।”

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি গৌরাঙ্গ চন্দ্র করের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার, আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, আইনজীবী লায়েকুজ্জামান মোল্লা, ড.বশির আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।