ভারতকে বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দিতে চুক্তি হচ্ছে

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর ভারতকে ব্যবহার করার সুযোগ দিতে চুক্তি স্বাক্ষরের জন‌্য দুই দেশের নৌসচিব পর্যায়ের বৈঠক শুরু হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2016, 09:43 AM
Updated : 7 Dec 2016, 11:01 AM

বুধবার সচিবালয়ে শুরু হওয়া এই বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নৌসচিব সচিব অশোক মাধব রায়। আর ভারতের পক্ষে রয়েছেন তাদের নৌসচিব রাজিব কুমার।

অশোক মাধব জানিয়েছেন, এই বৈঠকে পায়রা বন্দরে একটি টর্মিনাল নির্মাণসহ মোট চারটি চুক্তির বিষয়ে তারা আলোচনা করবেন।

“গতকাল দুদেশের নৌ প্রটোকল রুটের কমিটি মিটিং করেছে, আজ সচিব পর্যায়ের সভা। এখানে আমরা চারটি বিষয়ে আলোচনা করব।”

বৈঠকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার, পায়রা বন্দরে মাল্টিপারপাস (কন্টেইনার) টার্মিনাল নির্মাণ, লাইটহাউজ ও লাইটশিপ ব‌্যবহার, কোস্টাল ও প্রটোকল রুটে যাত্রী ও ক্রুজ সার্ভিস নিয়ে চুক্তি হবে বলে জানান সচিব।

তিনি বলেন, “তারা কীভাবে বন্দর ইউজ করবে এটা নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করে একটি এগ্রিমেন্ট চূড়ান্ত করব। যেটার ড্রাফট আগেই করা হয়েছে, দুই দেশ এটা নিয়ে মতবিনিময়ও করেছি। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে মতবিনিময়ে করে এটা চূড়ান্ত করব।”

বন্দর ব্যবহারের ফি নির্ধারণের বিষয়ে জানতে চাইলে অশোক মাধব বলেন, এ ধরনের চুক্তির তিনটি পর্যায় থাকে। প্রথমে হয় সমঝোতা স্মারক, এরপর এগ্রিমেন্ট, তারপর এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর)।

স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওরে ফি নিয়ে বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে জানিয়ে সচিব বলেন, “আজ আমরা শুধু এগ্রিমেন্ট করব।”

তিনি জানান, দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কমিটি করার কথা থাকবে চুক্তির একটি ধারায়। সেই কমিটিই পরে এসওপি তৈরি করবে।

চুক্তি অনুযায়ী ভারতকে দুটি বন্দর ব্যবহারে কী কী সুবিধা দেওয়া হবে জানতে চাইলে নৌসচিব বলেন, ভারতকে বিশেষভাবে কোনো সুবিধা দেওয়া হবে না। কেবল বাংলাদেশের রুট ও বন্দর ব্যবহার করার অনুমতি দিতে এই চুক্তি।

“আন্তর্জাতিক অন্যান্য বন্দর ব্যবহার করলে বন্দর যেভাবে লেভি পায়, সেভাবে সবকিছু প্রযোজ্য থাকবে। কাস্টম, বন্দরের যে সব চার্জ সবই তারা (ভারত) দেবে।”

পায়রা বন্দরের কাজকে নয় ভাগে ভাগ করা হয়েছে জানিয়ে অশোক মাধব বলেন, “একটি কম্পনেন্টে ভারত সহায়তা করতে সম্মত হয়েছে। এ বিষয়ে আজ আমরা আলোচনা করে একটি এগ্রিমেন্টে পৌঁছাব।”

পায়রা বন্দরের টার্মিনাল নির্মাণের কাজ ভারতকে দেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নৌসচিব বলেন, “ভারত এটা পিপিপি (সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্ব) বা সরাসরি বিনিয়োগের যে কোনো একটি পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করে টার্মিনাল নির্মাণ করবে। এটা পরে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে, ভারতের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করবে।”

পায়রা বন্দরের জন‌্য এখনও কারও কাছ থেকে অর্থায়ন চাওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমরা ইআরডিতে (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ) একটি পিডিপিপি (প্রাইমারি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফর্মা) পাঠয়েছি। ১২৫টি দেশ বিভিন্ন কম্পনেন্টে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ভারতের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।”

বাংলাদেশের নৌসচিব বলেন, সমুদ্র ও নৌপথে চলাচলে নির্দেশনামূলক বয়া, বাতিগুলো দুদেশ কীভাবে একসঙ্গে পরিচালনা করব এবং বয়া, বাতিসহ এগুলো যারা পরিচালনা করবে, তাদের প্রশিক্ষণ কীভাবে হবে- সেসব বিষয়ে আলোচনা করে একটি সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করা হবে।

“আমরা প্যাসেঞ্জার ক্রুজ সার্ভিস চালু করব। টুরিস্টরা ভারত থেকে বাংলাদেশে এসে যে কোনো জায়গা দেখতে পারবেন। একটা রুট করে দেওয়া হবে, সেই রুটে তারা পরিদর্শন করতে পারবেন। একইভাবে বাংলাদেশ থেকে যে কোনো জাহাজ টুরিস্ট নিয়ে ভারতে যেতে পারবে। ভারতের কোন কোন বন্দরে যেতে পারবে তা আমরা নির্ধারণ করব।”

এ পর্যন্ত নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ক্রুজশিপের পর্যটকরা জাহাজ থেকে নামতে পারবেন না বলে অশোক মাধব জানান।

“জাহাজে থেকেই তারা দেখতে পারবেন। আগে তো জাহাজের ক্রুরাও নামতে পারতেন না। এবারের চুক্তিতে দুই দেশের ক্রুদের তিন দিনের অন অ্যারাইভালের ভিসা দেওয়ার কথা থাকবে। প্যাসেঞ্জার নামার বিষয়টি হয়ত

পরবর্তী মিটিংয়ে আসতে পারে। আগে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে চালাব, পরে সিদ্ধান্ত নেব।”

পায়রা বন্দরে টার্মিনাল নির্মাণে কোন কোম্পানি আগ্রহ দেখিয়েছে জানতে চাইলে ভারতের নৌসচিব রাজীব কুমার জানান, ইন্ডিয়ান পোর্ট গ্লোবাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বেসরকারি কয়েকটি কোম্পানি পায়রা বন্দরে টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহী।

ভারত কবে থেকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করতে চায়- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা যত দ্রুত সম্ভব সমঝোতার ভিত্তিতে চুক্তি ও এসওপির সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। আশা করছি, এ মাসের মধ্যেই এটা শেষ হবে।