আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলা: মুফতি হান্নানসহ ৩ জঙ্গির ফাঁসির রায় বহাল

সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ তিন জঙ্গির ফাঁসির রায় বহাল রেখেছে সর্বোচ্চ আদালত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2016, 03:50 AM
Updated : 7 Dec 2016, 04:03 PM

মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ওই তিন জঙ্গির আপিল শুনানি করে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বিভাগ বুধবার তা খারিজ করে দেয়।

এর ফলে তিন আসামি মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার ওরফে রিপনের সামনে এখন কেবল আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করার সুযোগ থাকল।

তাও নাকচ হয়ে গেলে শেষ চেষ্টা হিসেবে তারা অপরাধ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন। সে আবেদনও প্রত‌্যাখ‌্যাত হলে কারাবিধি অনুযায়ী তাদের দণ্ড কার্যকর করবে সরকার।  

ফাইল ছবি

এই তিন আসামির মধ‌্যে আপিলকারী মুফতি হান্নান ও বিপুলের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আলী। আর রিপনের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. হেলাল উদ্দিন মোল্লা।

রায়ের পর মো. আলী জানিয়েছেন, তারা আপিল বিভাগে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করবেন।

রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

বশির আহমেদ পরে সাংবাদিকদের জানান, এ মামলার বাকি দুই আসামি মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে হাই কোর্ট যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। আপিল না করায় তাদের ওই সাজাই বহাল রয়েছে।

দণ্ডিত পাঁচ আসামির সবাই কারাগারে আছেন বলে জানান বশির।

মুফতি হান্নান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টাসহ হরতাকাতুল জিহাদের ১৩টি নাশকতামূলক ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তিতে হত্যার পেছনের মূল ব্যক্তি বলা হয় মুফতি হান্নানকে।

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় মুফতি হান্নানের বাড়ি৷ গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসায় তিনি লেখাপড়া করেছেন।

২০০০ সালের ২০ জুলাই সেই কোটালীপাড়াতেই শেখ হাসিনার সভামঞ্চের কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়। মুফতি হান্নান ওই মামলারও আসামি। 

রমনায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনাতেও তার মৃত্যুদণ্ডের রায় এসেছে আদালতে।

সাবেক ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী

মামলা বৃত্তান্ত

সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজার প্রাঙ্গণে ২০০৪ সালের ২১ মে ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী গ্রেনেড হামলার মুখে পড়েন।

এতে ঘটনাস্থলেই পুলিশের এএসআই কামাল উদ্দিন নিহত হন। এছাড়া পুলিশ কনস্টেবল রুবেল আহমেদ ও হাবিল মিয়া নামের আরেক ব্যক্তি মারা যান হাসপাতালে।

আনোয়ার চৌধুরী ও সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অন্তত ৪০ জন ওই ঘটনায় আহত হন।

পুলিশ ওইদিনই সিলেট কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করে। তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ৭ জুন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, তার ভাই মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ ওরফে অভি, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার ওরফে রিপনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

যথাযথ ঠিকানা না থাকায় মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ ওরফে খাজার নাম প্রথমে বাদ দেওয়া হলেও পরে তাকে যুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ওই বছর নভেম্বরে হয় অভিযোগ গঠন।

৫৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সামীম মো. আফজাল রায় ঘোষণা করেন।

আসামিদের মধ্যে মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের (মুত্যুদণ্ড অনুমোদনের আবেদন) শুনানি শেষে চলতি বছর ১১ ফেব্রুয়ারি রায় দেয় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

তাতে আসামিদের আপিল খারিজ হয়ে যায়, মুফতি হান্নানসহ তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং দুইজনের যাবজ্জীবন দণ্ড বহাল থাকে।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন হান্নান ও বিপুল। আর দেলোয়ারের পক্ষে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়।

শেষ পার্যন্ত বুধবার চূড়ান্ত রায়েও ওই তিন আসামির সর্বোচ্চ সাজার সিদ্ধান্ত বহাল থাকে।