প্রধানমন্ত্রীর বিমানে সঙ্কট: মানবসৃষ্ট কারণটি নাশকতা কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে

হাঙ্গেরিগামী প্রধানমন্ত্রীর উড়োজাহাজে মানবসৃষ্ট কারণেই যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছিল বলে জানিয়েছেন বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2016, 01:30 PM
Updated : 4 Dec 2016, 05:13 PM

মানবসৃষ্ট ওই কারণটি নাশকতা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও রোববার সংসদে জানান তিনি।

এক সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বুদাপেস্টের পথে রওনা হওয়ার ওড়ার চার ঘণ্টা পর বিমানের বোয়িংটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে একে তুর্কমেনিস্তানের আশখাবাত বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করতে হয়।

সরকার প্রধান শেখ হাসিনার বিমানের ওই ঘটনা নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে। গঠিত হয়েছে তিনটি তদন্ত কমিটিও।

একটি তদন্ত কমিটির এক সদস‌্য একদিন আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, সমস‌্যার মূলে ছিল দৃশ‌্যত ‘মানবসৃষ্ট কারণ’।

প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থার প্রায় নতুন উড়োজাহাজে এই যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনাটি নিয়ে রোববার দশম সংসদের ত্রয়োদশ অধিবেশন শুরুর দিনই ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দেন ওই দপ্তরের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী মেনন।

বিবৃতিতে মেনন বলেন, “এয়ারক্রাফটের ক্ষেত্রে এ ধরনের ত্রুটি কিংবা নিরাপত্তার ঝুঁকির সৃষ্টি হলে তিনটি ফ্যাক্টরকে ভিত্তি করে তদন্ত পরিচালিত হয়।

“১. মেকানিকাল/টেকনিক্যাল ফ্যাক্টর, ২. এনভায়রনেমেন্টাল ফ্যাক্টর, ৩. হিউম্যান ফ্যাক্টর (ইনএফিসিয়েন্সি-ল্যাক অফ প্রফেশানালিজম অথবা ইনটেনশনাল অথবা ক্যালাসনেস।”

“বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতীয়মান হয়েছে যে, এ ক্ষেত্রে তৃতীয় অর্থাৎ হিউম্যান ফ্যাক্টরটি বিমানের বর্ণিত ফ্লাইটের ত্রুটির জন্য দায়ী। তবে ইহা দায়িত্বে নিয়োজিত সংশ্লিষ্টদের অবহেলা, না কি নাশকতা, তা নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট এজেন্সি খতিয়ে দেখছে।”

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সেদিন উড়োজাহাজটিতে জ্বালানি বা ফুয়েলের কোনো সমস‌্যা ছিল না, ইঞ্জিন অয়েল বা লুব্রিক‌্যান্টের ট‌্যাংকের একটি নাট ঢিলা হয়ে গিয়েছিল

কয়েকদিন আগে বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজটির লুব্রিক‌্যান্ট ট‌্যাংকের পাশের অয়েল-অয়েল হিট এক্সচেইঞ্জার বা অয়েল প্রেসার সেন্সরে ‘ছোটখাটো একটি কাজ’ করা হয়েছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

উড়োজাহাজের এই ‘বি’ নাটটি ঢিলা (লাল পাইপের) পাওয়া গিয়েছিল; পাশের অয়েল সেন্সর লাইনে (কালো পাইপ) কাজ হয়েছিল তার কয়েক দিন আগে

তদন্ত কমিটির এক সদস‌্য বলেন, “সেখানে যারা কাজ করেছেন তারা ‘ইচ্ছা বা অনিচ্ছায়’ কিংবা ‘প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে’ ওই নাটটি ধরেছিলেন বা লুজ করেছিলেন। সেটি পরে ঠিক করা হয়েছে কি না, দায়িত্বশীল কোনো ইঞ্জিনিয়ার তা দেখেননি, যদিও সেটি তার দায়িত্ব ছিল।”

গত ২৭ নভেম্বর ওই ঘটনা ঘটার তিন দিন পরই প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে গাফিলতির কারণে ছয় কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়।

গঠিত তদন্ত কমিটিগুলোর মধ‌্যে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রতিবেদন ইতোমধ‌্যে পেয়েছেন বলে জানান মন্ত্রী মেনন। মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এখনও আসেনি।  

মেনন লিখিত বিবৃতিতে বলেন, “গত ২৬ নভেম্বর এয়ারক্রাফটটি হজরত শাহজালাল বিমান বন্দরে অবতরণ করে। এরপরই ভিভিআইপি ফ্লাইটের ইন্সপেকশন শুরু হয়।

“ইন্সপেকশন এর সময় গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার একটি ‘স্ট্যাটাস মেসেজ’ পান যাতে উল্লেখ ছিল- ‘অয়েল প্রেশার সেনসর (লেফট)’। এই মেসেজ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় র‌্যাক্টিফিকেশন ওয়ার্ক সম্পাদন করা হয়।”

“ভিভিআইপি ফ্লাইট যখন লাহোর এলাকা অতিক্রম করছিল তখন পাইলটের দৃষ্টিগোচর হয় যে, এয়ারক্রাফটের বামদিকের ইঞ্জিনের অয়েল প্রেশার কমে আসছে তবে ডানদিকের ইঞ্জিনের মতোই স্বাভাবিক কর্মক্ষম ছিল। কাবুল অতিক্রম করার সময় ডান দিকের ইঞ্জিনের চেয়ে বাম দিকের ইঞ্জিনের অয়েল প্রেশার দৃশ্যমানভাবে কমে যাচ্ছিল।”

ত্রুটির কারণে জরুরি অবতরণের পর তুর্কমেনিস্তানের আশখাবাত বিমানবন্দরে বিমানের বোয়িং উড়োজাহাজটি

এ সময়ে বামদিকের ইঞ্জিনের অয়েল প্রেশার ৩০ পিএসআই এবং ডানদিকের ৬০ পিএসআই ছিল বলে জানান মন্ত্রী।

“এসওপি অনুসারে তাৎক্ষণিকভাবে পাইলট ঢাকা সদরদপ্তরে যোগাযোগ করে নিকটবর্তী তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশখাবাতে জরুরি অবতরণ করা হয়। অবতরণের সময় অয়েল প্রেশার ছিল ২৪ পিএসআই।”

মন্ত্রীর বিবৃতি পড়ার সময় সংসদ নেতা শেখ হাসিনাও এসময় অধিবেশন কক্ষে ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী হাঙ্গেরি সফর নিয়ে একদিন আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, “এটা একটা যান্ত্রিক দুর্যোগ ছিল, আর কিছু না।”

মেনন বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনোরূপ শৈথিল্য প্রদর্শন করার সুযোগ নেই। এবং ভবিষ্যতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার বিষয়টি আরও সচেতনতার সাথে নিশ্চিত করতে হবে।”