নাসিরনগরে হামলা ‘নেতাদের দ্বন্দ্বে’, ‘গাফিলতি’ পুলিশেরও

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চোখে ধরা না পড়লেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাফিলতি পেয়েছে পুলিশের গঠিত তদন্ত কমিটি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2016, 07:09 PM
Updated : 14 Nov 2016, 07:36 PM

সোমবার পুলিশ সদর দপ্তরে জমা দেওয়া এই প্রতিবেদনে হামলার পেছনের কারণ হিসেবে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়টিও এসেছে বলে জানিয়েছেন কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. শওকত হোসেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “তাছাড়া পুলিশের অবশ্যই গাফিলতি রয়েছে। কেননা তারা আগাম তথ্য সংগ্রহ এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে সে ধরনের কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি।”

এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান তদন্ত কমিটির প্রধান।

এই সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভ‌্যন্তরীণ কোন্দল প্রভাব ফেলেছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে।

গত ৩০ অক্টোবর হামলা, ভাংচুর, লুটপাটের পর ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুরা পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করেছিল।

অভিযোগের মুখে নাসিরনগর থানার তৎকালীন ওসি আব্দুল কাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হলেও তার বড় ধরনের ব্যর্থতা ছিল না বলে গত ৩ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

তিনি বলেছিলেন, “তারও (ওসি) কোনো গ্যাপ ছিল না। তারপরও আমরা মনে করেছি সে (ওসি) আরেকটু তৎপর হতে পারতো। সেজন্য আমরা তাকে প্রত্যাহার করেছি।”

ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে দুটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর সমাবেশের পর অন্তত ১৫টি মন্দির ও দেড় শতাধিক বাড়িঘরে হামলা হয়।

সেদিন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ডাকা একটি সমাবেশে ওসি কাদের ও ইউএনও চৌধুরী মোয়াজ্জেম হোসেনও বক্তব্য রেখেছিলেন। বক্তব্যে উসকানির অভিযোগের মুখে ওসিকে প্রত্যাহারের পর ইউএনওকেও প্রত্যাহার করা হয়।

হামলার পেছনে নাসিরনগরের এমপি মৎস‌্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক এবং সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে ‘প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর মনোভাব’ কাজ করেছে বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে।

পুলিশের প্রতিবেদনে রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কথা এলেও এ বিষয়ে আরও তদন্তের প্রয়োজন বলে মনে করছে পাঁচ সদস‌্যের এই তদন্ত কমিটি।

অতিরিক্ত ডিআইজি শওকত বলেন, “এলাকায় একটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। দ্বন্দ্বের কোনো সুযোগ নিয়ে হামলার এই ঘটনা ঘটতে পারে বলে কমিটি মনে করেছে। তবে আরও তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে।”

কমিটি প্রতিবেদনে ২২ দফা সুপারিশ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে মামলাগুলো তদন্ত শেষে নিস্পত্তি করতে কী কী করা দরকার, পরবর্তীতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে কী কী পদক্ষেপ আগাম নেওয়া দরকারসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ রয়েছে।

মঙ্গলবার প্রতিবেদন সম্পর্কে বিস্তারিত পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানা যাবে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তা শওকত।