সংখ্যালঘুদের সর্বত নিরাপত্তা দিতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সর্বত নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের আন্তরিকতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা সবার দায়িত্ব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2016, 10:57 AM
Updated : 12 Nov 2016, 03:39 PM

শনিবার রাজশাহী বিভাগের মানুষের উদ্দেশ্যে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে দেওয়া বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের মন্দির, বাড়িঘরে হামলা এবং সবশেষ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারী, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে তিন সাঁওতালের মৃত্যু নিয়ে আলোচনার মধ্যে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে কথা বললেন সরকারপ্রধান।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসকে আমরা কোনোদিন প্রশ্রয় দেব না। এই দেশের মাটিতে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হবে না। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব না।

“আমাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সর্বতভাবে নিরাপত্তা দিতে হবে। এটা আমাদের সকলের দায়িত্ব।”

ফেইসবুকে ‘ইসলাম অবমাননার’ অভিযোগ তুলে গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে ১৫টি মন্দির এবং হিন্দুদের শতাধিক ঘরে ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়।

এ ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যেই গত ৬ নভেম্বর রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ও পুলিশের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ একটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম। প্রত্যেক ধর্মের মূল বাণী তাই। প্রত্যেক ধর্মের মানুষ তার ধর্ম পালন করতে পারবে, এটাই ইসলামের কথা। এটাই পবিত্র কোরআনের কথা। আমরা এটাই মেনে চলি।

“জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ইসলামের পথ না। কাজেই এটাই চাইব, দেশের প্রত্যেকটা মসজিদে ইমাম সাহেবরা বা যারা জুমার নামাজের আগে খুৎবা দেন, সেখানে আপনারা এই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে নবী (স.) কী বলে গেছেন, কোরআনে কী আছে, ইসলাম ধর্ম কী বলে, এই বিষয়গুলো মানুষকে আরও ভালোভাবে জানাতে হবে। যাতে এই ধরনের আত্মঘাতী পথে পা না বাড়ায়।”

“আমরা সব সময় চাই, আমাদের দেশে সম্প্রীতি বজায় থাকবে, দেশের উন্নতি হবে,” বলেন শেখ হাসিনা।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী বিভাগের পাঁচ জেলার জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মত বিনিময় করেন।

রাজশাহী বিভাগের দুই হাজার ৯৮১টি জায়গায় ১৫ লাখ মানুষ প্রধানমন্ত্রীর এই ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হন বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। 

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং এর বর্ষপূর্তি ঘিরে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী জোটের আন্দোলনের মধ্যেন পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা এবং স্কুল, বিদ্যুৎকেন্দ্র, পরিবহনসহ বিভিন্ন জায়গায় নাশকতা চালানোর কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “খুন-খারাবির পথটা এই দেশে দেখিয়ে দিল এই বিএনপি-জামায়াত জোট।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জামায়াত নেতাকর্মীরা ‘গুলি কর, বৃষ্টির মতো গুলি কর/বাঁচলে গাজী, মরলে শহীদ’ বলে শ্লোগান দেয়।

“তারাই এদেশের ছেলে-মেয়েদের বিপথে নিয়ে গেছে, উস্কে দিয়েছে। আর এখন এই নতুন উপসর্গ।”

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ‘বাংলাভাই’-এর উত্থানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “এদের চরিত্র কোনো দিনও শোধরাবে না। আর ওই জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের পথ বেয়ে, খুনের পথ বেয়ে নতুন উপসর্গ দেখতে পাচ্ছি। ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করা।”

সবাই মিলে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপির এক নেতা কিছুদিন আগে তার বক্তৃতায় বলেছেন, ‘আমাদের আন্দোলনের কী দেখেছেন? নভেম্বরে আন্দোলন দেখবেন’।

“তাদের আন্দোলন যদি হয় আবার এই মানুষ খুন করা, মানুষের ঘড়বাড়ি পোড়ানো, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করা। এর মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা। এটাই যদি তাদের আন্দোলন হয়, তাহলে সেই আন্দোলন কোনো দিন জনগণের সমর্থন পাবে না। কারণ এই পথ জনগণের কল্যাণ বয়ে আনবে না।”

বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ অভিহিত করে এই সম্প্রীতি বজায় থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এ বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “কোন কোন মহল বিশেষ সব সময় চায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।”

ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত অনেকেই তাদের এলাকার উন্নয়নে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের দাবি দাওয়ার বিষয়ে কথা বলেন।

শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রায় আট বছরের শাসনামলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, বাণিজ্য, অবকাঠামো, তথ্য-প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, খাদ্য নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন খাতের অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন।  

তার সরকারের সময়ই স্কুলে ‘মিড মে মিল’ চালু করার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। সব জায়গায় এই ব্যবস্থা চালু করতে জনপ্রতিনিধি ও বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

এছাড়া ২০২১ সালের মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়তেও সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।