নাসিরনগর হামলায় স্থানীয় প্রশাসনের সবার দায় রয়েছে: আনু মুহাম্মদ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত’ আখ্যায়িত এতে স্থানীয় প্রশাসনের সবস্তরের দায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Nov 2016, 04:53 PM
Updated : 4 Nov 2016, 04:53 PM

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে সামনে নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর হামলার প্রতিবাদে জড়িতদের বিচারের দাবিতে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে এ কথা বলেন তিনি।

লেখক-শিল্পী-সাংস্কৃতিককর্মী ও সর্বস্তরের নাগরিক ব্যানারে এই প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

আনু মুহাম্মদ বলেন, “সকল অনুসন্ধান থেকে আমরা নিশ্চিত যে, নাসিরনগরের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ছিল পরিকল্পিত ঘটনা। এ ঘটনায় এলাকার মন্ত্রী, এমপি, প্রশাসন সকলেরই দায় আছে। সকলেই এখানে যার যার ভূমিকা পালন করেছেন।”

ফেইসবুকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে ১৫টি মন্দির এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের দেড় শতাধিক ঘরে ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়।

এই ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতি ছিল বলে অভিযোগ ওঠলেও পুলিশের কোনো গাফিলতি ছিল না বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবির পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্য মৎস ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক বিষয়টিকে ‘তেমন কিছুই না’ বলে মন্তব্যে করেন।

এরপর প্রথমবার হামলার পাঁচ দিনের মাথায় পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যেই শুক্রবার নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়িঘরে আবারও আগুন দেওয়া হয়।

রসরাজ দাস নামে হিন্দু যুবকের ফেইসবুক পোস্টের যে ছবি নিয়ে নাসিরনগরে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘট্না সেটি তার পক্ষে করা সম্ভব নয় মন্তব্য করে উত্তেজনা তৈরির জন্য সচেতন পরিকল্পনা অনুযায়ীই কাজ করা হয়েছে দাবি করেন অর্থনীতির অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

তিনি বলেন, “যে ছবিটি ফেইসবুকে প্রচার করা হয়েছে এবং যে ছেলেটিকে আটক করা হয়েছে- এটা ছেলেটির দ্বারা করা সম্ভব নয় বলে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন। ছবিটি ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুধু নয়, দিনের পর দিন ফেইসবুকে ঘুরল…

“…অন্যদিকে সরকারের আইটি বিভাগ, যারা প্রধানমন্ত্রী বা সরকার সম্পর্কে একটা লাইন লিখলে এক বা দুই ঘণ্টার মধ্যে ধরে ফেলে এবং দিনের পর দিন আটকে রাখে- সেই বিভাগই ফেইসবুকে এ ছবিটি ঘুরলো অথচ তারা কিছুই করতে পারল না।

“এটা থেকে বুঝা যায় এটা একটা সচেতন পরিকল্পনা ছিল যে, ছবিটা ঘুরতে থাকুক এবং উত্তেজনা তৈরি হোক। ছবি থেকে উত্তেজনা তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে এবং চেষ্টা করেই উত্তেজনা তৈরি করা হয়েছে,” বলেন তেল-গ্যাস কমিটির এই নেতা।

বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললেও সেটাকে তাদের মুখোশ বলে আখ্যায়িত করেন আনু মুহাম্মদ।

“এ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলছে, সেটা হচ্ছে তাদের মুখোশ। তাদের মুখটা মুক্তিযুদ্ধ চেতনার পুরোপুরি পরিপন্থি। সেখানে দখল, লুট, বন বিনাস, নদী বিনাস, ভয়ঙ্কর রকমের বৈষম্য সৃষ্টি করে সকল সম্পদ কিছু লোকের হাতে কেন্দ্রীভূত করা।

“সে সম্পদ কেন্দ্রীভূত করতে গিয়ে ব্যাংক থেকে শুরু করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপরে হামলা করছে। সুতরাং এ সরকারকে মুক্তিযুদ্ধের ধারক-বাহক হিসেবে আখ্যায়িত করে বসে থাকলে এসব থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”

জড়িতদের শাস্তি দাবি জানিয়ে মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির বলেন, “যারা সাম্প্রদায়িকতার নীল নকশা তৈরি করে তাদের শনাক্ত করতে হবে।

“বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা করছে। নাসিরনগরের হামলা হঠাৎ করেই হয়নি। অবশ্যই পরিকল্পিত ছিল।”