রাষ্ট্রের অনিহায় থমকে আছে ত্বকী হত্যার বিচার: রাব্বি

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকাণ্ডের বিচার রাষ্ট্রের অনিহা থাকায় থমকে রয়েছে অভিযোগ করেছেন তার বাবা  রফিউর রহমান রাব্বি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2016, 05:42 PM
Updated : 28 Oct 2016, 05:42 PM

শুক্রবার বিকালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ত্বকীর ২১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শিশু রাজন ও রাকিব হত্যার আলোচিত ঘটনার বিচার রাষ্ট্রের সদিচ্ছায় হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রফিউর রাব্বি বলেন, “রাজন, রাকিবের হত্যার পরে সাড়ে তিন মাসের মাথায় আমরা দেখেছি বিচার প্রাথমিকভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। ঘাতককে বিদেশ থেকে এনে বিচার সম্পন্ন করা হয়েছে। এর অর্থ রাষ্ট্র এই বিচারটি করতে চেয়েছে, তাই এটি হয়েছে।

“আমরা চাই ত্বকীসহ অন্যান্য যেসব হত্যাকাণ্ড রয়েছে, তার বিচার সম্পন্ন করবে; রাষ্ট্র যদি এখানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তাহলে সাময়িকভাবে এই বিচার বন্ধ করতে পারবে। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে বিচার প্রক্রিয়া, বিচার কখনও বন্ধ হতে পারে না।”

কোনো হত্যাকাণ্ড, কোনো অন্যায় বা কোনো অপরাধের বিচার সাময়িকভাবে থামিয়ে রাখা গেলেও বন্ধ করা যায় না বলেও মন্তব্য করেন এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।

নারায়ণগঞ্জ গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তা রফিউর রাব্বির ছেলে ত্বকীকে ২০১৩ সালের ৬ মার্চ হত্যা করা হয়। হত্যার দুদিন পর শীতলক্ষ্যার একটি খালে তার লাশ পাওয়া যায়।

এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ১৮ মার্চ শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান, যুবলীগ নেতা পারভেজ, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রাজীব দাস, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সালেহ রহমান সীমান্ত ও রিফাতকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারকে একটি অবগতিপত্র দেন ত্বকীর বাবা রাব্বি।

৭ অগাস্ট শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরি ওসমানের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে একটি রক্তমাখা প্যান্টসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র উদ্ধার করে র‌্যাব। সেখানেই ত্বকীকে আটকে রেখে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে বলে রাব্বি অভিযোগ করলেও শামীম ওসমান বরাবরই এর সঙ্গে তার পরিবারের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

ত্বকীর ২১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার’ পুরস্কার বিতরণে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এই প্রতিযোগিতায় ছবি আঁকায় ৮৫০ জন এবং রচনা লেখায় ৪৫০ জন প্রতিযোগী অংশ নেয় বলে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান থেকে জানানো হয়।

অনুষ্ঠান থেকে দেশে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া শিশু নির্যাতন ও শিশু হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন রফিউর রাব্বি।

তিনি বলেন, “আজকে যেটি ভয়াবহ ও রক্তিম ধারণ করেছে, সেটা হলো শিশু হত্যা এবং শিশু নির্যাতন। এক জরিপে দেখলাম গত নয় মাসে আমাদের দেশে ৬০০ মতও শিশু নির্যাতিত হয়েছে। এটি একটি ভয়াবহ চিত্র; এই চিত্রটি আমরা আমাদের দেশে দেখতে চাই না।”

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে নানা মঞ্চে নানাভাবে বিচারের দাবি জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছি। এখনও পর্যন্ত আমাদের সেই চেষ্টার কোনো ফল দেখছি না।”

তবে ত্বকী হত্যাকারীদের বিচার একদিন হবে বলে বিশ্বাসের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে যারা যুদ্ধাপরাধ করেছিল, মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল- তাদের বিচার কয়েক দশক পর হয়েছে। ত্বকীর হত্যাকারীদের বিচার যতদিন না হয়, ততদিন রাষ্ট্রকে এই একটা অপরাধবোধের বোঝা নিয়ে চলতে হবে।”

ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‍“সারাদেশের মানুষ ত্বকীর পক্ষে আর অল্প কিছু মানুষ ত্বকী হত্যার বিচার হতে দিচ্ছে না। এই কোটি মানুষের কথা স্লোগান, তাদের বক্তব্য যে সামনে আসে না, তাদের অধিকার যে প্রতিষ্ঠিত হয় না তার কারণ হচ্ছে এই রাষ্ট্রের চরিত্র ক্রমাগত ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠেছে।

“সত্য কখনও লুকানো থাকে না। তাই একদিন না একদিন ত্বকী হত্যার বিচার হবেই। আরেকটা কথা, ইতিহাস থেমে থাকবে না। এই ইতিহাস বদলাবে।”