জঙ্গি নির্মূলে বিভিন্ন বাহিনীর তৎপরতার মধ্যে গত ৮ অক্টোবর ঢাকার আশুলিয়ার এক বাড়িতে র্যাবের অভিযানের সময় পাঁচতলা থেকে পড়ে একজনের মৃত্যু হয়।
তখন র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, নিহত ব্যক্তির নাম আব্দুর রহমান আয়নাল, তিনিই নব্য জেএমবির প্রধান অর্থ যোগানদাতা।
১৩ দিন পর র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, ওই ব্যক্তির প্রকৃত নাম সারোয়ার জাহান। তিনি নব্য জেএমবির শীর্ষনেতা।
গুলশান হামলাসহ আলোচিত জঙ্গি হামলার জন্য এই দলটিকেই দায়ী করা হচ্ছে।
র্যাবের ভাষ্যের বিপরীতে বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম দাবি করেন, ওই সারোয়ার জাহান আসলে নব্য জেএমবির তৃতীয় পর্যায়ের নেতা।
“তার নাম আমাদের কাছে এসেছে, সে মূলত তামিমের (নিহত তামিম চৌধুরী) ডেপুটিদের পরের ধাপের নেতা হিসাবে।”
পুলিশের বিরুদ্ধে র্যাবের সাম্প্রতিক অভিযোগ নিয়ে আলোচনার মধ্যে এক ঘটনায় দুই বাহিনীর ভিন্ন অবস্থানের প্রকাশ ঘটল।
র্যাবের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুল বলেন, ‘‘সারোয়ার জাহান-ই প্রধান ছিলেন, এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ আমাদের (হাতে) নেই। তাকে ডিএনএ টেস্ট করে যদি কোনো তথ্য পাওয়া যায়, সেটি আমরা বিবেচনা করে দেখব।”
গত ২৭ অগাস্ট নারায়ণগঞ্জের একটি বাড়িতে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অভিযানে তামিম নিহত হন। সেই অবিযানের সময় রাতে আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তামিম ও সারোয়ারের ‘সুরক্ষিত বার্তা’ বিনিময় হয়েছিল বলে র্যাবের দাবি।
সেদিনের সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মহাপরিচালক বলেছিলেন, তামিমের সঙ্গে রহমান বার্তা পাঠিয়ে যে যোগাযোগ করেছিলেন, তা বাড়ি ঘেরাও হওয়ার পর।
তাদের বার্তা আদান প্রদানের টেক্সট মেসেজও র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে দেখানো হয়েছিল।
মনিরুল বলেন, “তামিম চৌধুরীকে ঘিরে ফেলা হয় সকাল ৬টার দিকে। কাউন্টার টেরোরিজমের প্রথম টিমটি যায় ৬টা ১৫ কিংবা ২০ মিনিটে। তার আগে তাকে ঘিরে ফেলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে অন্য কোনো সংস্থা বা অন্য কোনো ইউনিট ঘিরে থাকতে পারে।”
অভিযান শুরুর পর তামিম যোগাযোগের সুযোগ খুব-একটা পাননি দাবি করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “যতটুকু করেছে তানভীর কাদেরীর সাথে করেছে এবং মেজর জাহিদের সাথে করেছে বলে আমাদের কাছে ডকুমেন্টারি কিছু রয়েছে।”
তামিম চৌধুরীর পর কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অভিযানে ঢাকার মিরপুরের রূপনগরে জাহিদুল ইসলাম এবং আজিমপুরে তানভীর কাদরী নিহত হন।
মনিরুল জানান, নব্য জেএমবির প্রধান হিসাবে ‘সেকেন্ড ক্যাটাগরির’ দুই-একজন রয়েছে, তারাই এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে।
তাদের মধ্যে বরখাস্ত মেজর জিয়াউল হক আছেন কি না- এ প্রশ্নে মনিরুল বলেন, “মেজর জিয়ার সাথে এই গ্রুপটির সম্পর্ক নেই। মেজর জিয়া আনসার আল ইসলাম এর সাথে জড়িত।”
আনসার আল ইসলাম নিষিদ্ধ করতে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে পুলিশ। নব্য জেএমবির বিষয়েও একই চিন্তা ভাবনা চলছে বলে জানান মনিরুল।
তিনি বলেন, “আমাদের কাছে তথ্য আছে পুরানো জেএমবি কেউ কেউ নব্য জেএমবির সাথে যুক্ত হয়েছে, তবে তাদের মধ্যে একটা ঠাণ্ডা লড়াই রয়েছে। সেহেতু পুরনো জেএমবির কাউকে তারা খুব গুরুত্বপূর্ণ পদে দেয়নি।”
বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাবের মহাপরিচালক সংবাদ সম্মেলনের বলেছিলেন, সারোয়ার বা রহমানসহ কয়েকজন মারা যাওয়ার পর নব্য জেএমবি’র এখন ২১ জন সদস্য আছেন (৮ অক্টোবর পর্যন্ত)।
এ বিষয়ে মনিরুল জানান, সুনির্দিষ্ট কোনো তালিকা পুলিশের কাছে নেই।
গত বছর গুলশানে ইতালির নাগরিক চেজারে তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডে নব্য জেএমবি জড়িত এবং সারোয়ার বা রহমানই ওই হামলার নির্দেশদাতা বলে দাবি করেছিলেন র্যাব প্রধান বেনজীর।
তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডের আলোচিত ঘটনায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিট তদন্তের পর বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ুম, তার ভাই এবং আরও পাঁচ যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়ার পর আদালতে অভিযোগ গঠনও হয়েছে। তাতে সারোয়ার কিংবা অন্য কোনো জঙ্গিকে আসামি করা হয়নি।
র্যাবের দাবির বিষয়ে মনিরুল সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “আমি তখন দেশের বাইরে ছিলাম, উনার (বেনজীর) সাক্ষাৎকারটি আমি শুনিনি।”
তবে বিচারাধীন বিষয়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে র্যাব প্রধান কোনো কথা বলেননি বলে মনে করেন ডিএমপিতে তার অধস্তন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করে আসা মনিরুল।
তিনি দাবি করেন, কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছেন।
কাইয়ুমের বিষয়ে মনিরুল বলেন, তিনি বিদেশে চলে যাওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।