বন্যপ্রাণীর সুরক্ষায় কালোবাজার ভাঙার তাগিদ

বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী নিধনের পেছনে পূর্ব এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবৈধ বাজার চাহিদাকে অনেকাংশে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2016, 12:58 PM
Updated : 26 Oct 2016, 07:13 PM

বন্যপ্রাণী নিধনের এমন সহিংসতা ও সন্ত্রাস দমনে আইন করার পাশাপাশি বিদ্যমান বাজার চাহিদাও নষ্ট করা প্রয়োজন বলে অভিমত তাদের।

বুধবার ঢাকায় দক্ষিণ এশিয়ায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংগঠন সাউথ এশিয়ান ওয়াইল্ডলাইফ এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্ক বা সোয়ান বার্ষিক বৈঠক শুরু হয়।

সোয়ানের দুই দিনব্যাপী এই বৈঠকে বাংলাদেশ, নেপাল, ভূটান, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যে কালো বাজারি নিয়ে এমন মতামত উঠে আসে।

দক্ষিণ এশিয়ার অপর দুই দেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানর প্রতিনিধিদের প্রথম দিনের সভায় দেখা যায়নি।

উদ্বোধনী আলোচনায় বাংলাদেশের বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত কালোবাজার এতোই বড় হয়েছে যে তা নিয়ন্ত্রণ করা রীতিমতো কঠিন হয়ে পড়েছে।

“বিলিয়ন ডলারের এই বাজার বন্ধ করা না গেলে দেশগুলোর প্রাণী সংরক্ষণের বিভিন্ন উদ্যোগ পুরোপুরি সফল হবে না। কারণ আপনি চাহিদা রেখে দিয়ে তো জোগান বন্ধ করতে পারছেন না,” বলেন তিনি। 

ইন্টারপোলের ‘এনভাইরনমেন্ট ক্রাইম ক্রাইসিস’ প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরুল করিম বলেন, সারা বিশ্বে প্রতিবছর ওষুধি গাছ ও অন্যান্য প্রাণীর ৭ বিলিয়ন থেকে ২৩ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত অবৈধ বাণিজ্য হয়।

এছাড়া বন উজাড় করে কাঠ পাচারের অবৈধ বাণিজ্যের আকার ৩০ বিলিয়ন থেকে একশ বিলিয়ন ডলার, যা মোট কাঠ বাণিজ্যের ১০ থেকে ৩০ ভাগ।

বন্যপ্রাণী নিয়ে এ ধরনের কালোবাজারি ও সন্ত্রাস পরিবেশের টেকসই ও সুষম ব্যবহারের জন্য হুমকি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

দক্ষিণ এশিয়ার পাশাপাশি আফ্রিকা, ল্যাতিন আমেরিকা অঞ্চলে বন্যপ্রাণী কেন্ত্রিক অপরাধী চক্রের গভীর শেকড় রয়েছে বলে জানানো হয় ইন্টারপোলের ওই প্রতিবেদনে। চীন, ভিয়েতনামসহ পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে বন্যপ্রাণীর বড় বাণিজ্য হয় বলেও তাদের উপলব্ধি।

বনমন্ত্রী বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে নানা ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ বিশ্বে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। র‌্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিজিবিসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বন্যপ্রাণীদের অভয়ারণ্য রক্ষায়ও কাজ করে।

সরকারের নানা উদ্যোগের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ পুরস্কার পেয়েছেন।

বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাকৃতিক সম্পদকে সংরক্ষণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন। বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্রের সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে সরকার দেশব্যাপী ৩৯টি সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করেছে।

এছাড়া বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্য ও পাচার ঠেকানোর জন্য ২০১২ সালে ওয়াল্ডলাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট গঠন করা হয়েছে ।

ঢাকার লো ম্যারিডিয়ান হোটেলে শুরু হওয়া এই বার্ষিক বৈঠকে অন্যদের মধ্যে সোয়ানের চিফ এনফোর্সম্যান্ট কো-অর্ডিনেটর গোপাল প্রকাশ ভাটারিয়া, বাংলাদেশ, ভূটান ও নেপালে বিশ্বব্যাংকের নতুন আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফান, প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুস আলী উপস্থিত ছিলেন।