সমস‌্যা না মিটিয়েই স্মার্ট কার্ড বিতরণ দ্বিতীয় পর্যায়ে

স্মার্ট কার্ড বিতরণে পরীক্ষামূলক কার্যক্রমে পাওয়া সমস‌্যা না মিটিয়েই ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এবং উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আরও সাত ওয়ার্ডে শুরু হয়েছে বিতরণ।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2016, 03:54 AM
Updated : 26 Oct 2016, 03:54 AM

মঙ্গলবার সকালে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরু হয়েছে। আর শুক্রবার থেকে শুরু হবে ঢাকা দক্ষিণের লালবাগ থানার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে। এই তারিখ ইসির ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে মাত্র দুদিন আগে, গত সোমবার।

পর্যায়ক্রমে লালবাগের ২৮ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ড, কোতোয়ালি থানার ৩৩ ও ৩২ এবং ঢাকা উত্তরের গুলশান থানার ২০ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিতরণ করা হবে স্মার্ট কার্ড। ২৫ অক্টোবর থেকে এ কাজ ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।

এদিকে স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রমে সমন্বয়হীনতা ও দুর্বল প্রচার নিয়ে মাঠ পর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।

তারা বলছেন, প্রচারণাসহ বিভিন্ন কাজের জন্য কোনো বরাদ্দ এখনো ছাড় হয়নি; নিজেদের উদ্যোগে প্রচার চালাতে হচ্ছে।

যাদের কার্ড সংশোধন করতে হবে, যারা কেন্দ্রে এসেও কার্ড পাননি এবং যারা কেন্দ্রেই আসেননি- এই তিন ধরনের বিপুল সংখ‌্যক ভোটারকে কবে, কীভাবে কার্ড দেওয়া যাবে- সে উত্তরও তারা নাগরিকদের দিতে পারছেন না।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের জুনিয়র কমিউনিকেশন কনসাল্টেন্ট হোসাইন আশিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খুব তাড়াহুড়ার মধ্যে এ বিতরণ কাজ চলছে। এ কারণে শুরুতে কিছুটা ভুলভ্রান্তি হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে বরাদ্দ ছাড় পেতে বিলম্ব হচ্ছে। আশা করি, সমস্যাগুলো শিগগিরই কেটে যাবে।”

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়ার পর গত ৩ অক্টোবর থেকে সাধারণ ভোটারদের মধ‌্যে উন্নতমানের এ জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ শুরু হয়।

প্রথম পর্যায়ে পরীক্ষমূলকভাবে ঢাকা মহানগরে চারটি ওয়ার্ডে স্মার্ড কার্ড বিতরণ শুরু হয়, যা শেষ হচ্ছে বুধবার। বিতরণ কেন্দ্রে নাগরিকদের অনুপস্থিতিসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে এসব অর্ধেক কার্ডও বিতরণ করতে পারেনি ইসি।   

কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা উত্তরে উত্তরার ১ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৩ শতাংশ, ঢাকা দক্ষিণে ১৯ নম্বর ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডে গড়ে ৪২ শতাংশ কার্ড বিতরণ হয়েছে। ২১ নম্বর ওয়ার্ডের তথ‌্য বুধবার বিতরণ শেষে জানা যাবে।

ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নানা জটিলতার মধ্যে মহানগরে তিনটি ওয়ার্ডের লক্ষাধিক ভোটারের মধ্যে প্রায় অর্ধ লক্ষ স্মার্ট কার্ড বিতরণ হয়েছে। পরীক্ষামূলক এ কার্যক্রমে যত সমস্যা চিহ্নিত হচ্ছে তা শনাক্ত করে পরবর্তী কাজে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।”

তিনি জানান, কার্ড বিতরণে ‘পদ্ধতিগত’ কিছু সমস্যা রয়েছে। আরও এক সপ্তাহ সময় সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিতরণের সময় বাড়ানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপসানালয়সহ সব জায়গায় প্রচার বাড়ানো হয়েছে।

এখন তিন সমস্যা

মূলত তিনটি সমস্যা নিয়ে মাঠ কর্মকর্তারা এখনো ইসির নির্দেশনা না পাওয়ায় নাগরিকদের কোনো তথ্য জানাতে পারছেন না। তারা আশা করছেন, অক্টোবরে পরীক্ষামূলক কাজ শেষে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, যারা স্মার্ট কার্ড নিচ্ছেন, তারা তথ্য সংশোধন করতে গেলে সহসাই ডুপ্লিকেট স্মার্ট কার্ড পাবেন না। কবে নাগাদ পাবেন তাও বলা যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন অফিসে কেউ সংশোধনের আবেদন করলে তথ্য সংশোধন হবে ডাটা বেইজে। প্রয়োজনে লেমিনেটেড সংশোধিত কার্ড নিতে হতে পারে।

২০১৪ সালে যারা ভোটার হয়েছেন তারা সরাসরি স্মার্ট কার্ড পাচ্ছেন এখন। তাদের হাতে ১৩ ডিজিটের কিংবা ১৭ ডিজিটের লেমিনেটে এনআইডি নেই। সেক্ষেত্রে ১০ ডিজিটের স্মার্ট কার্ড সংশোধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করলে তা যাচাইয়ে কারিগরি সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।

যারা বিতরণ কেন্দ্রে গিয়েও নানা জটিলতায় স্মার্ট নিতে পারেননি, তাদের বাড়িতে গিয়ে পরে তা পৌঁছে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের তিনটি ওয়ার্ডে সাড়ে সাত হাজার নাগরিকের এমন অভিযোগ পেয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।

“তাদের কার্ড কেন পাওয়া গেল না তা জানাতেও পারিনি; এখন বলছি বাড়ি পৌঁছে দেব। কিন্তু আদৌ এসব নাগরিকের কার্ড বাড়িতে পৌঁছানো সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। শেষ পর্যন্ত তাদেরই নির্দিষ্ট একটি জায়গা থেকে সংগ্রহ করতে হতে পারে,” বলেন ঢাকা উত্তরের একজন কর্মকর্তা।

আর যারা বিতরণ কেন্দ্রেই যাননি, তারা আবার কবে উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে কার্ড নিতে পারবেন সে বিষয়েও ইসির নির্দেশনা মেলেনি।

একজন নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, “গড়ে ৩০-৪০ শতাংশ লোক অনুপস্থিত। এদের কার্ড উপজেলা নির্বাচন অফিসে নিয়ে ম্যানেজ করা মুশকিল হবে। তাদেরকে কবে থানা অফিসে আসতে বলব- সে নির্দেশনাও পাইনি।”

এসব সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন উত্তরা থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজালাল ও রমনা থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবা মমতা হেনা।

তারা জানান, উত্তরায় সাড়ে ৬৩ হাজারের বেশি ভোটারের মধ্যে ৩৩ হাজারেরও বেশি নাগরিক স্মার্ট কার্ড পেয়েছেন; চার হাজারেরও বেশি নাগরিক নানা অসঙ্গতির কারণে কার্ড নিতে পারেননি। বাকিরা আসেননি বিতরণ কেন্দ্রে।

রমনা থানার ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ২৫ হাজার ৫১০ ভোটারের মধ্যে ১০ হাজার ৭০১ জন কার্ড নিয়েছেন; নিতে পারেননি এক হাজার ২৩৩ জন। বাকিরা অনুপস্থিত ছিলেন। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডেও ৫৫-৬০ শতাংশ নাগরিক বিতরণ কেন্দ্রে যাননি।

দুই নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, যারা বিতরণ কেন্দ্রে যাননি, বা যাদের কার্ড সংশোধন করতে হবে, তাদের বিষয়ে ইসির নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন তারা।

বিতরণ সংশ্লিষ্টরা জানান, ভাসমান ও স্থানান্তরিত ভোটারের কারণে বিতরণ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম। আর পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পাওয়ায় প্রচার হয়েছে কম। সব মিলিয়ে সমন্বয়হীনতাও ছিল।

ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, পদ্ধতিগত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে তারা কমিশনের কাছে মাঠে পাওয়া সমস্যাগুলো তুলে ধরবেন।