স্মরণসভায় কমরেড অজয় রায় বন্দনা

মৌলিক সমাজ-সভ্যতা-সংস্কৃতিকে মনের গহীনে লালন করে সারাজীবন মানুষের জন্য রাজনীতি করে গেছেন কমিউনিস্ট পার্টির প্রবীণ নেতা অজয় রায়। ক্ষমতার লোভ নয়, সামাজিক দায়বোধ তাকে প্রতিনিয়ত তাড়িত করেছে মানবকল্যাণে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Oct 2016, 06:14 PM
Updated : 25 Oct 2016, 06:14 PM

মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে অজয় রায় স্মরণে নাগরিক শোকসভায় তাকে এভাবেই মূল্যায়ন করেন রাজনীতিবিদ-শিক্ষাবিদ-অর্থনীতিবিদরা।

যৌথভাবে এ শোকসভার আয়োজন করে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন ও সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চ। এতে সভাপতিত্ব করেন এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “সমগ্র জীবন অজয় রায় মানুষের জন্য কল্যাণের জন্য কাজ করে গেছেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর তার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ভেঙে যায়। কিন্তু তিনি হতাশ না হয়ে, বিকল্প পথ বেছে নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন অনুকরণীয়। তার পথ দেখে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।”

ঐক্য ন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, “অবিভক্ত ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ- এ রাষ্ট্রের মধ্য দিয়ে তিনি পৌনে একশ বছর ধরে কর্মবীর ছিলেন। তিনি সফল ও সার্থক জীবনের ইতি টেনেছেন।”

প্রাণবন্ত অজয় রায়কে হারানোর বেদনা দীর্ঘদিন বয়ে বেড়াতে হবে বলে মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অজয় রায়

তিনি বলেন, “আমরা যারা ইহলোকে বিশ্বাস করি, পরবাস্তবতায় বিশ্বাস করি, তারা জানি কখনও অজয় রায়কে ফিরে পাওয়া যাবে না। আমরা প্রাণবন্ত অজয় রায়কে হারিয়েছি। সে বেদনা দীর্ঘদিন আমাদের বয়ে বেড়াতে হবে।”

পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন স্ত্রী জয়ন্তী রায়, বড় মেয়ে অনিন্দিতা রায় ও একমাত্র ছেলে অমিতাভ রায়।

জয়ন্তী রায় বলেন, “তিনি অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা তরুণ প্রজন্মের হাতে তুলে দিয়ে গেছেন। তার অসমাপ্ত কাজ এ প্রজন্মকেই শেষ করতে হবে। তিনি তার কাজের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকবেন আমাদের মাঝে।”

অনিন্দিতা রায় বলেন, “তিনি সজ্ঞানে নিজের ইচ্ছায় চলে গেছেন। আমৃত্যু তিনি তার বিশ্বাসে অটল ছিলেন।”

অমিতাভ রায় বলেন, “তিনি যা ভাবতেন, তাই করতে দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিলেন। এমনকি তিনি নিজের মৃত্যুর সময়টি বেছে নিয়েছিলেন।”

পরে স্মৃতিচারণায় যোগ দিয়ে অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাত বলেন, “তিনি যেকোনো মানদণ্ডে মহৎপ্রাণ মানুষ ছিলেন। তিনি সৎ, নিলোর্ভ, সজ্জন, বিনয়ী মানুষ ছিলেন। অদম্য মানসিক শক্তি সম্পন্ন মানুষ ছিলেন। তার দেশপ্রেম বিমূর্ত ছিল না।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, “দীর্ঘ সময়ের পথচলায় তার সঙ্গে প্রচুর তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। বেশিরভাগ সময়েই তাতে মতের মিল হতো না। তারপরও তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা, আমার প্রতি তার স্নেহের কমতি হয়।

“যারা কমিউনিস্ট পার্টি করেন তাদের একদল আগুনের মতো এবং আরেক দল স্নিগ্ধতার প্রতীক। অজয় রায় ছিলেন স্নিগ্ধতার প্রতীক,” বলেন তিনি।

অজয় রায়ের স্মৃতিচারণ সভায় এসেছিলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী, বিচারপতি কাজী এবায়দুল হক, অর্থনীতিবিদ খোন্দকার ইব্রাহীম খালিদ, আওয়ামী লীগ নেতা নূহ-উল আলম লেনিন, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত।

এর আগে আয়োজনের শুরুতেই অজয় রায়কে স্মরণ করে সঙ্গীত পরিবেশন করেন সেমন্তী মঞ্জরি। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ।

শোকসভায় অজয় রায়ের লেখা শেষ বই ‘বাঙালি মানস সংশ্লেষণধর্মিতা সাম্প্রদায়িকতার জের এবং বিবিধ প্রসঙ্গ’র মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইটি প্রকাশ করেছে জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ।

গত ১৭ অক্টোবর রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান প্রবীণ রাজনীতিবিদ অজয় রায়।