‘দুর্দান্ত ১০ বছর’ উদযাপনের সঙ্গী সাব্কে সিইসি শামসুল হুদা

যাদের ঘিরে, যাদের জন‌্য সঙ্কটে-সম্ভাবনায় আবর্তিত হয়েছে সংবাদের চাকা, তাদের সঙ্গে এক মঞ্চে মিলে প্রতিষ্ঠার ১০ বছর উদযাপন করছে বাংলাদেশের প্রথম ইন্টারনেট সংবাদপত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2016, 01:15 PM
Updated : 23 Oct 2016, 02:02 PM

রোববার রাতে রাজধানীর র‌্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলের বলরুমে এই মিলনমেলায় ইতোমধ‌্যে আসতে শুরু করেছেন অতিথিরা।

সন্ধ‌্যার পরপরই অনুষ্ঠানস্থলে আসেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা। প্রায় একই সময় অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছেন সমাজকর্মী অ‌্যারোমা দত্ত। তাদের কিছুক্ষণ পরই অনুষ্ঠানে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ‌্যালয়ের অধ‌্যাপক সাদেকা হালিম।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী, বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান আহসান হাবিব খানও পৌঁছেছেন অনুষ্ঠানস্থলে।

শামসুল হুদা বলেন, “বিডিনিউজ ১০ বছর সময় পেরিয়ে অত‌্যন্ত সাহসিকতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে সংবাদ পরিবেশন করে অনন্য অবদান রেখে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ক্রান্তিকালে তাদের এই প্রচেষ্টা আরও নিবিড় ও বস্তুনিষ্ঠ হবে এটিই আমার প্রত্যাশা।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সংবাদের বিশ্বাসযোগ্যতার দিকটি তুলে ধরেন অ্যারোমা দত্ত।

“বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম একটি রিমার্কেবল মাইলস্টোন। দেশে-বিদেশ এ সংবাদপত্রটি গ্রহণযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্যতা সবচেয়ে বেশি। আমি সত্যিই আনন্দিত এমন একটা গণমাধ্যমকে পেয়ে।”

বেসরকারি সংস্থা প্রিপট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক অ্যারোমা বলেন, “সব লেভেলের কাছে, সব বয়সের কাছে বিডিনিউজ পৌঁছেছে, তারা যা চায় সব দিতে পারছে অনলাইনটি। বিডিনিউজ সব বয়সীদের চাহিদা কাভার করে।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, মুক্তিযুদ্ধ ও উন্নয়নের সঙ্গে থাকার প্রচেষ্টা মুগ্ধ করেছে বলেও জানান অ্যারোমা।

“দেশের সাংবাদিকতাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে বিডিনিউজ। তার উত্তরোত্তর সম্মৃদ্ধি কামনা করছি। আজকের বার্ষিকীর মাধ্যমে সামনে চাওয়া-পাওয়াও আমাদের বাড়ছে, আমরা চাই আমাদের সঙ্গে থেকে সবকিছু পূরণ করতে পারবে বিডিনিউজ।”

.

সরকার আর রাজনৈতিক দলের নীতি-নির্ধারক; বিচারপতি-আইনজীবী, ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তা, কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী-ক্রীড়াবিদ-সংগঠক, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা আর নানা ক্ষেত্রে বাঁক বদলের সাক্ষীরা আমন্ত্রিত আনন্দঘন এই উদযাপনে।

দশকপূর্তি উপলক্ষে সাড়ে ৮টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর বক্তব্য শেষে নৈশভোজের মধ‌্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হবে।

অনুষ্ঠানটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

অনুষ্ঠানস্থল বলরুমের সামনে বিভিন্ন সময়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত অন্তত ৫০টি আলোকচিত্র ৩০টি ফ্রেমে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে উঠে এসেছে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের পাশাপাশি আলোচিত নানা ঘটনাবলি।

২০০৭ সালের আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তারের আলোকচিত্র রয়েছে। ২০১২ সালে একটি জনসভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের একটি বিশেষ মুহূর্তও রয়েছে ফ্রেমে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে হিলারি ক্লিনটনের ২০১২ সালে বাংলাদেশে আসার মুহূর্তটিও ছবিঘরে সাজানো রয়েছে। রয়েছে যুক্তরাজ‌্যের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, ফুটবলার লিওনেল মেসির ছবিও।

২০১২ সালে রামুর বৌদ্ধ বিহারের হামলা, ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংঘর্ষ, ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশসহ নানা চিত্র ফ্রেমবন্দি হয়েছে এই অনুষ্ঠানে। নিজের শেষ চলচ্চিত্রের শুটিংয়ে থাকা হুমায়ুন আহমেদের ছবিও রয়েছে সেখানে।

বলরুমে প্রবেশ পথেই ডিজিটাল স্ক্রিনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পথ-পরিক্রমার অংশবিশেষ তুলে ধরা হচ্ছে।

.

‘ডটকম’ জগতে বাংলাদেশের সংবাদকে নিয়ে যাওয়ার দিশারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “নতুন একটি প্রজন্মের জন‌্য, নতুন একদল পাঠকের পরিবর্তনশীল রুচি ও পছন্দের কথা মাথায় রেখে কাজ করা ছিল কঠিন। উত্তাল দশটি বছর আমরা সেই চ‌্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি আনন্দের সঙ্গে।”

শুরুটা হয়েছিল ২০০৫ সালের প্রথমার্ধে। অন্যান্য বার্তা সংস্থার মতো ‘বিডিনিউজ’ তখন সংবাদ মাধ্যমগুলোর জন্য খবর সরবরাহ করত। দেশের অন্য সংবাদ সংস্থাগুলো টেলিপ্রিন্টারে খবর সরবরাহ করলেও বিডিনিউজ এ কাজটি শুরু করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে।

২০০৬ সালে বার্তা সংস্থাটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা বদলের পর এর খোল-নলচে বদলে যায়। সাংবাদিক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর নেতৃত্বে নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটিকে দেশের প্রথম ডটকম কোম্পানির রূপ দেয়। নতুন আঙ্গিকে এর পরিচয় হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম নামে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের একজন মুখপাত্র বলেন, “ওই বছর অক্টোবরে রাজনৈতিক অস্থিরতা আর রাজপথে রক্তক্ষয়ী সহিংসতার মধ‌্যে বাংলাদেশ যখন ছদ্মবেশী সামরিক শাসনের এক নতুন অধ‌্যায়ের দ্বারপ্রান্তে, অনিশ্চিত সেই সময়ে ২৩ অক্টোবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম উৎসুক পাঠকের জন্য সমস্ত কন্টেন্ট উন্মুক্ত করে দেয়। যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশের প্রথম ইন্টারনেট সংবাদপত্রের।”

পাঠকদের জন্য ২৪ ঘণ্টা দেশ-বিদেশের সর্বশেষ ঘটনার খবর বাংলা ও ইংরেজি- দুই ভাষায় বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ নিয়ে আসা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এরপর এক দশকে নিয়মিত উপহার দিয়েছে নতুন নতুন সংবাদ সেবা।

দিনে দিনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাজের ব্যাপ্তি যেমন বেড়েছে, তেমনি মিলেছে পাঠক, শুভানুধ্যায়ীদের সাড়া। সব ধরনের পাঠকের পছন্দ মাথায় রেখে যুক্ত হয়েছে বিষয়ভিত্তিক আলাদা পোর্টাল।

প্রতি মাসে দশ কোটি পেইজ ভিউ এবং এক কোটি ইউনিক ভিজিটর নিয়ে পরিণত হয়েছে একক পাঠক সংখ্যার বিচারে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংবাদ মাধ্যমে; পাঠকের কাছে বিবেচিত হচ্ছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ‌্য সংবাদ প্রকাশক হিসেবে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম মুখপাত্র বলেন, ইন্টারনেটে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে একটি ব্রাউজার থেকে একটি ওয়েবসাইটে ‘একসেস’ করাকে একটি ‘ইউনিক ভিজিট’ ধরা হয়, যা প্রকাশনা শিল্পে মুদ্রিত সংবাদপত্রের প্রচার সংখ্যার সঙ্গে সমতুল্য।

“অর্থাৎ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম যদি মুদ্রিত সংবাদপত্র হত, তাহলে এর প্রচার সংখ্যা এক কোটিতে দাঁড়াত। এই সংখ‌্যা দেশের সব মুদ্রিত সংবাদপত্রের সম্মিলিত প্রচার সংখ‌্যার বহুগুণ বেশি।”

২০১৩ সালের মে মাসে মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ ও তাণ্ডবের দিনে ১০ লাখেরও বেশি পাঠক তাৎক্ষণিক সংবাদের জন্য চোখ রেখেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে। 

ওই বছর ১২ ডিসেম্বর যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ‘হিট’ ছিল প্রায় ১৭ লাখ। ফাঁসির খবর পেতে সেই রাতে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যেই এ সাইটে আসেন ২ লাখ পাঠক।

২০১৫ সালের ১৯ মার্চ ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে হিট ছিল ১৫ লাখের বেশি।

আর চলতি বছর ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ‘হিট’ ১৭ লাখ ২৯ হাজার ছাড়িয়ে যায়, যা এ যাবত কালের সর্বাধিক।

সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে থেকেও পাঠক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সঙ্গে পাচ্ছে সর্বক্ষণ। ২০১১ সালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম যখন পঞ্চম বর্ষপূতি উদযাপন করে, ফেইসবুকে তাদের ফ্যান সংখ্যা ছিল ৭৬ হাজার ২৫৭। পরের পাঁচ বছরে তা ৭২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

সময়ের উদ্ভাবনী মেজাজকে ধারণ করে গত দশ বছরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ওয়েবসাইটে যুক্ত হয়েছে ‘মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট’। সেই সঙ্গে আছে মোবাইল ফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিউজ অ্যালার্ট সার্ভিস, ইংরেজি ও বাংলায় ব্রেকিং নিউজ, যে সেবায় তারাই বাংলাদেশে পথিকৃৎ।