উৎসবে ভারতীয় মঞ্চনাটকের ‘মানে’ সতর্ক হওয়ার আহ্বান

বাংলাদেশের বিভিন্ন নাট্যোৎসবে ভারতের অনেক ‘নিম্নমানের প্রযোজনা আসে’ অভিযোগের মুখে দেশটির নাট্যদলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানোর ব্যাপারে আয়োজকদের আরও বেশি সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2016, 05:44 PM
Updated : 21 Oct 2016, 05:44 PM

শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে ‘গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবের’ উদ্বোধনীতে তিনি বলেন, “আমি নাট্যোৎসব আয়োজকদের অনুরোধ করব, যেন ভারতের নাট্যপ্রযোজনাগুলো দেখে তবেই তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।

“সতর্ক থাকা উচিত যেন কোনো নিম্নমানের প্রযোজনা এখানে না আসে। তবে দর্শকের ভারতের নাটক সম্পর্কে বিরূপ ধারণা হবে,” বিশ্ব আইটিআই এর সাম্মানিক এই সভাপতি।

এ উৎসবে ভারতের অনীক থিয়েটারের অংশগ্রহণ নিয়ে নাট্যাঙ্গনে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকে। অনেকেই বলছেন, তারা বরাবরই ‘মানহীন’ নাটক উপস্থাপন করছেন।

এনিয়ে উৎসব উদযাপন পর্ষদের আহ্বায়ক গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘কৃতজ্ঞতাবোধ ও আর্থিক সীমাবদ্ধতার’ কারণে তারা অনীককে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

‘মানহীন’ নাটকের অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে তিনি দাবি করেন, এবারের উৎসবে অনীকের ‘শকুন্তলা’ নাটকটি দলটির ‘অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাটক’।

এবারের উৎসবের উদ্বোধনী সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় ভারতের হ-য-ব-র-ল নাট্যদল মঞ্চস্থ করে নাটকত্রয় ‘ঈপ্সা’।

২৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় একই মঞ্চে অল্টারনেটিভ লিভিং থিয়েটার মঞ্চস্থ করবে ‘বিষাদকাল’। ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় এই মঞ্চে অনীকের ‘শকুন্তলা’ নাটকটি মঞ্চস্থ হবে।

উৎসবের উদ্বোধনীতে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “বাংলাদেশ ভারত দুই দেশেরই সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারা নাটক, উৎসবের মাধ্যমে তার সঙ্গে পরিচয় হবে সবার। এ উৎসবের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব আরো নিবিড় হবে।”

এসময় রামেন্দু মজুমদার তাকে বিভিন্ন নাট্যোৎসবে ভারতীয় নাট্যদলগুলোর অংশগ্রহণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এনবিআরের ‘অনুমতি বাধা’ অপসারণে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতি অনুরোধ জানান। ভারতীয় হাইকমিশনের ভিসা প্রদানে জটিলতাকে ‘সংকট’ হিসেবে চিহ্নিত করেন তিনি।

পঞ্চমবারের ‘গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব ২০১৬’ উৎসর্গ করা হয়েছে সদ্যপ্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক এর স্মৃতির উদ্দেশ্যে।

আয়োজকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে লেখকের স্ত্রী আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, “নাটক ছিল তার (সৈয়দ হকের) প্রাণ। স্বপনে-জাগরণে-বাস্তবে তিনি সবসময় নাটক নিয়েই মাতামাতি করতেন। নাটকই ছিল তার প্রাণ।”

অনু্ষ্ঠানের অতিথি ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক জয়শ্রী কুণ্ডু বলেন, “নাটক শুধু বিনোদনমাধ্যম নয়, শিক্ষারও। সমাজের দুযোগপূর্ণ অবস্থায় নাটক আমাদের দারুণ কিছু শেখায়। এবারের উৎসব দুদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান আরো দৃঢ় হবে।”

২১ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ১০ দিনব্যাপী বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি’র জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তন, এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হল, স্টুডিও থিয়েটার হল এবং নৃত্য ও সঙ্গীত মিলনায়তনে ভারতের তিনটি, ঢাকা’র ২৫টি ও ঢাকার বাইরের দুটি নাট্যদলসহ ৩০টি নাট্যদলের নাটক মঞ্চস্থ হবে।

উৎসব প্রাঙ্গণের উন্মুক্ত মঞ্চে ৫৩টি সংগঠন এর আবৃত্তি, সংগীত, নৃত্য ও পথ নাটক পরিবেশনা নিয়ে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এবারের ‘গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব-২০১৬’ উদযাপিত হবে।

উন্মুক্ত মঞ্চের সাংস্কৃতিক পর্ব প্রতিদিন ৪টা থেকে ৬.৩০ মি. পর্যন্ত এবং মঞ্চনাটক প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হবে।

এই উৎসবে সহযোগিতা করছে সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।