বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার দক্ষিণখান থানার ফায়েদাবাদের বায়তুর রউফ মসজিদ দেখে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, “এ ধরনের স্থাপত্য বিরল; দারুণ লাগছে এখানে এসে।
“সারা বিশ্ব যখন জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে আন্দোলন করছে, তখন এ ধরনের পরিবেশবান্ধব স্থাপত্য সত্যিই প্রশংসনীয়।”
রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, “স্থাপত্যকৌশলে এটি সত্যি দারুণ একটি স্থাপত্য। এমন সুন্দর স্থাপত্য খুব একটা দেখা যায় না।”
মসজিদ বলতে স্থাপনার যে অবয়ব চোখের সামনে আসে, তার চেয়ে ভিন্ন স্থাপত্য শৈলীতে তৈরি বায়তুর রউফ মসজিদ। শুধু ভিন্ন বলাটাই যথেষ্ট নয়, অনেকটাই ভিন্ন। কোনো মিনার নেই, নেই কোনো গম্বুজও।
চারপাশ লাল ইটের আস্তরণে ঢাকা। আর এরই ফাঁক গলে আসছে আলো, যাতে প্রতি ওয়াক্তের নামাজের সময়ে ছড়িয়ে পড়ে অনন্য বিচ্ছুরণ। আর বৈদ্যুতিক পাখার বাতাসের চেয়ে প্রাকৃতিক বাতাসের চলাফেরা- সব মিলিয়ে স্থাপত্যটিকে করে তুলেছে অনন্য সাধারণ।
ঢাকার দক্ষিণখান থানার ফায়েদাবাদে; সহজ করে বললে আবদুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে পূর্ব দিকে হেঁটে রেললাইন পার হয়ে মসজিদটির অবস্থান।
স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম, যিনি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভেরও অন্যতম নকশাকার- বায়তুর রউফ মসজিদের নকশার জন্য তিনি এ বছর অর্জন করেছেন বিশ্বব্যাপী স্থাপত্যকলার জন্য অন্যতম আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার।
তিনি ছাড়াও গাইবান্ধায় ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার স্থাপত্যের জন্য কাশেফ মাহবুব চৌধুরীও এ পুরস্কার পেয়েছেন। এবারই প্রথম কোনো বাংলাদেশি এ সম্মাননা পেয়েছেন, তাও একসঙ্গে দুইজন।
স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম মসজিদটির বিশেষত্ব সম্পর্কে বলেন, “মসজিদটির নকশা করা হয়েছে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, প্রচলতি মসজিদগুলো থেকে আলাদাভাবে। পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জ্যপূর্ণ এবং প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের দিকটি মাথায় রেখে এর নকশা করা হয়েছে।
তিনি জানান, মসজিদের পূর্ণাঙ্গতার জন্য ইমামের ঘর ও গ্রন্থাগার তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।
মসজিদটির ভেতরে প্রবেশ করে বাতাসের বাধাহীন চলাচল আর আলোর চমৎকার বিচ্ছুরণে পুরো পরিবেশেই যেন এক ধরনের আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়া দেখা যায়।
৭৫৪ বর্গমিটারের মসজিদটির বিশেষত্ব হলো, এখানকার মসজিদের পরিচিত চিত্র মিনার নেই। চারপাশে আটটি পিলারের ওপর মসজিদটির ভিত্তি। নকশার আরেকটি বিশেষত্ব হলো, কেবলার দিকে ১৩ ডিগ্রি কোনাকুনি করা একটি থাম।
এই মসজিদে নামাজ পড়াটা বেশ আরামদায়ক বলে মন্তব্য করলেন সেখানে নিয়মিত নামাজ পড়তে আসা আজিজ উদ্দীন।
মসজিদের ইমাম দ্বীন ইসলাম জানান, এই মসজিদে প্রতি জামাতে ৪০০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করেন, গেল ঈদুল আজহায় এখানে ছয় শতাধিক মুসল্লি ঈদের নামাজ পড়েছিলেন।
মেরিনা তাবাসসুম ২০০৪ সালে প্যাভিলিয়ন অ্যাপার্টমেন্টের জন্য আগা খান পুরস্কারের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ১৯৯৫ সালে স্নাতক এই স্থপতি ২০১৫ সাল থেকে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান মেরিনা তাবাসসুম আর্কিটেক্টস (এমটিএ) পরিচালনা করছেন।