প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলছেন, জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা আয়োজনের দায়িত্ব এবারও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর কোনো বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। তবে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি বলেছে, তারা পরীক্ষা নিতে প্রস্তুত।
আগামী ১ থেকে ১৭ নভেম্বর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার সূচি নির্ধারিত আছে, যাতে ২২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেবে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের উপস্থিততে গত ১৮ মে জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় প্রাথমিক স্তর অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা উঠিয়ে দিতে গত ২৭ জুন মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু মন্ত্রিসভা তাতে সায় না দিয়ে আরও পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য ওই প্রস্তাব ফেরত পাঠায়।
মন্ত্রিসভার সেই বৈঠকের প্রায় চার মাস পর বৃহস্পতিবার ফিজার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মন্ত্রিসভায় কী সিদ্ধান্ত হয়েছে সেই কাগজ আনিয়েছি। একটি পরীক্ষার ব্যাপারে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, মন্ত্রিসভা সেটি অনুমোদন না করে জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
“মন্ত্রিসভা বলেছে- যেহেতু প্রাথমিক সমাপনী প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিচালিত হবে, সেহেতু পূর্বের ন্যায় জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। আর তা মন্ত্রিসভা থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত।”
পঞ্চম শ্রেণি থেকে প্রাথমিক সমাপনী তুলে দেওয়ার বিষয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পুনরায় মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে জানিয়ে ফিজার বলেন, “কে (উপস্থাপন) করবে সে বিষয়ে কিছু বলা নেই। নিয়ম হল যারা ছেড়ে দেবে (শিক্ষা মন্ত্রণালয়) তাদেরই উপস্থাপন করতে হবে।... আমরা তো শিক্ষানীতি অনুযায়ী (অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক স্তরে) চাচ্ছি না।”
তিনি বলেন, “মন্ত্রিসভা জানিয়েছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগ পর্যন্ত বিদ্যমান পরীক্ষা পদ্ধতি বহাল থাকবে। বহাল যদি থাকে কার অধীনে থাকবে? আমি যে আন্দাজে মিটিং করছি, এই করছি সেই করছি?”
ফিরে দেখা
প্রাথমিক স্তর অষ্টমে উন্নীতের সিদ্ধান্ত জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ গত ১৮ মে বলেছিলেন, “জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী আজ আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষা প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় চলে গেল। অবিলম্বে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করব। তারা এটা গ্রহণ করে পরিচালনা করবেন। এজন্য আমরা এ বিষয়ে একটি সার-সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাব। তিনি কোনো অনুশাসন দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।”
আর ফিজার বলেছিলেন, “প্রাথমিক শিক্ষার ব্যপ্তিকাল পঞ্চম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতে আমরা নিয়ে গেলাম। …আসল সিদ্ধান্তটাই আজ নিয়ে নিলাম। আজ একটা ঐতিহাসিক ক্ষণ।”
এবারের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা বোর্ডগুলোর সহায়তায় সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বেশ কয়েকটি সভা করে পরীক্ষার সূচিও প্রকাশ করেছে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু তাদের অবস্থান বদলে গেল পরীক্ষার মাত্র দশ দিন আগে।
গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, “নিজেদের অধীনে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা না নেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।... আমি সংবাদ সম্মেলন যেটা করতাম, যেটা বলতাম, এখন উনি (শিক্ষামন্ত্রী) সেটা করবেন। প্রস্তুতি তো শিক্ষা বোর্ড নেবে, তারা প্রশ্ন তৈরি করেছে, সব করেছে।”
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পরিচালনার দায়িত্ব প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দিতে মন্ত্রিসভার নির্দেশনা প্রয়োজন জানিয়ে ফিজার বলেন, “হস্তান্তর করার অধিকার যেমন আমার নেই, এখন বুঝলাম উনি (শিক্ষামন্ত্রী) হস্তান্তর করলেও হবে না। তাহলে কেবিনেটে কেন পাঠাতে হল আমাকে?
“ওখানে যখন হস্তান্তর করল, তারপরে বলল, আপনারা সারসংক্ষেপ পাঠিয়ে দেন। আসলে এই সার-সংক্ষেপটা উনাদেরকেই (শিক্ষা মন্ত্রণালয়) পাঠাতে হবে যে আমরা শিক্ষানীতির আলোকে এটা ছেড়ে দিতে চাই।”
গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি ফোনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার সব প্রস্তুতি শেষ, পরীক্ষা নিতে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত।”
কোন মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরীক্ষা হবে সে সিদ্ধান্ত সরকার নেবে জানিয়ে অধ্যাপক মাহবুবুর বলেন, “যে মন্ত্রণালয়ের অধীনেই হোক, পরীক্ষার্থীদের কোনো অসুবিধা হবে না।”
আরও পড়ুন