শুক্রবার বিকালে ধানমন্ডির গ্যালারি টোয়েন্টি ওয়ানে চিত্রকর্ম প্রদর্শনী, ছায়ানটে নন্দনের আয়োজনে সংগীতসন্ধ্যা ছাড়াও শিল্পকর্মের প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠে নতুন একটি স্টুডিও উদ্বোধন করা হয়।
এছাড়া শিল্পকলা একাডেমিতে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের আয়োজনে ছিল দিনব্যাপী একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা।
সাধারণত শুক্রবারে সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে রাজধানী শহর যানজটমুক্ত থাকায় সাংস্কৃতিক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে অন্য দিনের তুলনায় বেশি জনসমাগম ঘটে থাকে।
তবে এদিন সকালে বিসিএসের প্রিলিমিনারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সঙ্গে বিকালে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে গণঅভ্যর্থনা কর্মসূচি ঘিরে যানজটের মুখে পড়তে হলেও এসব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জনসাধারণের উপস্থিতিতে তেমন একটা ঘাটতি দেখা যায় নি।
গ্যালারি টোয়েন্টি ওয়ানে চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ‘কাল’
তেল রংয়ে আঁকা শিল্পী মনসুর উল করিমের ৪৫টি ছবি নিয়ে গ্যালারি টোয়েন্টি ওয়ানে শুরু হয়েছে ‘কাল’ শীর্ষক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী।
গ্যালারি টোয়েন্টি ওয়ান ও আর্টকনের যৌথ আয়োজনে ১৫ দিনব্যাপী এ চিত্রকর্ম প্রদর্শনী চলবে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
বিকালে শিল্পীর তার ২৬তম এই একক চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী মনিরুল ইসলাম, লেখক ও শিল্প-সমালোচক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।
উদ্বোধনীতে শিল্পী মনসুর উল করিমের শিল্প সাধনার প্রশংসা করে মনিরুল ইসলাম বলেন, “শিল্প সৃষ্টিতে তিনি যে দার্শনিকতা এবং নন্দনতাত্ত্বিক উপলব্ধির সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন তা এক নতুন শিল্পরীতির দিকে ধাবিত হয়েছে।”
মনসুর উল করিম প্রথানির্ভর কোনো পটভূমিতে না থেকে ক্যানভাসে ‘নতুন ফর্ম’ তৈরি করছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পরাবাস্তবতার ভেতরও মনসুর উল করিমের ছবি ‘দেশজ ভাব-লাবণ্যের উজ্জ্বল প্রকাশে’ প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে বলে মন্তব্য করেন শিল্প-সমালোচক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।
“মনসুর উল করিমের বোধ এবং প্রকাশের ভঙ্গি তার রংয়ের গতিবিধি এবং তার স্বতঃস্ফূর্ততা তাকে যেভাবে স্পন্দিত করেছে, তার আভা তার দীপ্তির সারাৎসার আমার পেয়েছি তার চিত্রকলায়।”
দেশে-বিদেশে অসংখ্য প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া শিল্পী মনসুর উল করিম ২০০৯ সালে একুশে পদক পান।
বরেণ্য এই শিল্পী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসর নিয়ে তার জন্মস্থান রাজবাড়ীতে ফিরে গিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘বুনন আর্ট স্পেস’ নামে একটি চিত্রকলার প্রতিষ্ঠান। সেখান থেকে অন্তত ১০০ চিত্রশিল্পীকে পেশাদার শিল্পী হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি।
খেলাঘরের দিনব্যাপী কর্মশালা
শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে দিনব্যাপী ‘এসো গড়ি খেলাঘর, এসো গড়ি বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা।
খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর চেয়ারম্যান অধ্যাপক পান্না কায়সারের সভাপতিত্বে কর্মশালার দিনব্যাপী আয়োজন পরিচালনা করেন খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য সাংবাদিক অশোকেশ রায় ও সহ সাধারণ সম্পাদক সাহবুল ইসলাম বাবু।
এতে মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং শিক্ষা ও সভ্যতার সঙ্কটে দেশে জঙ্গিবাদ-মৌলবাদী চক্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে মত প্রকাশ করে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা।
“প্রশিক্ষক নেতৃত্ব ছাড়া আজকের প্রযুক্তির নির্ভর প্রজন্মকে পাঠে-পঠনে, মননে-মেধায়, শিল্পে-সংস্কৃতিতে আকৃষ্ট করা যাবে না। আর নতুন প্রজন্মকে এসবে আকৃষ্ট না করে গেলে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ, সুস্থ-সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ সম্ভব নয়।”
কর্মশালায় ‘সমাজ সভ্যতার ক্রমবিকাশ’ বিষয়ে উদীচীর সহ-সভাপতি অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ গড়িই হওয়া উচিৎ এই মুহূর্তের মূল লক্ষ্য। যা পারবে জঙ্গিবাদ নির্মূল করে নতুন প্রজন্মের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে। এ জন্য গণসচেতনতা সৃস্টি ও প্রশিক্ষিত সংগঠকদের বিকল্প নেই।”
ওপেন স্টুডিওর যাত্রা শুরু
বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২০১৫ সাল থেকে প্রবর্তিত হয়েছে ‘সুবীর চৌধুরী শিল্পচর্চা বৃত্তি’, যা পেয়েছেন দুই তরুণ শিল্পী ঈশিতা মিত্র তন্বী এবং আবীর সোম।
এবার এই দুই শিল্পীর নির্বাচিত শিল্পকর্মের প্রদর্শনীর মাধ্যমে একটি ‘ওপেন স্টুডিও’র যাত্রা শুরু করেছে এই সাংস্কৃতিক সংস্থা।
বিকালে রাজধানীর জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠে ওপেন স্টুডিওর উদ্বোধন করেন শিল্পী শহিদ কবির এবং বেঙ্গল ইনস্টিটিউট ফর আর্কিটেকচার, ল্যান্ডস্ক্যাপ অ্যান্ড সেটেলমেন্টের মহাপরিচালক অধ্যাপক কাজী খালিদ আশরাফ।
কুড়িয়ে পাওয়া বিভিন্ন বস্তু শিল্পী ঈশিতা মিত্রের শিল্পচর্চার অন্যতম সহায়ক। ঈশিতার কাজে যাপিত জীবনের যন্ত্রণা, অপ্রাপ্তি আর অস্থিরতা আছে- সে সঙ্গে এই অস্থিরতা আর অপ্রাপ্তি থেকে স্থিতি ও প্রাপ্তি অন্বেষণের এবং অসুরের শীতলতা থেকে সুরের কোমলতা খোঁজার আহ্বানও রয়েছে।
সময়ের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় ধাবমান জীবনের গল্প আবীরের শিল্পচর্চাকে প্রভাবিত করে। লাল রংয়ের অধিক ব্যবহার রূঢ় সময়ের পংকিল বাস্তবতাকে আমাদের সম্মুখে টেনে নিয়ে আসে, একই সঙ্গে তিনি একটি কাল্পনিক রাজ্য নির্মাণেও প্রয়াসী হন।
ছায়ানটে নন্দনের সংগীতসন্ধ্যা
সাংস্কৃতিক সংগঠন নন্দনের আয়োজনে সন্ধ্যায় ছায়ানট মিলনায়তেন ছিল সংগীত সন্ধ্যা।
এতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ভুবনেশ্বরী টেলিভিশনের স্বত্বাধিকারী আবৃত্তিকার, নৃত্য ও নাট্যশিল্পী মনীষা পাল চৌধুরী অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ।
রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী মিতা হকের শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর শুরু মূল অনুষ্ঠানে মনীষা পাল চৌধুরী ও চট্টগ্রামের রাশেদ হাসানের আবৃত্তির পাশাপাশি নন্দনের শিল্পীরা পরিবেশন করেন পঞ্চকবির গান।