অভ্যর্থনা জানাতে আসা নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সড়কে অবস্থানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর চলাচলের সময় কয়েকটি সড়ক পুলিশ আটকে দেওয়ায় শুক্রবার এই পরিস্থিতি তৈরি হয়।
ছুটির দিন হলেও দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং বিসিএস পরীক্ষার কারণে রাজধানীর সড়কগুলোতে চলাচলরত মানুষ তুলনামূলক বেশি হওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের এই কর্মসূচির কারণে যানজটের আশঙ্কা আগে থেকেই করা হচ্ছিল।
ট্রাফিক পুলিশ সক্রিয় থাকার আশ্বাস এবং নেতা-কর্মীদের সুশৃঙ্খল থাকতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের আহ্বান থাকলেও সড়কে পথচারী ও যাত্রীদের আগের মতোই বিরূপ অভিজ্ঞতার কোনো পরিবর্তন হয়নি।
যানজটের কারণে বড় দুর্ভোগে পড়তে হয় বিমানযাত্রীদের। নির্ধারিত সময়ে ফ্লাইট ধরতে তাদের কাউকে কাউকে ব্যাগপত্র নিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার হাঁটতে হয়।
বিকাল ৫টার দিকে ভিভিআইপি টার্মিনালের সামনে দিয়ে গোল চক্করের দিকে ট্রলি টেনে হেঁটে যাওয়ার পথে কথা হয় দু’জন কেনিয়াগামী যাত্রীর সঙ্গে।
তাদের একজন জয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে এমিরেটসের ফ্লাইট ধরবেন তারা। যানজটে পড়ে সিএনজি থেকে কাওলা এলাকায় নেমে হাঁটা শুরু করেন।
জয় বলেন, “দুর্ভোগের কথা আর কী বলবো! দুর্ভোগটা ফিল করেন।”
জাতিসংঘ সফর শেষে আসা প্রধানমন্ত্রীকে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে ‘গণঅভ্যর্থনা’ দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছিল আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলো।
এই কর্মসূচির যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, “তিনি (শেখ হাসিনা) এই দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য যে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, আমরা তাকে কিছু দিতে পারব না। শুধু একটু ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানাব।”
কর্মসূচি নিয়ে তাদের ব্যাপক প্রস্তুতি জনদুর্ভোগের শঙ্কা দেওয়া দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ডিএমপির উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) প্রবীর কুমার রায় বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “যেহেতু আগামীকাল শুক্রবার, তাই অত সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”
ট্রাফিক বিভাগের দুজন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার, ছয়জন সহকারী কমিশনার ও ২৩ জন পরিদর্শকসহ অন্যরা মাঠে থেকে পরিস্থিতি শামাল দেওয়ার কথা বলেছিলেন।
কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শাহজালাল বিমানবন্দরে নামার আগে দুপুরের পর থেকে যানজট দেখা দিতে থাকে। ফার্মগেইট থেকে টঙ্গী পর্যন্ত এলাকায় বিভিন্ন স্থানে চলাচল হয়ে পড়ে ধীর।
বিকাল ৩টার পর থেকেই বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন, প্রধানমন্ত্রীর ছবি ও বেলুন হাতে নিয়ে তারা সড়কের উপরেই উঠে আসেন।
বিকাল সোয়া ৪টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে সহস্রাধিক নেতা-কর্মী সড়কের মধ্যে এলোপাতাড়ি অবস্থান নেয়। সেখানে শাহআলী থানা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দফায় দফায় সড়কজুড়ে মিছিল করতে থাকে।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের নেতৃত্বে এই সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে রাস্তার পাশে না দাঁড়িয়ে সড়কের মধ্যে অবস্থান নেন।
ফলে ওই সড়কে যান চলাচল তখনই প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা সেনানিবাসের জাহাঙ্গীর গেইট থেকে বিজয় সরণির দিকে কোনো গাড়ি আসতে পারছিল না।
একই সময়ে বিজয় সরণি থেকে মিরপুর যাওয়ার পথেও যানজট লেগে যায়। মিরপুর থেকে মহাখালী আসার পথেও যাত্রীদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে।
বিকাল ৪টার দিকে বনানীর কাকলী, খিলক্ষেত, জোয়ার সাহারা থেকে বিমানবন্দরের আশপাশে নেতাকর্মীদের অবস্থান দেখা যায়। তারাও সড়কের মধ্যে উঠে আসায় যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে।
গুলিস্তান থেকে আবদুল্লাপুর চলাচলকারী ৩ নম্বর রুটের বাসচালকের সহকারী ফয়সাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিমানবন্দরের সামনে আমাদের এক ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়েছিল।”
বিমানবন্দর গোলচত্বরে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী সড়কে অবস্থান নেওয়ায় যানজট টঙ্গি পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে প্রধানমন্ত্রী নামার আগেই।
গাজীপুর থেকে ঢাকার দিকে গাড়িগুলোকে আসতে বেশ বেগ পেতে হয়। অন্যদিকে বিমানবন্দরের গোলচত্বরে আটকে থাকায় বিপরীত দিকের অর্থাৎ টঙ্গীমুখী সড়ক ছিল পুরোই ফাঁকা। ফলে গাজীপুর কিংবা টঙ্গীগামী যাত্রীরা কোনো গাড়ি পাচ্ছেন না।
বেলা ২টায় টঙ্গী থেকে রওনা হওয়া আকবর আলী নামেরে একজন ব্যবসায়ী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যানজটের কারণে বিকাল পৌনে ৬টায় মহাখালী পৌঁছেন তিনি।
মহাখালী থেকে মগবাজার যাওয়ার জন্য এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো গাড়ির দেখা না পাননি মোখলেছ মিয়া।
বিরক্তি নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “রাস্তার যে অবস্থা তাতে মগবাজার যাওয়ার গাড়ি পাব কি না বলা যাচ্ছে না। তবে যেভাবেই হোক আমাকে মগবাজার যেতেই হবে।”
কোনো গাড়ি না পেলে বিকাল ৫টার দিকে হেঁটেও গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হন তিনি।
বিকাল ৫টার দিকে আসাদ গেইটের আড়ংয়ের সামনে পুলিশ ব্যারিকেড দেওয়ায় মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে কোনো গাড়ি ফার্মগেইটের দিকে আসতে পারছিল না।
প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর বিমানবন্দর থেকে সাড়ে ৭টার দিকে গণভবনে ঢোকার পর সড়কগুলোর উভয় পাশে যানচলাচল শুরু হয়। কিন্তু তখন অনেক স্থানে অপেক্ষারতরা কোনো বাসই পাচ্ছিলেন না।
প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার আধা ঘণ্টা পরও যানজটের কারণে বনানীর দিকে কোনো গাড়ি পাননি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদক।
তিনি বলেন, দীর্ঘক্ষণ যানজটে বসে থেকে অনেকেই ঘেমে ভিজে যান, বেশিরভাগ যাত্রীকেই ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। সাংবাদিক পরিচয়ে কথা বলতে গেলে কয়েকজন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
উত্তরায় একটি অটোরিকশায় একজন রোগীকে তার পরিবারের সদস্যদের হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে দেখা যায়। এই অটোরিকশার যাত্রীরাও কোনো প্রতিক্রিয়া না দিলেও তাদের চোখ-মুখে বিরক্তির চিহ্ন ছিল স্পষ্ট।
মূল সড়কে যানজটের কারণে উত্তরার বিভিন্ন সড়ক থেকে বিভিন্ন গাড়ির উঠতেই বেগ পেতে হয়।
গত ২২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া হজ থেকে ফেরার পর তার দল বিএনপির একই ধরনের কর্মসূচি থাকায় ব্যাপক যানজটে পড়তে হয় পথচারীদের।
তার একদিন আগে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর জন্য তার সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কর্মসূচিতেও যানজটে নাকাল হতে হয়েছিল রাজধানীবাসীকে।