প্রধানমন্ত্রীর ‘গণঅভ্যর্থনা’, আর নগরবাসীর জানতে চাওয়া

বৃহস্পতিবার বেশ কয়েকটি টেলিফোন এল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কার্যালয়ে; একজন জানতে চাইলেন, শুক্রবার উত্তরা যাওয়া যাবে কি না?

নিজস্ব প্রতিবেদককামাল হোসেন তালুকদারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2016, 03:53 PM
Updated : 29 Sept 2016, 07:08 PM

রাজধানীর উত্তরাংশের এই এলাকায় যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা কী- প্রশ্নের উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন এল রোজিনা চৌধুরী নামে ওই গৃহবধূর- “প্রধানমন্ত্রী আসছেন যে, তিনি কখন আসবেন জানাবেন?”

রোজিনার বাসা ঢাকার মধ‌্যাঞ্চল রমনায়, উত্তরায় বাবা ও ভাইয়ের বাসা। ছুটির দিনে সেখানে বেড়াতে যান তিনি। স্বামী ও তিনি দুজনই চাকরিজীবী বলে শুক্রবার ছাড়া আর সময় হয়ে ওঠে না।

রোজিনার মতো টেলিফোনকারীদের কেউ ছুটির দিনে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল, কারও শুক্রবার পরীক্ষা। বিসিএসসহ ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ‌্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা রয়েছে এদিন।

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সফর শেষে শুক্রবার বিকাল সোয়া ৫টার দিকে শাহজালাল বিমানবন্দরে নামবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে তাকে ‘গণঅভ‌্যর্থনার’ কর্মসূচি রয়েছে তার দল আওয়ামী লীগের।

গত ২২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া হজ থেকে ফেরার পর তার দল বিএনপির একই ধরনের কর্মসূচি থাকায় ব‌্যাপক যানজটে পড়তে হয় পথচারীদের।

তার একদিন আগে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের চেয়ারম‌্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর জন‌্য তার সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কর্মসূচিতেও যানজটে নাকাল হতে হয়েছিল রাজধানীবাসীকে।

ওই অভিজ্ঞতা থেকে বৃহস্পতিবার টেলিফোনকারীদের সবাই জানতে চাইছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ফেরার সময়; যাতে তারা নিজেদের বের হওয়ার সময় সমন্বয় করতে পারেন।

সরকার প্রধান শেখ হাসিনা এর আগে নিজের চলাচলের কারণে সাধারণ মানুষ ও স্কুলশিশুদের যাতে যানজটের দুর্ভোগে পড়তে না হয়, সেজন‌্য পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

তবে এবার তাকে অভ‌্যর্থনা জানাতে তার দলের কর্মসূচিতে যানজটের আশঙ্কা দূর হচ্ছে না নগরবাসীর মাথা থেকে, যদিও ছুটির দিন বলে বড় সমস‌্যা হবে না বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।  

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও ‘গণঅভ‌্যর্থনা’ দেওয়ার সময় সুশৃঙ্খল থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনা মানার জন‌্য ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বিমানবন্দর থেকে খিলক্ষেত, কুড়িল ফ্লাইওভার, হোটেল র‌্যাডিসন, কাকলী মোড়, বনানী, জাহাঙ্গীর গেইট, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বিজয় সরণী, সামরিক জাদুঘর, জাতীয় সংসদ ভবন মোড় ও গণভবন পর্যন্ত রাস্তার দাঁড়িয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানানোর কর্মসূচি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের।

নাগরিকদের আশঙ্কার কথা তুলে ধরলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) প্রবীর কুমার রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেহেতু আগামীকাল শুক্রবার তাই অত সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”

তিনি জানান, তিনিসহ ট্রাফিক বিভাগের দুজন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার, ছয়জন সহকারী কমিশনার ও ২৩ জন পরিদর্শকসহ অন্যরা মাঠে থাকবে যাতে যানজটের ভোগান্তিতে না পড়তে হয় নগরবাসীকে।

রাস্তার সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরে আসার পর উত্তরা থেকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় পর্যন্ত বিকল্প কোনো রাস্তা নেই যে সেখানে গণপরিবহন বিকল্প রাস্তা দিয়ে ডাইভারশন করা যেত।

“তবে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি র‌্যাডিসন পার হওয়ার পর কুড়িল এলাকা দিয়ে গণপরিবহন পাঠানো যাবে।”

গত বছর জাতিসংঘ সফর থেকে ফেরার পর প্রধানমন্ত্রীকে এমন গণঅভ্যর্থনা দেওয়া হয়েছিল। তখন রাজধানীবাসীকে তেমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি বলে দাবি করেন ট্রাফিকের এক সহকারী কমিশনার।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-পশ্চিম) লিটন কুমার দাস বলেন, “গণঅভ্যর্থনা শুক্রবার হওয়াটা ‘পজিটিভ’।”

বিভিন্ন পরীক্ষার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, “সবকিছু মাথায় রেখে পুলিশ সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছে।”

গত ২২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার ফেরার সময় সড়ক আটকে যাওয়ায় যানজটের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছিল রাজধানীবাসীকে

তবে তাতেও আশাবাদী হতে পারছেন না পরীক্ষার্থীদের অনেকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটির এক পরীক্ষার্থী (বাসা আজমপুরে) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরীক্ষা সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রী বিকালে আসলেও নেতাকর্মীরা সকাল থেকে ওইসব রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলেও তো যানজটে পড়তে হবে।”

এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটের ১ হাজার ২৫০ আসনের বিপরীতে ৪২ হাজার ১৪৭ ভর্তিচ্ছু পরীক্ষা দেবে, যাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতরে ও বাইরের মোট ৫৫টি কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে যেতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা হবে এদিন। তার সময়সূচি বিকাল ৩টা থেকে ৪টা। এতে পরীক্ষার্থীর সংখ‌্যা ২৭ হাজার ৮১৬।

জগন্নাথ বিশ্বিবিদ্যালয়ের পরীক্ষা ও গণঅভ‌্যর্থনা বিকালে বলে এই পরীক্ষার্থীদের উদ্বেগ কিছুটা বেশি।

সাঁইত্রিশতম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় শুরু হবে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। ২ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭৬ জন পরীক্ষার্থীর অধিকাংশই এখন পরীক্ষা দিতে ঢাকায় রয়েছেন।

এবারের সফরে ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’ পাওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভ‌্যর্থনা জানাতে ব্যাপক কর্মসূচি আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর।

দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলের নেতা-কর্মী সমর্থক ছাড়াও সর্বস্তরের জনগণকে এই আয়োজনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। 

কর্মসূচির যৌক্তিকতা ব‌্যাখ‌্যা করে বৃহস্পতিবার দলের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “তিনি (শেখ হাসিনা) এই দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য যে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, আমরা তাকে কিছু দিতে পারব না। শুধু একটু ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানাব।”