যুদ্ধাপরাধ: লিয়াকত-আমিনুলের অভিযোগ গঠনের আদেশ ১ নভেম্বর

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের মামলায় হবিগঞ্জের লাখাই থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. লিয়াকত আলী ও কিশোরগঞ্জের আমিনুল ইসলামের বিচার হবে কি না তা জানা যাবে ১ নভেম্বর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2016, 08:25 AM
Updated : 29 Sept 2016, 08:25 AM

বৃহস্পতিবার অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষে বিচারপতি আনোয়ারুল হক নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদেশের এই দিন ঠিক করে দেয়।

এ মামলার আসামি লিয়াকত একাত্তরে ছিলেন মুসলিম লীগের কর্মী। অপর আসামি আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলী ওই সময়ে ছাত্র সংঘের সদস‌্য ছিলেন। তারা দুইজনই পলাতক।

অভিযোগ গঠনের শুনানিতে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন রানা দাশগুপ্ত। তাকে সহায়তা করেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন।

আর পলাতক দুই আসামির পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম শুনানি করেন।

রেজিয়া সুলতানা চমন পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ অভিযোগ গঠনের শুনানি হয়েছে। আগামী ১ নভেম্বর এ বিষয়ে আদেশ হবে।”

গাজী তামিম এক প্রশ্নের জবাবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০০৩ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত লিয়াকত আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। সভাপতি থাকা অবস্থাতেই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১০ সালে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।

গত ১৮ মে এই দুই সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল।

সাত অভিযোগ

প্রথম অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি সেনা সদস‌্য ও রাজাকার বাহিনীর সদস‌্যদের নিয়ে লাখাই থানার কৃষ্ণপুর গ্রামে গণহত্যা, লুটপাট। ওইদিন কৃষ্ণপুর গ্রামে নৃপেণ রায়ের বাড়িতে রাধিকা মোহন রায় ও সুনীল শর্মাসহ ৪৩ জন হিন্দুকে গুলি করে হত্যা।

দ্বিতীয় অভিযোগ: হবিগঞ্জের লাখাই থানার চণ্ডিপুর গ্রামে গণহত্যা ও লুটপাট।

তৃতীয় অভিযোগ: লাখাই থানার গদাইনগর গ্রামে গণহত্যা ও লুটপাট।

চতুর্থ অভিযোগ: অষ্টগ্রাম থানার সদানগর গ্রামে শ্মশানঘাটে হত্যা।

পঞ্চম অভিযোগ: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানার ফান্দাউক গ্রামের বাচ্চু মিয়াকে অপহরণ এবং রঙ্গু মিয়াকে অপহরণ ও হত্যা।

ষষ্ঠ অভিযোগ: অষ্টগ্রাম থানার সাবিয়ানগর গ্রামে চৌধুরী বাড়িতে হামলা চালিয়ে হত্যা

সপ্তম অভিযোগ: সাবিয়ানগর গ্রামে খাঁ বাড়িতে হত্যাকাণ্ড

দুই আসামি

তদন্ত সংস্থার তথ্য অনুসারে, একাত্তরে লিয়াকত ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের ছাত্র ছিলেন। মুসলিম লীগের সদস্য হিসেবে ফান্দাউক ইউনিয়নে রাজাকার বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দীর্ঘদিন পালিয়ে থেকে লিয়াকত পরে এলাকায় ফেরেন এবং আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এক সময় দলটির লাখাই থানা কমিটির সভাপতি হন বলে উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগপত্রে।

বর্তমানে তিনি ওই পদে নেই। মামলার তদন্তকালেই লিয়াকত পালিয়ে যান বলে প্রসিকিউশনের ভাষ্য।

আর কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম থানার আলীনগর গ্রামের রজব আলী ১৯৭০ সালে ভৈরব হাজী হাসমত আলী কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় ইসলামী ছাত্র সংঘের কলেজ শাখার সভাপতি হন।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ভৈরবে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে তিনি অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেন এবং পরে এলাকায় ফিরে আল বদর বাহিনী গঠন করেন।

তদন্ত সংস্থা বলছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আটক হয়েছিলেন রজব। ১৯৭২ সালে তার বিরুদ্ধে দালাল আইনে তিনটি মামলাও হয়েছিল, যাতে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়।

কিন্তু দালাল আইন বাতিলের সুযোগে ১৯৮১ সালে রজব ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হন। পরে ‘আমি আল বদর বলছি’ নামে একটি বইও তিনি প্রকাশ করেন।

ওই বইয়ে রজবের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত অভিযোগের আত্মস্বীকৃতি রয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।