মনেই হয়নি, সব‌্যসাচী কবি চলে যাবেন: প্রধানমন্ত্রী

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীর অনুষ্ঠান আয়োজনের নেতৃত্ব দিয়ে যেতে না পারায় দুঃখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।   

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2016, 05:27 AM
Updated : 29 Sept 2016, 11:00 AM

লেখকের মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী তার জন্মদিনে আনুষ্ঠানিকতার আড়ম্বরও পরিহার করেছেন। জন্মদিনের কেক কাটার সব আয়োজন বাতিল করা হয়েছে তার নির্দেশে।

জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণ শেষে দেশে ফেরার আগে শেখ হাসিনা বুধবার নিজের ৭০তম জন্মদিন কাটিয়েছেন ভার্জিনিয়ায় তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বাসায়।

প্রধানমন্ত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে ওয়াশিংটন ডিসি আওয়ামী লীগের কয়েকশ নেতা-কর্মী জয়ের বাসার কাছে রিটজ কার্লটন হোটেল মিলনায়তনে জড়ো হন।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালি সংস্কৃতির লালন ও বিকাশে আজীবন সোচ্চার থাকা সৈয়দ শামসুল হকের মৃত‌্যুতে গোটা জাতির সঙ্গে তিনি ব্যথিত।

যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সৈয়দ হককে দেখতে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।  সে সময় তিনি লেখকের চিকিৎসার পুরো ব্যয়ভার নেওয়ার ঘোষণা দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১০ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে দেখতে গিয়ে সৈয়দ শামসুল হকের চিকিৎসার পুরো ব্যয়ভার নেওয়ার ঘোষণা দেন।

সেই সাক্ষাতের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী ভার্জিনিয়ার অনুষ্ঠানে বলেন, “উনার সঙ্গে যখন কথা বলি, আমার মনে হয়নি যে উনি চলে যাবেন। উনার এতো মনের জোর ছিল…।

“আমরা জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন করব ২০২০ সালে। আমি ভাবছিলাম উনাকে দিয়েই আমরা এই কমিটিটা করতে চাই। কিন্তু উনি অসুস্থ হওয়ার কারণে আর কমিটি ঘোষণা করতে পারিনি।”

ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত সৈয়দ শামসুল হক মঙ্গলবার বিকালে হাসপাতালে মারা যান। সাহিত্যের সব ক্ষেত্রে সদর্প বিচরণকারী এই লেখকের বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।

তার মৃত‌্যুর খবরে দেশের শিল্প-সাহিত‌্যের অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে বুধবার বিকালে শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠেয় আনন্দ আয়োজন স্থগিত করা হয়। সৈয়দ হক ছিলেন এই জন্মদিন উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক।

এই লেখকের মৃত‌্যুতে মঙ্গলবার এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যু দেশের সাহিত্য সংস্কৃতি জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি। তার কাছে বাঙালি, বাংলাদেশ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এক অভিন্ন সত্তা।

“তিনি তার ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে আমৃত্যু মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তার অসংখ্য কবিতা, প্রবন্ধ ও গানসহ সাহিত্য কর্মগুলো বাঙালি জাতির জন্য ভবিষ্যৎ পাথেয় হয়ে থাকবে।”

প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা

প্রবাসীদের আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সরাসরি মঞ্চে গিয়ে বক্তব্য শুরু করেন শেখ হাসিনা। প্রায় পঞ্চাশ মিনিট বক্তৃতা করেন তিনি।

বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়েও প্রবাসীদের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযেগিতা পাওয়ার কথা স্মরণ করে তিনি অনুষ্ঠানে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

“সঙ্কটের সময় প্রবাসীদের সাহসী ভূমিকার কথা আমি কখনো ভুলব না। সে সব দিনের দুঃসহ স্মৃতি আমাকে গভীর কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ করে প্রবাসীদের কাছে। সে সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ’ খানেক প্রবাসী আমার সহযাত্রী হয়েছিলেন।”  

বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সময়ে বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের চিত্র তিনি প্রবাসীদের সামনে উপস্থাপন করেন এবং তাদের আরও বেশি করে দেশের উন্নয়নে সম্পৃক্ত হতে বলেন।

পাশাপাশি বাংলাদেশের সাফল‌্যের তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস, স্টেট ডিপার্টমেন্টসহ আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে তুলে ধরতে সকল প্রবাসীকে ‘রাষ্ট্রদূতের ভূমিকায়’ অবতীর্ণ হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “চিহ্নিত একটি মহল বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি সহ্য করতে পারছে না। তারাই নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। ওদের অপপ্রচারে যাতে আন্তর্জাতিক মহল বিভ্রান্ত না হয় সে জন্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত সকল প্রবাসীকে সোচ্চার থাকতে হবে।”

বঙ্গবন্ধু হত‌্যাকাণ্ডের বিচার করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে. জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচারসহ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার আইনি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হবে। দেশবিরোধীদের ঠাঁই আর স্বাধীন বাংলাদেশে হবে না।”