জেলা পরিষদে জনপ্রতিনিধিরাই প্রার্থীর প্রস্তাবক-সমর্থক

জেলা পরিষদ নির্বাচনের লক্ষ্যে বিধিমালা তৈরিতে হাত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে প্রার্থীর প্রস্তাবক ও সমর্থক থাকবে জনপ্রতিনিধিরাই।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2016, 06:18 PM
Updated : 28 Sept 2016, 06:19 PM

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনের জন্য বিধিমালা প্রণয়নের ক্ষমতা ইসির হাতে দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী নির্বাচন বিধি ও আচরণবিধির খসড়া প্রস্তুতের কাজ চলছে। অক্টোবরের প্রথম ভাগে খসড়া চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

জেলা পরিষদে প্রথমবারের মতো ভোটের আয়োজন করায় সরকার নির্বাচনের জন্য তারিখ বেঁধে দেবে। নির্ধারিত ওই সময়ের মধ্যে ভোটের তফসিল দেবে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থা ইসি।

৫ সেপ্টেম্বর জারি হওয়া জেলা পরিষদ সংশোধন অধ্যাদেশের আওতায় স্থানীয় সরকারের এ প্রতিষ্ঠানে নির্দলীয় নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনও নির্দলীয়ভাবে এর বিধিমালা প্রণয়ন করতে যাচ্ছে।

নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নির্বাচন পরিচালনার জন্যে বিধিমালা প্রস্তুতের কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে দু’দফা পর্যালোচনা হয়েছে। ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কিছুদিনের মধ্যে খসড়া উপস্থাপনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

“এ ভোটে প্রার্থীদের প্রস্তাবক-সমর্থক হতে হলে তাকে ভোটার হতে হবে। স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরাই এ নির্বাচনে ভোটার। সেক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদেরই প্রার্থীর প্রস্তাবক-সমর্থক হতে হবে-এমন বিধান থাকছে বিধিতে।”

সেই সঙ্গে প্রতি জেলায় একটি করে ভোট কেন্দ্র, ভোটের সময় ও স্থান, ভোটার তালিকাসহ সামগ্রিক নির্বাচন পরিচালনার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা বিধিমালায় থাকছে বলে জানান তিনি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটার হন সংসদ সদস্যরা এবং তাদের প্রস্তাব ও সমর্থন ছাড়া কেউ প্রার্থী হতে পারেন না। জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীর প্রস্তাবক ও সমর্থকের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান অনুসরণ করা হচ্ছে।

২৫ বছর বয়সী বাংলাদেশের যে কোনো ভোটার জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারলেও ভোট দিতে পারবেন না। আর জনপ্রতিনিধিরা ভোটার হলেও প্রার্থী হতে পারবেন না।

আইন অনুযায়ী, প্রতিটি জেলায় স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের ভোটেই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচিত হবেন। প্রতিটি জেলায় ১৫ জন সাধারণ ও পাঁচজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য থাকবেন।

নির্বাচন কমিশন

ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে জেলা পরিষদের সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচনের জন্য ওয়ার্ডের সীমানা নির্ধারণের কাজও চলছে। আর এ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে জেলা সদরে। জেলা পরিষদের ১৫টি ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্রে থাকবে ওই মূল কেন্দ্রেই।

সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ এ নির্বাচন করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা। সেক্ষেত্রে নভেম্বরে তফসিল করতে হবে ইসিকে।

বিদ্যমান অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, পরিষদ প্রথমবার গঠনের ক্ষেত্রৈ সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দিয়ে যে তারিখ নির্ধারণ করবে সে তারিখে ভোট হবে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, তফসিল ঘোষণার ক্ষমতা ইসির হাতে রয়েছে, কমিশনই তফসিল দেবে। প্রথমবার পরিষদ গঠনের পর সরকার ভোটের জন্য সময় নির্ধারিত করে না দিলে বরং অসুবিধা হবে। একবার ভোট হয়ে গেলে পরবর্তীতে মেয়াদ শেষের আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে।

বিধিমালা প্রণয়নের ক্ষমতা ইসির হাতে দিলেও তফসিল ঘোষণার ক্ষমতা রাখা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, “স্থানীয় সরকারের যে কোনো প্রতিষ্ঠান প্রথমবার গঠনের পর সরকারের পক্ষ থেকে একটা সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ওই সময়ের মধ্যে আমরা ভোটের বিস্তারিত সময়সূচি (তফসিল) দেই। পরবর্তীতে আর তার প্রয়োজন হয় না; মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আমরা তফসিল করি।”

নির্বাচন বিধি ও আচরণবিধির খসড়া আইনমন্ত্রনালয়ে পাঠানোর পর অক্টোবরের মধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশ হলে ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট সম্ভব হবে বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা।

তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার।

তাদের মেয়াদপূর্তিতে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা পরিষদ নির্বাচন হবে কি না- এ প্রশ্নে গত ২৯ অগাস্ট মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, “আশা করি।”