বাংলাদেশ জিকার ঝুঁকিতে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

এই মুহূর্তে দেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী না থাকলেও আশপাশের বিভিন্ন দেশে মশাবাহিত এ রোগ ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশেও ঝুঁকির কথা বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2016, 03:17 PM
Updated : 28 Sept 2016, 03:17 PM

বুধবার জাতীয় সংসদের জাসদের এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

নাসিম বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী নেই। তবে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় এবং এদেশে এডিস মশার অস্তিত্ব থাকায় বাংলাদেশও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।”

চলতি মাসের শুরুতে সিঙ্গাপুরে প্রবাসী অধ‌্যুষিত এলাকায় জিকার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্তদের মধ‌্যে ১৯ জন বাংলাদেশিও ছিলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম (ফাইল ছবি)

মশাবাহিত রোগ জিকার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে মাইক্রোসেফালির, যাতে গর্ভবতী নারীরা আক্রান্ত হলে তাদের গর্ভজাত সন্তান ছোট ও অপরিণত মাথা নিয়ে জন্ম নেয়।

গত বছর ব্রাজিল ও আশেপাশের দেশগুলোতে জিকার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর এ বছর ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জিকার কারণে বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে।

গত মার্চে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চট্টগ্রামের এক ব্যক্তির রক্তের পুরনো নমুনায় জিকা ভাইরাসের অস্তিত্ব পেয়েছে জাতীয় রোগ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইইডিসিআর।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ভাইরাস ঠেকাতে হলে মশা নিয়ন্ত্রণে জোর দিতে হবে। আর এ কাজটি করতে হবে প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে; কারণ এডিস মশা ঘরের মধ্যে ফুলদানি বা পাত্রে জমানো পরিষ্কার পানিতে বংশবিস্তার করে।

জিকার লক্ষণ

>> প্রতি পাঁচজন রোগীর মধ্যে একজনের মধ্যে হালকা জ্বর, চোখে লাল হওয়া বা কালশিটে দাগ পড়া, মাথা ব্যথা, হাড়ের গিঁটে ব্যথা ও চর্মরোগের লক্ষণ দেখা যায়।

>> বিরল ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি গিলিয়ান-ব্যারি সিনড্রোমেও ভুগতে পারেন; এর ফলে সাময়িক পক্ষাঘাত কিংবা ‘নার্ভাস সিস্টেম ডিজঅর্ডারের’ মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

>> গর্ভবতী মা মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হলে তার অনাগত শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হতে পারে, মস্তিষ্কের গঠন থাকতে পারে অপূর্ণ। এ রোগকে বলে মাইক্রোসেফালি।

>> এ ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক বা ওষুধ নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিশ্রাম ও বেশি করে তরল খাবার খেতে পরামর্শ দেয়া হয়।

আওয়ামী লীগের সাংসদ মিজানুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ‌্যমন্ত্রী জানান, সিঙ্গাপুরে জিকায় আক্রান্ত ১৯ বাংলাদেশির সবাই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে কর্মস্থলে ফিরে গেছেন।

জিকা আক্রান্ত রোগী যাতে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে- সেজন‌্য স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে ভাইরাস সনাক্তের ‘বিশেষ ব্যবস্থা’ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, “এ পর্যন্ত বিশ্বের ৮৮টি দেশে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এশিয়ার সবকটি দেশই জিকার ঝুঁকিতে রয়েছে।”

# ১৯৪৭ সালে উগান্ডায় প্রথম জিকা ভাইরাস ধরা পড়ে। এতে সচরাচর মৃত্যুর ঘটনা দেখা যায় না। তবে এর লক্ষণও সবসময় স্পষ্ট থাকে না।

# জিকা ভাইরাস ছোঁয়াচে নয়। তবে যৌন সংসর্গের মাধ্যমে জিকা সংক্রমণের কয়েকটি ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সে ধরা পড়েছে।

মো. ইসরাফিল আলমের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম জানান, সরকারি হিসেবে দেশে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ১৪৩ জনের মধ‌্যে এইচআইভি সংক্রমণের তথ‌্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৬৫৮ জনের মৃ‌ত‌্যু হয়েছে।

হাবিবর রহমানের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এক দশমিক ৩৭ শতাংশ। এই হারে বাড়লে ২০২১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা হবে ১৭ কোটি ১৬ লাখ।

জেবুন্নেছা আফরোজের প্রশ্নের জবাবে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, এ বছর সরকারি খরচে ২৮৯ জন হজ করতে সৌদি আরবে গেছেন।

রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে ধর্মমন্ত্রী বলেন, চলতি বছর যেসব হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠবে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমরের প্রশ্নের জবাবে নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, বিআইডব্লিউটিসির মোট ১৯৫টি নৌযান রয়েছে। এর মধ্যে ফেরি ৫০টি, যাত্রীবাহী জলযান ৩৯টি, কোস্টার সাতটি, ট্যাংকার ১২টি, ডাম্ব বার্জ ১২টি, টাগ ১৫টি, সেলফ প্রোপেল্ড বার্জ ছয়টি এবং সহায়ক জলযান ৫৪টি।  

ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পির প্রশ্নে নৌপরিবহন মন্ত্রী জানান, দেশে উদ্ধারকারী জলযান চারটি। এর মধ্যে হামজা ও রুস্তমের সক্ষমতা ৬০ টন এবং নির্ভীক ও প্রত্যয়ের সক্ষমতা ২৫০ টন।