সৈয়দ হকের মৃত্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর শোক

বাংলা সাহিত্যের সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2016, 03:32 PM
Updated : 27 Sept 2016, 04:31 PM

আওয়ামী লীগ ছাড়া বিএনপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ (ইনু) এর পক্ষ থেকে বিবৃতি পাঠিয়ে এই শোক প্রকাশ করা হয়।

ফুসফুসের ক‌্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন লড়াইয়ের মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান লেখক সৈয়দ শামসুল হক।

তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে পাঠানো এক বিবৃতিতে সৈয়দ হককে বাংলা সাহিত্য জগতে এক ‘বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী’ বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

সৈয়দ আশরাফ বলেন, “তিনি (সৈয়দ হক) একাধারে ছোটগল্প, কবিতা, উপন্যাস, কাব্যনাট্য, শিশু সাহিত্য, নাটক, প্রবন্ধ ও সাহিত্যের সব শাখায় সমানভাবে অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশের সব্যসাচী লেখক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।”

সৈয়দ শামসুল হক ‌‘তার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অবদানস্বরূপ স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন’ স্মরণ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সাহিত্যের সব শাখায় সাবলীল পদচারণার জন্য বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন সৈয়দ হক।

বিবৃতিতে সৈয়দ হকের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনাও প্রকাশ করে সৈয়দ আশরাফ।

সৈয়দ হকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “সমকালীন বাংলা কবিতা ও বহুমাত্রিক সৃষ্টিশীলতার এক সর্বাগ্রগণ্য কবি সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যু আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল, যা সহজে পূরণ হবার নয়।

“তার সাহিত্য কর্ম তাকে অমর করে রাখবে।”

কবির আত্মার মাগফেরাত কামনার পাশাপাশি কবির শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন বিএনপি মহাসচিব।

দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের সক্রিয় অংশ নেওয়ার কথাও স্মরণ করেন মির্জা ফখরুল।

বাংলা সাহিত্যকে বিশেষ উচ্চতায় নিয়ে যেতে সৈয়দ শামসুল হকের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে বলে এক শোক বিবৃতিতে মন্তব্য করেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

বিবৃতিতে সিপিবি সভাপতি সেলিম আরও বলেন, “স্বনামধন্য এই সাহিত্যিকের মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্যের যে ক্ষতি হলো, তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়।”

সৈয়দ শামসুল হক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭০তম জন্মদিন উদযাপন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। আগামী বুধবার প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন, যার একদিন আগে না ফেরার দেশে চলে গেলেন খ্যাতিমান এই লেখক।

এক শোক বিবৃতিতে এ বিষয়টির প্রসঙ্গ টেনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, “মাত্র একদিন আগে তার মৃত্যু কেবল দুঃখজনক নয়, বেদনাদায়কও বটে। তার মৃত্যুতে শিল্প-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হলো।

“জনাব শামসুল হক আমৃত্যু অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের একজন সাহসী সাংস্কৃতিক যোদ্ধা ছিলেন। জাতি সৈয়দ শামসুল হকের অভাব স্মরণ করবে।”

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের অবদান বাঙালি জাতি তার লেখনীর মাধ্যমেই চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে বলে এক শোক বিবৃতিতে বলছে হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদ।

জাসদ সভাপতি তথ‌্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার শোক জানিয়ে এ বিবৃতি দেন।

সাহিত্যের সব ক্ষেত্রে সদর্প বিচরণকারী সৈয়দ হকের বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। লেখালেখির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও সক্রিয় ছিলেন তিনি।

মঙ্গলবার বিকালে শেষ নিঃশ্বাস ছাড়ার পর সব্যসাচী এই লেখকের মরদেহ রাত ৮টার দিকে তার গুলশানের বাড়িতে নেওয়া হয়। এসময় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর সেখানে ছিলেন।

এসময় সৈয়দ শামসুল হক ‘আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক মানুষ’ ছিলেন মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী ইনু সাংবাদিকদের বলেন, “তিনি সারা জীবন তার লেখনীর মাধ্যমে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলে গেছেন। আমরা চাই এই বাংলাদেশকে আমরা লেখক, কবি, সংস্কৃতিকর্মীদের জন্য জঙ্গিমুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে।”

এদিকে সব্যসাচী এই লেখকের মৃত্যুতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ও আলাদা বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করেছে।