পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার ফারুক ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ‘হোতা’

পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার জেএমবি সদস‌্য আনোয়ার হোসেন ফারুকই ত্রিশালে প্রিজন ভ‌্যান থেকে আসামি ছিনতাইয়ের ‘হোতা’ ফারুক হোসেন ওরফে জামাই ফারুক বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2016, 10:15 AM
Updated : 27 Sept 2016, 12:48 PM

তিনি বলেছেন, ভারতে দুদিন আগে গ্রেপ্তার ছয় জঙ্গির মধ‌্যে আর কেউ বাংলাদেশি থেকে থাকলে আসামি প্রত্যার্পণ চুক্তির আওতায় তাদের ফিরিয়ে আনা হবে।

মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কামাল সাংবাদিকদের বলেন, “সেই ফারুক যদি হয়ে থাকে, তাহলে আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে, ২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজনভ্যান থেকে কনস্টবলকে হত্যা করে পালিয়ে গিয়েছিল জঙ্গিরা। সে ঘটনার হোতা ফারুক। তার নামে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।”

কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স গত শনি ও রোববার পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম থেকে ফারুকসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে, যাদের মধ‌্যে চারজন ২০১৪ সালে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। 

ভারতীয় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, আনোয়ার হোসেন ফারুক ওরফে ইনাম জেএমবির পশ্চিমবঙ্গ শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বনগাঁওয়ের বাগদা রোড থেকে রোববার তাকে আটক করে পুলিশ।

ওই ছয়জনের কাছ থেকে বিস্ফোরক, ডেটোনেটর, জাল পরিচয়পত্র, ল‌্যাপটপ, মোবাইল ফোন এবং বাংলাদেশি ও ভারতীয় মুদ্রা পাওয়া গেছে বলেও জানানো হয় কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সে যদি হয়ে থাকে আমাদের কাছে একটা গুরুত্বপূর্ণ খবর। আমরা যতটুকু জেনেছি সেই (ফারুক) ধরা পড়েছে।”

তবে ভারত এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো তথ‌্য দেয়নি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “সেজন‌্য আরও অপেক্ষা করতে হবে। এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আসবে।”

২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যা করে জেএমবির শুরা সদস্য রাকিবুল হাসান ও সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি (৩৮) এবং বোমা বিশেষজ্ঞ মিজানকে (৩৫) ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

পালানোর পথে ওইদিনই মির্জাপুরে গ্রেপ্তার হন রাকিবুল হাসান। পরে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন তিনি। বাকি দুজনের কোনো খোঁজ না পেয়ে বাংলাদেশের পুলিশ তাদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে।

পরের বছর বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনায় জেএমবির নাম আসার পর তদন্ত করতে ঢাকায় আসে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ- এর একটি প্রতিনিধি দল। সে সময় বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে সন্দেহভাজনদের নামের একটি তালিকা দেন তারা, যাতে সানি, মিজান ও ফারুকের নামও আসে।

গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা সে সময় বলেছিলেন, জেএমবির একটি অংশের নেতা মাওলানা সাঈদুর রহমান কারাগারে থাকায় ওই অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ‘জামাই ফারুক’। তিনিই ত্রিশালে জঙ্গী ছিনতাইয়ের মূল পরিকল্পনায় ছিলেন বলে পুলিশের সন্দেহের কথাও বলা হয় সে সময়।

কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গ্রেপ্তার ছয় জঙ্গি পূর্ব ও উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে জেএমবির স্লিপার সেল চালাচ্ছিল। তারা সেখানে হামলার পরিকল্পনা করছিল বলেও তদন্তকারীদের ধারণা।

গ্রেপ্তার ওই ছয়জনের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশি বলে কয়েকটি পত্রিকার খবরে বলা হয়।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “আমাদের সঙ্গে ভারতের একটা চুক্তি হয়েছে যে কোনো ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি সেখানে পালিয়ে গিয়ে থাকলে আমাদের ফেরত দেবে। বাকি দুজনের বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে তারাও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ছিল বলে শুনেছি।”