পথশিশুদের যৌন নির্যাতনের ঘটনায় ‘উদাসীন’ পুলিশ

কোনো পথশিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হলে তার প্রতিকার চেয়ে রাজধানীর শাহ আলী থানার পুলিশের কাছে গেলে সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গোলাম মুজতবা ধ্রুব নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2016, 06:16 PM
Updated : 26 Sept 2016, 06:20 PM

রাজধানীতে সোমবার এক মতবিনিময় সভার পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ অভিযোগ করেন শিশুদের যৌনতায় বাধ্য করা প্রতিরোধে কাজ করা একটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামান।

তবে এ ধরনের অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন পুলিশের মিরপুর জোনের উপ-কমিশনার।

রাজধানীর তোপখানা রোডে বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে ‘যৌন শোষণে ঝুঁকিগ্রস্ত শিশুদের মর্যাদাপূর্ণ জীবন পুনর্গঠন, সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত’ করতে ওই মতবিনিময় সভা হয়। 

বেসরকারি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘তেরে দেস হোমস নেদারল্যান্ডস’ এর কারিগরি সহায়তায় ‘কমব্যাটিং কমার্শিয়াল সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেশন অব চিলড্রেন (সিসিসেক)’ প্রকল্প সভাটির আয়োজন করে।    

‘সিসিসেক প্রজেক্ট কনসোর্টিয়ামের’ প্রকল্প ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান বলেন, “কোনো শিশু হয়রানির শিকার হয়েছে- এমন অভিযোগ পেয়ে তাকে নিয়ে গেলে শাহআলী থানা পুলিশ প্রয়োজনীয় সহায়তা করে না।”

নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করে তিনি বলেন, “গত মাসে এক শিশু ধর্ষিত হওয়ার পর শাহ আলী থানায় নিজে গিয়েছিলাম। পুলিশ সেখানে সহায়তা করেনি।

“পুলিশের কাছে গেলে তারা বলে, ‘আপনারা সকালে শিশুদের নিজেদের কাছে রাখেন, আর রাত হলে তাদের দিয়েই ব্যবসা করান’।”

মতবিনিময় সভায় অংশ নিতে আসা মিরপুর শাহ আলী মাজার এলাকার ১৩ বছর বয়সের এক পথশিশুও একই অভিযোগ করে।

সে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলে, “আমার বাবা-মা নাই। দিনে স্যার গো সেন্টারে (সিসিসেক কার্যালয়) থাকি। রাতে থাকি মাজারের এলাকায়। ওইখানে অনেক পোলাপান আমাগো খারাপ কথা কয়। তারা আমাগো লগে খারাপ কাজ করে জোর কইরা। পুলিশরে কইতে গেলে তাগো পুলিশ কিসু কয় না।”

 “আমাগো একটা ভাল থাকার ব্যবস্থা কইর‌্যা দেন স্যার,” বলে আকুতি জানায় শিশুটি।

প্রতীকী ছবি

মিরপুর মাজার এলাকায় ৩০ থেকে ৪০ জন মেয়ে শিশু রাস্তায় রাত কাটায় বলে জানায় সভায় অংশ নিতে আসা আরেকটি শিশু।

সে বলে, “প্রত্যেক রাইতেই পোলাপান আমাগো বিরক্ত করে। খারাপ কাজ করতে বাধ্য করে। আমরা শান্তিতে একটা রাইত ঘুমাইতে পারি না।”

মনিরুজ্জামান বলেন, তিনি শাহ আলী থানায় সহায়তা না পেয়ে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘হেল্প সেন্টারে’ ফোন করে জানিয়েছিলেন। সেখান থেকে পুলিশকে ফোন করার তারা সাহায্য করেছিল।

এদিকে কোনো নারী বা শিশু কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়ে কাছে এসে সাহায্য পায়নি- এমনটি হয়নি বলে দাবি করেন ডিএমপির মিরপুর জোনের উপ-কমিশনার মাসুদ আহমেদ।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নিয়ে পুলিশের কাছে কেউ আসলে অবশ্যই আইন অনুযাযী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

যৌন কর্মে বাধ্য করা শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে তাদের খাদ্য, শিক্ষা ও মানসিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের বিনোদনের ব্যবস্থা করে থাকে সিসিসেক। রাজধানীর মিরপুর ও টাঙ্গাইল জেলায় সিসিসেক প্রকল্পের দুটি কার্যালয় রয়েছে।

মিরপুরে শিশুরা সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অবস্থান করতে পারেন। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে দুপুরে খাওয়ার আয়োজনও করা হয়।

এক বছর আগে শুরু হওয়া সিসিসেক প্রকল্পের প্রথম দিকে শিশুদের রাতে থাকার ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে সেই সুযোগ নেই। বর্তমানে প্রকল্পটির ‘সেন্টারে’ ৮৬ জন রেজিস্ট্রার্ড শিশু রয়েছে, যাদের মধ্যে ২০/২২ জন শিশু নিয়মিতই সারা দিন সেন্টারে থাকে।

ভবিষ্যতে শিশুদের আবার রাতে থাকার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান প্রকল্প ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান।