বাকি জঙ্গিদের লাশও আঞ্জুমানকে দেওয়া হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বজনদের কেউ দাবি নিয়ে না এলে গুলশান হামলার জঙ্গিদের মত বাকি জঙ্গিদের লাশও দাফনের জন্য আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামকে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2016, 09:57 AM
Updated : 26 Sept 2016, 04:29 PM

স্বজনদের কেউ দাবি নিয়ে না এলে গুলশান হামলার জঙ্গিদের মতো বাকি জঙ্গিদের লাশও দাফনের জন্য আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামকে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব, এর মধ্যে যদি কোনো স্বজন না আসে তাহলে বাকি মৃতদেহগুলো আঞ্জুমানকে দাফনের জন্য দিয়ে দেওয়া হবে।”

গত ১ জুলাই গুলশানের অভিজাত এলাকা গুলশানের হলি আর্টিজান ক্যাফেতে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। তাদের ঠেকাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা।

প্রায় ১২ ঘণ্টা পর সশস্ত্র বাহিনী অভিযান চালিয়ে ওই ক্যাফের নিয়ন্ত্রণ নেয়। সে সময় নিহত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে জেএমবি সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করে পুলিশ।

নিহত পাঁচ জঙ্গির মধ্যে নিবরাজ ইসলাম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। আর রোহান ইবনে ইমতিয়াজ পড়তেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে। মীর সামিহ মোবাশ্বের স্কলাস্টিকার সাবেক ছাত্র।

এছাড়া বগুড়ার ধুনট ‍উপজেলার কৈয়াগাড়ি গ্রামের শফিকুল ইসলাম উজ্জল এবং শাহজাহানপুর উপজেলার খায়েরুজ্জামান মাদ্রাসা ছাত্র ছিলেন।

দুই মাস ২২ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের হিমঘরে রাখার তাদের লাশ গত ২২ সেপ্টেম্বর বেওয়ারিশ হিসেবে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।

মন্ত্রী বলেন, “মৃতদেহগুলো দাফনের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের বারবার তাগাদা দিচ্ছিল। আমরা অপেক্ষা করেছি, কোনো স্বজন আসেননি। মিডিয়ার মাধ্যমে দেখতে পেয়েছি, এক জঙ্গির বাবা ঘৃণা-ক্ষোভ-দুঃখ নিয়ে বলছিলেন- ছেলের লাশ তিনি গ্রহণ করবেন না।”

গুলশান হামলার ২৫ দিন পর দেশব্যাপী জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মধ্যে গত ২৬ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুরে একটি বহুতল ভবনে পুলিশের বিশেষ বাহিনী সোয়াটের অভিযানে নিহত হন নয়জন জঙ্গি।

এই ভবনের পঞ্চম তলায় জঙ্গিরা আস্তানা গেঁড়েছিল

এদের মধ্যে আটজনের পরিচয় নিশ্চিত করেছে পুলিশ। তারা হলেন- ঢাকার গুলশানের আকিফুজ্জামান খান (২৪), বসুন্ধরার সেজাদ রউফ অর্ক (২৪), ধানমন্ডির তাজ-উল-হক রাশিক (২৫), রংপুরের পীরগাছার রায়হান কবির নাঈম (২৪) এবং নোয়াখালীর জোবায়ের হোসেন (২২)।

এদের মধ্যে আকিফুজ্জামান বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী মোনায়েম খানের নাতি। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন তিনি। তার সঙ্গে নিহত ঢাকার অন্য দুজন সেজাদ রউফ এবং তাজ-উল-হক রাশিকও বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র ছিলেন।

প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান আব্দুর রউফের নাতি সেজাদ যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী। গত ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ এই যুবক গুলশানে ক্যাফেতে হামলাকারী নিবরাজ ইসলামের বন্ধু ছিলেন।

আর রায়হান, আব্দুল্লাহ ও নাঈম পড়াশোনা করেছেন মাদ্রাসায়। জোবায়ের ছাত্র শিবিরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে তার বাবা জানিয়েছেন।

কল্যাণপুর অভিযানের মাস খানেক পর গত ২৭ অগাস্ট নারায়নগঞ্জের পাইকপাড়ার একটি বাসভবনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হন তামিম চৌধুরী, যিনি ‘নব্য জেএমবি’র শীর্ষ নেতা ছিলেন বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

কানাডার পাসপোর্টধারী তামিম চৌধুরীর সঙ্গে ওই অভিযানে আরো নিহত হন আরো দুই জঙ্গি। এদের একজন যশোর এমএম কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ফজলে রাব্বি এবং অন‌্যজন ঢাকার ধানমন্ডির তাওসীফ হোসেন।

নিবরাজ, সেজাদ এবং তাওসীফ একই সময়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন বলে তাদের পরিবারের ভাষ্য।

এরপর গত ২ সেপ্টেম্বর মিরপুরের রূপনগরের একটি বাসায় পুলিশের অভিযানে এক জঙ্গি নিহত হন। মুরাদ ওরফে মেজর মুরাদ নামের ওই জেএমবি সদস্য সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে পুলিশি অভিযানে নিহত নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরীর ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ ছিলেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

সর্বশেষ গত ১০ সেপ্টেম্বর বিজিবি সদর দপ্তরের ২ নম্বার গেইটের কাছে আজিমপুরের একটি বাড়িতে অভিযানের সময় নিহত হন নব্য জেএমবির আরেকজন জ‌্যেষ্ঠ সংগঠক তানভীর কাদেরি।

এদের সবার মৃতদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মর্গের এক কর্মচারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, ১২টি মরচুয়ারিতে এই ১৪ জনের লাশ রাখা আছে।