গম্ভীরায় ক্ষোভ-জাদুঘরের দাবি

গম্ভীরা, আলকাপ, কাহানি, ঝার্ণিখেলাসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের গ্রামীণ ঐতিহ্য এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন নানা ইতিহাস সংরক্ষণে জেলাটিতে একটি জাদুঘর নির্মাণের দাবি উঠেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2016, 03:34 PM
Updated : 25 Sept 2016, 04:01 PM

চাঁপাইনবাবগঞ্জের লোকজ ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রসারে কাজ করে যাওয়া ‘দিয়াড়’র প্রথম বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে এসে এ দাবি করেন ওই জেলা থেকে উঠে আসা সংস্কৃতিকর্মীরা।

রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

মন্ত্রীকে পেয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী গম্ভীরা পরিবেশনের মধ্য দিয়ে ক্ষোভের পাশাপাশি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার আকুতি জানান তারা। 

জেলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিস্তারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি কার্যত কোনো ভূমিকা রাখছে না বলে অভিযোগ করেন তারা।

জেলা শিল্পকলা একাডেমিকে ‘আঁইঠা কলা’র ব্যঙ্গাত্মক উপস্থাপনে অবিলম্বে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়।

চাঁপাইয়ের আদি গম্ভীরা দলটি ‘নানা-নাতি’ চরিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরে জেলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথা।

দলটি তাদের পরিবেশনার মাধ্যমে বলে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি গম্ভীরা গানের নানা আসর আয়োজন করলেও সেখানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রখ্যাত গম্ভীরা গায়ক কুতুবুল আলম, রকিবউদ্দীনকে স্মরণ করে না। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গানের বিস্তারে তাদের ‘যথেষ্ট অবদান’ থাকলেও শিল্পকলা একাডেমিতে তাদের স্মরণে কোনো ছবি বা ম্যুরাল না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

তাদের দাবি, শিল্পকলা একাডেমিতে তাদের ছবি স্থাপনের পাশাপাশি চাঁপাইনবাবগঞ্জে তাদের স্মরণে প্রতি বছর একটি গম্ভীরা উৎসব আয়োজন করা হোক, যাতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতা থাকবে।

প্রখ্যাত নাট্যকার মমতাজউদদীন আহমদ ও চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী চাঁপাইয়ের সন্তান। তাদের নামে এলাকায় কোনো সড়ক না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেন সংস্কৃতিকর্মীরা।

একইসঙ্গে জেলার সংস্কৃতি চর্চার বিস্তারে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে থোক বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

পরে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা চেয়ে বলেন, “সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বাজেট ঘাটতি রয়েছে, স্বল্পতা রয়েছে। তবুও তা সত্ত্বেও সরকার সংস্কৃতিচর্চাকে বেগবান করতে যে অবদান রেখে চলেছে, তা এর আগে কোনো সরকার করেনি।”

দেশের সংস্কৃতিকর্মীরা নিজেদের পকেটের পয়সা খরচ করে সংস্কৃতিচর্চাকে ‘বাঁচিয়ে রাখছে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“এই অদৃশ্য বাজেট আছে বলেই সংস্কৃতি এখনো অনেক প্রাণবন্ত,” বলেন মন্ত্রী।

‘দিয়াড়’র আহ্বায়ক মুখলেসুর রহমান মুকুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মমতাজউদদীন আহমদ ও রফিকুন নবী বক্তব্য রাখেন।

পরে শিক্ষাক্ষেত্রে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ অবদানের জন্য শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহম্মদ এলতাসউদ্দীনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

আয়োজকরা জানান, আগামী ডিসেম্বরে ঢাকার শিল্পকলা একাডেমিতে গম্ভীরা উৎসব হবে। সেখানে জেলার ১০টি গম্ভীরা গানের দল অংশগ্রহণ করবে।