চারুকলায় চলছে ‘বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের শিল্পকর্ম নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2016, 03:13 PM
Updated : 25 Sept 2016, 03:13 PM

রোববার বিকালে চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বিভাগের শিক্ষার্থীদের ৬১টি চিত্রকর্ম নিয়ে হচ্ছে এই উৎসব।

আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “বর্তমানে আমরা একটি সংকটময় সময় পার করছি, যা নিরসনে শিল্পীসমাজের ভূমিকা রয়েছে। কারণ ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলার চেয়ে একটি ছবি মানুষকে বেশি আকৃষ্ট করতে পারে। শিল্পী সমাজের সৃষ্টিশীল চিন্তা সবাইকে অনুপ্রাণিত করবে, পথ দেখাবে।”

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগের (আর্ট অ্যান্ড পেইন্টিং) সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক রফিকুন নবী বলেন, “বার্ষিক প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়াটাই বড় কথা। পুরস্কার পাওয়াটা মুখ্য বিষয় না। যাদের ছবি এ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে, তাদের জন্য এটি মাইলফলক। এখান থেকে এসব শিক্ষার্থীদের শিল্পী হওয়ার পথে এগিয়ে চলা শুরু হবে।”

চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন বলেন, “এবার প্রদর্শনীর জন্য ছবি কম জমা পড়েছে। ফলে মনে হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের কাজের উন্মুখতা কমে গেছে, অনেকগুলো কাজ ভালো হয়নি। ফলে সংখ্যা না বাড়িয়ে মানসম্পন্ন ছবিগুলোই এ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে।”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ১০ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কার দেওয়া হয়। বিভাগের সব মাধ্যমের সেরা হয়ে ‘শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন’ পুরস্কার পেয়েছেন শেখ ফায়জুর রহমান।

পেন্সিল মাধ্যমে সেরা পুরস্কার পেয়েছেন ভুটানের শিক্ষার্থী উজ্ঞেন শ্রিং ও ‘শহীদ শাহনেওয়াজ মেমোরিয়াল পুরস্কার’ পেয়েছেন সৈকত সরকার। জলরঙে সেরা পুরস্কার পেয়েছেন প্রসহৃন হালদার। তেলরঙে সেরা পুরস্কার পেয়েছেন মৃণাল ভৌমিক, ‘দেলোয়ার হোসেন মেমোরিয়াল পুরস্কার’ পেয়েছেন পূর্ণিয়া মৃত্তিকা। ‘মাহবুবুল আমিন মেমোরিয়াল পুরস্কার’ পেয়েছেন জয়ন্ত মণ্ডল।

পরীক্ষামূলক কাজের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন আফিয়া আবিদা সুলতানা, কাজী আব্দুল বাসেত মেমোরিয়াল পুরস্কার পেয়েছেন ইমতিয়াজ ইসলাম ও কাজী আনোয়ারুল হক মেমোরিয়াল পুরস্কার পেয়েছেন সুনন্দা রানী বর্মন।

ঢাকার অন্যতম প্রবেশপথ গাবতলীর একটি দৃশ্য নিয়ে ‘গাবতলী ব্রিজ’ শিরোনামে ধারবাহিক চিত্রকর্ম এঁকেছেন শেখ ফায়জুর রহমান। তার একটু পাশেই মৃণাল ভৌমিকের ‘ওল্ড টাউন’ শিরোনামের চিত্রকর্মে উঠে এসেছে পুরাতন কোনো শহরের যাপিত জীবনের খণ্ডাংশ।

জয়ন্ত মণ্ডলের ‘ট্রেন’ শিরোনামের চিত্রকর্মে তুলে ধরা হয়েছে ট্রেনের নিত্যদিনের ছুটে যাওয়া। পূর্ণিয়া মৃত্তিকার ‘এন্ডিং এক্সটেন্স’ শিরোনামের ছবিতে দেখা গেল একটি দরজা, যার চারপাশ নানাভাবে আবদ্ধ।

ভুটানের শিল্পী উজ্ঞেন শ্রিং চারুপাঠের জন্য এদেশে এসেছেন। তুলিতে তিনি তুলে এনেছেন এদেশের পুরোনো এক ভবনকে, যার চারপাশ ভেঙে পড়ছে। দেয়াল ভেদ করে বেরিয়ে আসা আগাছাও উঠে এসেছে পেন্সিলের ছোঁয়ায়। চমৎকার এ চিত্রকর্মের শিরোনাম ‘ব্রোকেন ট্যাডিশন’।

প্রসূন হালদারের ‘ওল্ড মোটরসাইকেল’ শিরোনামের ছবি বাইকপ্রেমীদের মনে করিয়ে দেয় ফেলে আসা দিনগুলোর কথা, যখন ৮০ সিসির ‘ইয়ামাহা’ বাইক ছুটে বেড়াত পিচঢালা পথ ধরে।

আরেক গ্যালারিতে দেখা মিলবে নিরীক্ষামূলক নানা ছবির।

‘নেরোনেস অব মাইন্ড’ শিরোনামে আফিয়া আবিদা সুলতানার পুরস্কারজয়ী ছবিটি বলছে, মনের নানা ভাবনার কথা। তাসলিমা আক্তার শেফার ‘ব্যালেন্স অব হিউম্যান ক্যারেক্টার’, প্রীতম হাসানের ‘সার্চিং মাইসেলফ’, সৈয়দা রেহনুমা হাসানের ‘কেমোফ্লেজড ফেসিয়াল’ ছবিগুলোতে তুলে আনা হয়েছে মানবপ্রকৃতির নানা রূপ, যে রূপ কখনও ইতিবাচক, কখনও আবার ভীষণ নেতিবাচক হয়ে জাগায় ভীতি।

মিশকাতুল আবীরের ক্যানভাসে ফুটে উঠেছে শিল্পীসত্ত্বার এক অপরূপ চিত্র। ‘ব্লাইন্ড আর্টিস্ট’ শিরোনামের ছবিতে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন দুই অন্ধ চিত্রশিল্পীর গল্প।

হোসেইন আল বান্নার ‘অ্যাডিকশন’ ছবিতে যন্ত্র আসক্তির কথা যেমন এসেছে, তেমনি আবার ফেলে দেওয়া জঞ্জালকে শিল্পকর্মে রূপ দিয়েছেন কেউ কেউ। কারও ছবিতে ফুটে উঠেছে গ্রাম-বাংলার প্রকৃতি আর নিসর্গের কথা, কারও ক্যানভাসে আবার দীপ্তমান হয়েছে কৈশোর।

ছয় দিনের এ বার্ষিক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এ প্রদর্শনী।