ইউনেস্কোর উদ্বেগের জবাব আগামী সপ্তাহে: প্রতিমন্ত্রী

সুন্দরবনের পাশে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে ইউনেস্কো যে উদ্বেগ জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে সে বিষয়ে জবাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2016, 08:33 AM
Updated : 25 Sept 2016, 08:33 AM

রোববার বিদ্যুৎ ভবনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে গবেষণা বিষয়ক এক কর্মশালার উদ্বোধনী শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা মনে হয় আগামী সপ্তাহের মধ্যে ইউনেস্কোর জবাবটা দিয়ে দেব।”

ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের কাছে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ উদ্যোগে ‘মৈত্রী সুপার পাওয়ার থারমাল’ বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে।

বাংলাদেশে কয়েকটি নাগরিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতা করলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি না করেই এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে।

এরই মধ্যে কয়েকটি সংবাদপত্রে খবর এসেছে, ইউনেস্কো উদ্বেগ জানিয়ে এ প্রকল্প বাতিল করার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়েছে।

ইউনেস্কো শুধু রামপাল নিয়ে নয়, অন‌্য বিষয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

“আমাদের নদীর ব্যাপারগুলো এসেছে, এই উদ্বেগগুলো গুরুত্ব সহকারে দেখছি এবং সেভাবে জবাব তৈরি করছি।

“এখানে কিছু টেকনিক্যাল বিষয় আছে, যেগুলো আমাদের জানাতে হবে। এই টেকনিক্যাল বিষয়গুলো ইউনেস্কো জানতে পারলে… এর আগেও জানিয়েছি, এখন আমরা ডিটেইল জানাচ্ছি। তাদের যে আশঙ্কা্ আছে, তা যেন না থাকে, আমরা কীভাবে টেকিনিক্যাল ব্যাপারগুলো মিট করছি, সেগুলো তাদের জানানো প্রয়োজন।”

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ইউনেস্কোর আশঙ্কা থাকতে পারে, অনেকেরই আছে, ইউনেস্কোকে আমাদের বক্তব্যটা দিতে পারলে হয়ত তারা বুঝবে যে তা সঠিক নয়।”

তিনি প্রশ্ন করেন, “সরকার অ‌্যানালাইসিস করে দুই বিলিয়ন ডলারের রিস্ক নিতে যাচ্ছে? কেন সরকার এমন কাজ করবে যাতে দুই বিলিয়ন ডলারের রিস্ক নিয়ে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে?”

এই বিদ‌্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে ‘শঙ্কার কিছু নেই’ বলে আশ্বস্ত করে নসরুল হামিদ বলেন, “উন্নত প্রযুক্তিতো আমার কেউ দেখিনি। যতক্ষণ পর্যন্ত না দেখা হবে স্বচক্ষে, ততোক্ষণ পর্যন্ত আমরা ভাবব- ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে।”

যারা এর বিরোধিতা করছেন, তাদের আবেগ দিয়ে কথা না বলে যুক্তি উপস্থাপন করার আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী।

দেশের উন্নয়ন পিছিয়ে দেওয়ার জন্যও রামপাল নিয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“যে ডেভেলপমেন্টের দিকে দেশ এগোচ্ছে, যেভাবে আমারা বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করতে পারছি, হতে পারে অনেকে হয়ত এই ডেভেলপমেন্ট পিছিয়ে ‍দিতে চাচ্ছে।

“অনেকে নিজেরাও বুঝতে পারছেন না, তারা সেই রাজনীতিতে ঢুকে যাচ্ছেন। আমরা তো ঢাকা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে গজারিয়াতে কোল প্ল্যান্ট করছি, ওটা নিয়ে তো কেউ উদ্বিগ্ন হচ্ছে না।”

সরকার সব ধরনের সতর্কতার কথা মাথায় রেখেই এগোচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “কেউ যদি সায়েন্টিফিক ব্যাখা দিয়ে বলেন- যে পথে আমরা যাচ্ছি, সেটা সায়েন্টিফিকভাবে ভুল, সেটাও আমরা নিতে চাই, এখনো নিতে চাই।” 

প্রতিবছর নতুন করে এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ‌্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা তৈরি করতে সরকার কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আর লোড শেডিংয়ে যেতে চাই না, ২০১৮ সালের মধ্যে সব জায়গায় বিদ্যুৎ দিতে চাইছি। মিশ্র ফুয়েলে যেতে হবে, আমাদের কয়লা আনতেই হবে।”

জ্বালানি খাতকে ‘স্বাবলম্বী করতে’ সরকার শেয়ার মার্কেটে যাবে, বন্ড চালু করবে এবং ভবিষ্যতে বাজেটগুলোতে এ বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ থাকবে বলে প্রতিমন্ত্রী জানান।