এক প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সিআইডি প্রতিটি মামলার তদন্ত সূক্ষ্মভাবে করে থাকে। প্রত্যক্ষ সাক্ষী, সুস্পষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া সিআইডির কাজ।
“কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে হলে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ থাকতে হবে। সাইফুল হত্যা মামলায় ইমরানকে গ্রেপ্তার বা তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার মতো এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি।”
তদন্ত কর্মকর্তার এই বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম রিন্টু।
এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ তুলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার সামনে ইমরানের নির্দেশে সাইফুলকে হত্যা করা হয়েছিল। আর সিআইডির এই তদন্ত কর্মকর্তা তো এখন পর্যন্ত আমার সঙ্গে কথাই বলেননি।”
ইমরান এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক, কুমিল্লা চেম্বার অফ কমার্সের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য। তাছাড়া কুমিল্লা চেম্বারের বর্তমান সভাপতি এবং এই জেলায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আফজাল খানের ছেলে।
যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকা ইমরানকে জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের সঙ্গে বিভিন্ন ছবিতে দেখা গেছে। তিনি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনেও বাংলাদেশের প্রতিনিধি কার্ড নিয়ে দর্শক সারিতে ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। অধিবেশন কক্ষে সেলফিতেও দেখা গেছে ইমরানকে।
তদন্ত কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন বলছেন, ইমরানের যুক্তরাষ্ট্র সফরের খবর সংবাদ মাধ্যম থেকে জেনেছেন তিনি।
“ইমরান ব্যবসায়ী দলের হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন এটা শুক্রবার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জেনেছি।”
“কে কোন মামলার আসামি আমাদের জানার কথা নয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে লিখিতভাবে জানালে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।”
কারও বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ থাকলে তাকে আটকে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হন্তান্তর করা হয় বলে জানান মানসুর আলম।
“ইমরানের ক্ষেত্রে এমন কিছু পাওয়া যায়নি। পেলে অবশ্যই আমাদের কেউ না কেউ ব্যবস্থা নিতেন। এর ব্যতিক্রম হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”
তার এভাবে বিদেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের সঙ্গে ছবি তুলে ফেইসবুকে দেওয়াকে গ্রেপ্তার এড়ানোর কৌশল হিসেবে দেখছেন মামলার বাদী জহিরুল ইসলাম রিন্টু, যিনি এক সময় ছাত্রলীগ থেকে কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্র সংসদের জিএস হয়েছিলেন।
গত বছরের ১১ এপ্রিল কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। ছাত্রলীগের আরেকটি অংশ ওই অনুষ্ঠান বানচালের চেষ্টা করলে তার বিপক্ষে সাইফুল অবস্থান নিয়েছিলেন। এ সময় বোমাবাজির ঘটনাও ঘটে।
এরপর কান্দিরপাড়ে পূবালী চত্বরে চা খাওয়ার সময় সাইফুলকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরদিন হাসপাতালে তার মৃত্যু ঘটে।
“এরপর সাইফুলের ওপর হামলা হয়।”
কুমিল্লা আওয়ামী লীগে আফজাল খান ও আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের দ্বন্দ্বে সাইফুল সংসদ সদস্য বাহারের সমর্থক ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানায়।
দুদিন পর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যে মামলা হয় তাতে ইমরানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়।
আসামিদের মধ্যে কেউ এখনও গ্রেপ্তার হয়নি জানিয়ে বাহার বলেন, “তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন, ইমরানের বিরুদ্ধে কোনো তথ্য-প্রমাণ পাননি। মামলায় তো একজনকেও ধরা হয়নি।
“তাহলে সাইফুলকে কি কেউ হত্যা করেনি?”
ইমরানের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা রয়েছে। একটি অস্ত্র মামলায় সাজা হলেও উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন তিনি। একটি অপহরণ মামলায়ও তার জামিন রয়েছে।