সড়কে গেল ১৭ প্রাণ

ঈদের ছুটি শেষে দেশের চার জেলায় শুক্রবার সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন অন্তত ৩৫ জন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2016, 01:14 PM
Updated : 16 Sept 2016, 01:14 PM

এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাস ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে আটজন, টাঙ্গাইলে বাস উল্টে পাঁচজন, মাদারীপুরে বাস-মাহিন্দ্র সংঘর্ষে তিনজন এবং চট্টগ্রামে বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে একজন নিহত হন।

আমাদের জেলা প্রতিনিধি ও চট্টগ্রাম অফিস থেকে পাঠানো খবর-

ব্রাহ্মণবাড়িয়া

পাত্রী দেখতে যাওয়ার পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে আট মাইক্রোবাস আরোহী নিহত হয়েছেন; যাদের মধ্যে রয়েছেন পাত্রসহ তার পরিবারের চার সদস্য।

শুক্রবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে বিজয়নগর উপজেলার শশই ইসলামপুর এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এ দুর্ঘটনায় আরও তিনজন আহত হন বলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া খাটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি মো. হুমায়ুন কবির জানান।

নিহতরা হলেন- মৌলভীবাজার শমসেরনগর উপজেলার রূপপুর গ্রামের আবু সুফিয়ান (৩০), তার বাবা হাদিউর রহমান (৫৫), চাচা মোরশেদ মিয়া (৪০), চাচাত ভাই আলী হোসেন (১২), একই গ্রামের আবদুল হান্নান (৬০), আবদুল মুকিত (৭০), সায়েদুর রহমান (৪০) ও দরুদ মিয়া (৪৬)।

দুর্ঘটনার পর ওই সড়কে প্রায় একঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।

ওসি জানান, সিলেটমুখী এনা পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে মাইক্রোবাসটির সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই সাতজন মারা যান।

“আহত চারজনের মধ্যে দুজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বেলা ১১টার দিকে আরও একজনের মৃত্যু হয়।”

ওই গাড়ির আরোহী শমসেরনগর উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল আলী জানান, তারা আবু সুফিয়ানের জন‌্য পাত্রী দেখতে ঢাকার নাখালপাড়ায় যাচ্ছিলেন।

মাক্রোবাসের চালক গুরুতর আহত অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলে জানান তিনি।

বিজয়নগর থানার ওসি আলী আরশাদ বলেন, দুর্ঘটনার পরপরই হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এসে উদ্ধারকাজ শুরু করেন।

মহাসড়ক থেকে দুর্ঘটনা কবলিত যানগুলো সরিয়ে নেওয়ার পর যান চলাচল শুরু হয়।

টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলায় একটি বাস উল্টে পাঁচজনের মৃত‌্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৮ জন।

গোড়াই হাইওয়ে থানার এলেঙ্গা ফাঁড়ির সার্জেন্ট জাহাঙ্গীর আলাম জানান, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে কালিহাতি উপজেলার পুংলী এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

সার্জেন্ট জাহাঙ্গীর জানান, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম এলাকার একদল পোশাক শ্রমিক ঈদের ছুটি কাটিয়ে প্রভাতী-বনশ্রী পরিবহনের একটি বাসে করে গাজীপুরের সফিপুরে ফিরছিলেন।

পথে চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে বাসটি উল্টে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত‌্যু হয়।”

আহত অবস্থায় ২০ জনকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে একজন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজনের মৃত‌্যু হয় বলে জানান জাহাঙ্গীর।

নিহতরা হলেন- আসমা (৪০), মমিনুর (৪১), আসাদুল (১৫), রিপন (৩০) ও সুমন (৩৫)। লালমনিরহাটের বিভিন্ন এলাকায় তাদের বাড়ি।

আহতদের টাঙ্গাইল মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে সার্জেন্ট জাহাঙ্গীর জানান।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেন দুর্ঘটনায় নিহত প্রত‌্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা এবং আহতদের ১০ হাজার করে টাকা সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

মাদারীপুর

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায় বাস-মাহিন্দ্র সংঘর্ষে তিন জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বাসযাত্রীসহ অন্তত ১০ জন।

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার বড়ব্রিজ এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে রাজৈর থানার ওসি কামরুল হাসান জানান।

নিহতরা হলেন, উপজেলার মজুমদারকান্দি গ্রামের আলাউদ্দিন শেখের ছেলে বেলাল শেখ (৫১),  হাসানকান্দি গ্রামের লোকমান মাতুব্বরের ছেলে বেলাল মাতুব্বর (৩৬) ও  শিরখাড়া ইউনিয়নের মোয়াজ্জেম কাজীর ছেলে সালাউদ্দিন কাজী (৪৬)।

আহতদের মধ্যে একজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বাকিদের রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

দুর্ঘটনার পর ওই সড়কে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট গিয়ে দুর্ঘটনা কবলিত যান দুটি সরিয়ে নিলে চলাচল স্বাভাবিক হয় বলে জানান ওসি।

পুলিশ কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, টেকেরহাট থেকে রাজৈরগামী মাহিন্দ্রের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা বাসের সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলে বেলাল শেখ ও বেলাল মাতুব্বরের মৃত্যু হয়। আর হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান সালাউদ্দিন কাজী।

চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন।

নিহত আব্দুল মোনাফ (৩০) কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মালুমঘাট চা বাগান এলাকার বাসিন্দা। তিনি ওই মাইক্রোবাসের চালক ছিলেন।

উজিরপুর এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে শুক্রবার দুপুরের এই ঘটনায় অন্তত আরও চার জন আহত হয়েছেন বলে হাইওয়ে পুলিশ পটিয়া ফাঁড়ির সার্জেন্ট জিল্লুর রহীম জানান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, চকরিয়া থেকে চট্টগ্রাম শহরগামী যাত্রীবাহী একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে কক্সবাজারগামী সৌদিয়া পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

“এতে ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসের চালক মোনাফ নিহত হন।”

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, দুর্ঘটনায় আহত দুই নারীসহ চারজনকে সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এরা হলেন- আনোয়ারা বেগম (৩৫), বিকাশ (২৮), রোজিনা (১৮) ও মাসুদ (২৫)।