আজিমপুর অভিযানে যুবকের লাশ, ৩ নারী ও ৫ পুলিশ জখম

রাজধানীর আজিমপুরে সন্দেহভাজন এক জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযান চলার সময় গোলাগুলির ঘটনায় একজন নিহত এবং পুলিশসহ কথিত তিন নারী জঙ্গি আহত হয়েছে।

লিটন হায়দারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2016, 02:42 PM
Updated : 10 Sept 2016, 07:38 PM

শনিবার সন্ধ্যার বিজিবির সদরদপ্তরের ২ নম্বর গেইটের কাছের একটি বাসায় নিহত যুবক গুলশানে হামলাকারীদের সহযোগী এবং আহতদের মধ্যে একজন সপ্তাহখানেক আগে রূপনগরে নিহত জঙ্গি জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী বলে ধারণা করছে পুলিশ। আহত তিন নারী ও পাঁচ পুলিশ সদস্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, পৌনে ৮টার দিকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা আজিমপুরের ২০৯/৫ নম্বর ছয়তলা ভবনের দোতলার ওই বাসায় যায়।

“তখন সেখান থেকে পুলিশের ওপর গুলি ও গ্রেনেড ছোড়া হয়। এতে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। এরপর পুলিশ পাল্টা গুলি চালায়।”

এ সময় গুলিতে একজন নিহত হন জানিয়ে ঢাকার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দীন কোরেশি সাংবাদিকদের বলেন, “তার বয়স ও পরিচয় এখনও আমরা জানতে পারিনি। আহত হয়েছে তিনজন নারী। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা সংকটাপন্ন।

“ছুরিকাহত হয়েছে দুই পুলিশ সদস্য। সংঘর্ষের সময় তারা পুলিশের চোখে মরিচ নিক্ষেপ করলে আরো তিন পুলিশ সদস্য জখম হয়। এদের সবাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।”

পরে রাত ১০টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “রূপনগরে অপারেশনের পরে আমরা জানতে পেরেছিলাম, রূপনগরে যে মারা গেছে জাহিদ তার ফ্যামিলি এবং আরও দুই তিনজন জঙ্গি  আজিমপুর এলাকায় কোথাও লুকিয়ে আছে। আমরা বেশ কয়েকদিন যাবৎ এটা তল্লাশি করতেছি। আজকে তল্লাশিতে আমরা তাদের আস্তানা খুঁজে পেয়েছি।” 

গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে মিরপুরের রূপনগরের একটি বাসায় পুলিশের অভিযানে সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম নিহত হন। প্রায় দুই বছর আগে মেজর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া জাহিদ নব্য জেএমবির সামরিক কমান্ডার ছিলেন বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন।

আজিমপুরের ঘটনার বিবরণে আইজিপি বলেন, “পুলিশ যখন গিয়ে সেখানে দরজা খোলার জন্য ‘নক’ করেছে তখন ভিতর থেকে তারা গ্রেনেড মানে বোমা, ছুরি এবং মরিচের গুঁড়া দিয়ে একসাথে, মহিলা ও পুরুষ তারা একসাথে পুলিশের ওপর ঝাপায় পড়ছে।”

এতে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “পুলিশ সাথে সাথে বাধ্য হইয়া ওপেন গুলি করছে, গুলি করার পরিপ্রেক্ষিতে ওখানে একজন পুরুষ জঙ্গি নিহত হয়। আর তিনজন মহিলা জঙ্গি আহত হয়।”

নিহত এই যুবকই গুলশানে হামলাকারীদের জন্য বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ফ্ল্যাটটি ভাড়া করেছিলেন মনে করছেন শহীদুল হক।

তিনি বলেন, “আমাদের এখানে যে জঙ্গি মারা গেছে, আমরা ধারণা করছি, গুলশানের ঘটনার আগে, গুলশানের হলি আর্টিজানে যারা হামলা চালিয়েছিল ওই জঙ্গিরা আগে বসুন্ধরায় একটা বাসায় ভাড়া নিয়েছিল। করিম নামে একজন ভাড়া নিয়েছিল।  সেখানে তারা একত্রিত হয়ে প্রস্তুতি নেয়।

“সেই করিমকে আমরা খুঁজতেছিলাম, তার একটা ছবি আমাদের কাছে আছে। আজকে যে মারা গেছে তার সঙ্গে সেই ছবি হুবুহু মিলে যায়। আমরা ধরে নিছি, সেই করিমই এই করিম হবে।” 

ওই বাসা থেকে একটি ছেলেসহ তিন শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশের ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে আইজিপি বলেন, তাদের মধ্যে জাহিদের সন্তানরা থাকতে পারে।

এই তিন শিশুর নাম জানা যায়নি। তবে তাদের মধ্যে সবার বড় ছেলেটির বয়স ১২ থেকে ১৩ বছর। আর দুটি মেয়ের মধ্যে একজনের বয়স নয় থেকে ১০ বছর, অন্য মেয়েটির বয়স বছরখানেক।

আহত তিন নারীর মধ্যে দুজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন শারমিন (২৫) ও শায়লা (৪৫)। অপরজন নিজের নাম-পরিচয় বলছে না বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

শারমিনের পেটে গুলি লেগেছে বলে মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সেন্টু চন্দ্র দাশ জানান। অপর দুজনের শরীরে ধারাল অস্ত্রের আঘাত রয়েছে বলে জানান তিনি।

হাসপাতালে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে আইজিপি বলেন, “ওই নারীদের শরীরে গুলি ও ধারাল অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। তারা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল বলে আমরা ধারণা করছি।”

এদিকে আরমান নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাত পৌনে ৮টার দিকে ওই বাসা থেকে এক নারীকে ছোরা হাতে দৌঁড়ে বের হয়ে আসতে দেখেন। কয়েকজন পুলিশ সদস্য তার পিছু নিয়ে প্রায় ১০০ গজ যাওয়ার পর তাকে গুলি করে।

ওই নারী ‘জঙ্গি’ জানিয়ে তাকে ধরতে এলাকাবাসীর সহায়তা চান পুলিশ সদস্যরা।

বাসাটি থেকে চারটি পিস্তল, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, মরিচের গুড়া, চারটি ল্যাপটপ এবং প্রায় চার লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

অভিযানে থাকা ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. ছানোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অভিযানটি দুই দফায় হয়।

“আহত নারীদের মধ্যে দজুন এবং নিহত পুরুষ জঙ্গি গোষ্ঠীর আত্মঘাতী দলের সদস্য। পুরুষ সদস্যটি সুইসাইড এবং নারী দুইজন সুইসাইডের চেষ্টা করতে পারে।”