এ দেখাই শেষ দেখা নয়: মীর কাসেমের স্ত্রী

আইনি শেষ লড়াইয়ে হেরে ফাঁসিকাষ্ঠে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর সঙ্গে দেখা করে তার স্ত্রী বলেছেন, সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আবারও স্বামীর কাছে যাবেন তিনি।

আবুল হোসেন গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2016, 01:46 PM
Updated : 31 August 2016, 01:46 PM

একাত্তরের বদর নেতা মীর কাসেম বর্তমানে রয়েছেন গাজীপুরের সুরক্ষিত কাশিমপুর কারাগারে। বুধবার দুপুরে সেখানে তার সঙ্গে দেখা করেন স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুনসহ পরিবারের ১০ সদস‌্য।

কারাগার থেকে বেরিয়ে আয়েশা খাতুন সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, “এই দেখাই শেষ দেখা নয়। শেষ কাজগুলো কেমন হবে? শেষ কাজগুলো আমরা কীভাবে করব, সে পরামর্শের জন্যই এসেছি।”

মৃত‌্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনায় (রিভিউ) এই জামায়াত নেতার আবেদন মঙ্গলবার আপিল বিভাগ খারিজ করে দেওয়ার পর এখন শুধু দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগই তার রয়েছে।  

কারা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রিভিউ খারিজের রায় শোনার পর ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সময় চেয়েছেন ৬৩ বছর বয়সী মীর কাসেম।

স্ত্রী আয়েশা বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নিখোঁজ ছেলে মীর আহমেদ বিন কাসেমের সঙ্গে পরামর্শ করতে চাইছেন তার স্বামী।

বাবার মামলা পরিচালনায় যুক্ত ব‌্যারিস্টার আহমেদকে গত ৯ অগাস্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয় বলে পরিবারের অভিযোগ; তবে পুলিশ তা অস্বীকার করেছে।

আয়েশা বলেন,  “আজকে ২২ দিন ধরে আমার ছেলেকে পাচ্ছি না। সাদা পোশাকধারী লোকেরা তাকে বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত আমরা তার সম্পর্কে কিছু জানি না।

“মীর কাসেম আলী সাহেবের ব্যাপারে কোনো কথা বলার আগে, কোনো কিছু সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে আমার ছেলেকে আমরা চাচ্ছি। কারণ যেহেতু ছেলে আমাদের ল’ইয়ার ছিল। সেহেতু তার সঙ্গে পরামর্শ আমাদের খুব বেশি দরকার। ছেলেকে পেলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেব।”

আহমেদ বিন কাসেম (ফাইল ছবি)

প্রাণভিক্ষার আবেদনের বিষয়ে মীর কাসেম কী বলেছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যেহেতু আমাদের ছেলে একজন ল’ইয়ার এবং পরিবারেরও একজন সদস্য। এ জন্য পরিবারের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলেছেন। আমরা অপেক্ষা করছি, ছেলেকে পাওয়া যায় কি না।”

ব‌্যারিস্টার আহমেদের সন্ধান পাওয়া পর্যন্ত কী সময় পাবেন- প্রশ্ন করা হলে আয়েশা বলেন, “যদি সময় শেষ হয়ে যায়, সেটা ভিন্ন কথা। যতক্ষণ সময় আছে, আমি অপেক্ষা করতে চাই।

“অন্তত বাবার শেষ মুহূর্তেও ছেলের কাছে থাকা অত্যন্ত দরকার।  যদি ছেলেকে না পাই আমরা মনের সন্তুষ্টির সাথে বিদায় দিতে পারব না।”

একাত্তরে নির্মমতার জন‌্য চট্টগ্রামে ‘বাঙালি খান’ নামে কুখ‌্যাত  মীর কাসেম তার স্ত্রীকে বলেছেন, মতামত জানানোর জন্য তিনি ছেলের সঙ্গেই পরামর্শ করতে চান।

ক্ষমা চাওয়ার সময়সীমার বিষয়ে ‘যুক্তিযুক্ত’ সময় পর্যন্ত অপেক্ষার কথা বলেছেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার উদ্দিন।  আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কারাবিধি অনুসারে সাত দিনের কথা বলেছেন।

বুধবার মীর কাসেমের সঙ্গে দুই ঘণ্টা কথা বলেন তার স্বজনা। স্ত্রীর সঙ্গে দুই মেয়ে সুমাইয়া রাবেয়া ও তাহেরা তাসনীম, দুই পুত্রবধূ সাহেদা তাহমিদা ও তাহমিনা আক্তার, ভাতিজা হাসান জামান খান ও চার নাতি-নাতনী তার সঙ্গে দেখা করে আসেন।

কারারক্ষক মো. নাশির আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, মীর কাসেমের সময় চাওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন তারা।