ঢাকা শহর নিয়ে লজ্জায় ওবায়দুল কাদের

অপরিচ্ছন্ন ও অপরিকল্পিত রাজধানী শহর ঢাকা দেশের উন্নয়নের অর্জনকে লজ্জা দেয় বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2016, 01:11 PM
Updated : 31 August 2016, 01:11 PM

বুধবার সচিবালয়ে ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসন ও পরিবহন ব্যবস্থাপনায় ২০ বছর মেয়াদী ‘সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা’ বা আরএসটিপি’র বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।  

বৈশ্বিক বসবাসযোগ্যতা শীর্ষক জরিপে শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ১৩৭তম জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “সিরিয়ার দামেস্ক, লিবিয়ার ত্রিপোলি ও নাইজেরিয়ার লাগোস- এই তিনটি সিটির পর আমরা (ঢাকা) মোস্ট আনলিভ্যাবল সিটি অব দ্য ওয়ার্ল্ড।

“এটা (ঢাকা) আসলেই অপরিচ্ছন্ন, অপরিকল্পিত একটা শহর। আজকে আমাদের যে উন্নয়ন, অর্জন- যেটা অর্জিত হয়েছে, সেই উন্নয়নের অর্জনকে লজ্জা দেয়। আমাদের উন্নয়ন অর্জনের সাথে ঢাকা সিটির যে চেহারা তা ম্যাচ করে না। ঢাকা সিটির চেহারা আমাদেরকে সত্যিই লজ্জা দেয়।”

এ অবস্থা পরিবর্তন করতে আরএসটিপি প্রণয়ন করা হয়েছে জানিয়ে এর বাইরে কোনো দপ্তর বা উন্নয়ন সংস্থা ঢাকায় কোনো ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করতে পারবে না বলে জানান সড়ক পরিবহনমন্ত্রী।

“ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য এটি একটি সমন্বিত পরিকল্পনা। যে কোনো দপ্তর বা উন্নয়ন সংস্থা শুধুমাত্র সংশোধিত এসটিপির আওতাভুক্ত প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করতে পারবে। সংশোধিত এসটিপিতে সুপারিশকৃত প্রকল্পের বাইরে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না।”

গত সোমবার ‘সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা, ২০১৫-২০৩৫’ অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

মন্ত্রী বলেন, “ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ আইন-২০১২ অনুযায়ী ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ বা ডিটিসিএ আরএসটিপির অন্তর্ভুক্ত প্রকল্প গ্রহণের সম্মতি ও বাস্তবায়ন সমন্বয় সাধন করবে।”

সময়ের প্রয়োজনে উন্নয়ন চাহিদার কথা বিবেচনা করে প্রতি পাঁচ বছর পরপর সংশোধিত এসটিপি অধিকতর সংশোধনের সুযোগ রাখা হয়েছে বলেও জানান সড়ক পরিবহন মন্ত্রী।

সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৫ থেকে ২০৩৫ পর্যন্ত।

কাদের জানান, আরএসটিপিতে ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার গণপরিবহন ও সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ এবং ব্যবস্থাপনায় যে সব সুপারিশ এসেছে, এর মধ্যে প্রধান সুপারিশগুলোর মধ্যে পাঁচটি মেট্রোরেল রুট ও দু’টি বিআরটি সড়ক নির্মাণ রয়েছে।

এছাড়া ইনার, মিডল এবং আউটার নামে তিনটি রিং রোড নির্মাণ।

ইনার ও আউটার রিং রোডকে সংযোগকারী ঢাকা-জয়দেবপুর, ঢাকা-টঙ্গী-ঘোড়াশাল, ঢাকা-পূর্বাচল-ভূলতা, ঢাকা-কাঁচপুর-মেঘনা সেতু, ঢাকা-সাইনবোর্ড-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-ঝিলমিল-ইকুরিয়া, ঢাকা-আমিনবাজার-সাভার এবং ঢাকা-আশুলিয়া-ডিইপিজেড এই আটটি রেডিয়াল সড়ক নির্মাণ করা হবে।

আরএসপি অনুযায়ী ছয়টি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা- চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-সিলেট এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-ময়মনসিংহ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে।”

২১টি ট্রান্সপোর্টেশন হাব বা টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

সংশোধিত এসটিপিতে দু'টি প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‍“পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার পূর্বেই মিডল অথবা আউটার রিং রোডের দক্ষিণ অংশ মুন্সীগঞ্জ জেলার বাউরভিটা হতে নারায়ণগঞ্জ জেলার কাইকারটেক পর্যন্ত মহাসড়ক নির্মাণ করতে হবে।”

এছাড়া মেট্রোরেল রুট-১ এর নির্মাণ কাজ শুরুর আগে বালু নদীর পূর্ব পাড় থেকে ঢাকা বাইপাসের পশ্চিম পাড়ের মধ্যবর্তী অংশের মধ্যে সড়ক নেটওয়ার্ক নির্মাণ ও উন্নয়ন করতে হবে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।

এ সময় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।