নিজাম হাজারী: রক্তদানের হিসাব নিতে আটকে গেল রায়

ফেনীর আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম উদ্দিন হাজারীর সংসদ সদস্য পদে থাকা-না থাকা প্রশ্নে উচ্চ আদালতে রায় ঘোষণা মাঝপথে আটকে গেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2016, 10:49 AM
Updated : 31 August 2016, 10:49 AM

নিজাম হাজারী কারাবাসকালে কত ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন, এর ফলে কতদিন কারাবাস রেয়াত পাওয়ার অধিকারী হয়েছেন, ৩০ দিনের মধ্যে তা প্রতিবেদন আকারে দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

বুধবার রায় ঘোষণা মুলতবি করে আগামী ৩ নভেম্বর আবার এ মামলার শুনানির দিন রেখেছে বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি মো. ইকবালের বেঞ্চ।

গত ৩ অগাস্ট এই রিটের রুলের ওপর শুনানি শেষ করে আদালত ১৭ অগাস্ট রায়ের দিন ঠিক করে দিয়েছিল। ওইদিন নতুন একটি নথি চাওয়া হলে রায়ের তারিখ পিছিয়ে যায় ২৩ অগাস্ট।

কিন্তু ২৩ অগাস্ট আদালতে ফের শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবীরা। ‘রক্তদান করে’ নিজাম হাজারী কারাবাস রেয়াতের অধিকারী হয়েছেন বলে তার আইনজীবীরা সেদিন আদালতে যুক্তি দেন।

শুনানির পর আদালত রায়ের জন‌্য ৩০ অগাস্ট দিন রাখে। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার রায় দেওয়া শুরুও হলেও মাঝখানে মুলতবি করে বুধবার রায়ের বাকি অংশ দেওয়ার কথা জানানো হয়। এরপর বুধবার বিষয়টি পিছিয়ে যায় নভেম্বর পর্যন্ত। 

হাজারীর আইনজীবী নুরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের বলেন, “নিজাম হাজারী কারাগারে থাকার সময় মোট ১৩ বার রক্ত দিয়েছিলেন। যার বিপরীতে তিনি ৪৮৬ দিনের কারাবাস থেকে রেয়াত পাওয়ার অধিকারী হয়েছেন। এটা ধরা হলে তার সাজার মেয়াদের চেয়ে বেশি সময় তিনি কারাগারে ছিলেন।”

ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম হাজারী ২০১৪ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

‘সাজা কম খেটেই বেরিয়ে যান সাংসদ’ শিরোনামে ২০১৪ সালের ১০ মে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে তার ওই পদে থাকার বৈধতা নিয়ে ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া রিট আবেদনটি করেন।

রিট আবেদনকারীর যুক্তি, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে, কোনো ব্যক্তি যদি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তাহলে মুক্তির পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না।

২০০০ সালের ১৬ অগাস্ট অস্ত্র আইনের এক মামলায় দুটি ধারায় ১০ বছর ও সাত বছর কারাদণ্ড হয় নিজাম হাজারীর, যা আপিলেও বহাল থাকে।

সে হিসেবে নিজাম হাজারী ২০১৫ সালের আগে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য না হলেও তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সাংসদ হয়ে যান বলে অভিযোগ করা হয় রিট আবেদনে।

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ৮ জুন বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে রুল জারি করে।

নিজাম হাজারী কোন কর্তৃত্ববলে ওই আসনে সংসদ সদস্য পদে আছেন এবং ওই আসনটি কেন শূন্য ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে৷ পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনাও দেয় আদালত।

ওই রুলের উপর শুনানি গ্রহণে গতবছরের ১২ নভেম্বর হাই কোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চের এক বিচারপতি এবং পরে ২ ডিসেম্বর অন্য একটি দ্বৈত বেঞ্চ বিব্রতবোধ করে।

প্রধান বিচারপতি এরপর বিষয়টি শুনানির জন্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হকের নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চে পাঠান। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি হাই কোর্টে রুলের উপর শুনানি শুরু হয়।

আদালতে রিট আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম কামরুল হক সিদ্দিকী ও সত্য রঞ্জন মণ্ডল। নিজাম হাজারীর পক্ষে লড়েন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও নুরুল ইসলাম সুজন এমপি। রাষ্ট্রপক্ষ ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আমিনুর রহমান চৌধুরী টিকু।