ছেলে পাওয়ার পর প্রাণভিক্ষার সিদ্ধান্ত: কাসেমপত্নী

গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে বন্দি যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মীর কাসেমের সঙ্গে দেখা করে তার স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন বলেছেন, তাদের ‘তুলে নেওয়া’ ছেলেকে না পাওয়া পর্যন্ত প্রাণভিক্ষার আবেদন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত তারা দিতে পারছেন না।

আবুল হোসেন গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2016, 10:25 AM
Updated : 31 August 2016, 02:23 PM

দুই মেয়ে সুমাইয়া রাবেয়া ও তাহেরা তাসনিম, পুত্রবধূ শাহেদা তাহমিদা ও তাহমিনা আক্তার এবং ভাতিজা হাসান জামালকে নিয়ে বুধবার দুপুরে কাশিমপুর কারাগারে কাসেমকে দেখতে যান আয়েশা।

প্রায় দুই ঘণ্টা পর বিকাল পৌনে ৪টার দিকে কারাগার থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

কাসেমপত্নী বলেন, “আমার ছেলে ও আইনজীবী আহমেদ বিন কাসেমকে সাদা পোশাকের পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। তাকে না পাওয়া পর্যন্ত আমরা প্রাণভিক্ষা বা অন‌্য কোনো বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছি না।” 

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, “পরিবারের সদস‌্যরা প্রায় দুই ঘণ্টা মীর কাসেমের সঙ্গে কথা বলেছেন।”

মীর কাসেমের ছেলে মীর আহমেদ বিন কাসেমকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে গত ১০ অগাস্ট পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলেও পুলিশ বলছে, বিষয়টি তাদের অজানা।

আয়েশা বলেন,  “আজকে ২২ দিন ধরে আমার ছেলেকে পাচ্ছি না। সাদা পোশাকধারী লোকেরা তাকে বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত আমরা তার সম্পর্কে কিছু জানি না।

মীর আহমেদ বিন কাসেম (ফাইল ছবি)

“মীর কাসেম আলী সাহেবের ব্যাপারে কোনো কথা বলার আগে, কোনো কিছু সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে আমার ছেলেকে আমরা চাচ্ছি। কারণ যেহেতু ছেলে আমাদের ল’ইয়ার ছিল। সেহেতু তার সঙ্গে পরামর্শ আমাদের খুব বেশি দরকার। ছেলেকে পেলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেব।”

প্রাণভিক্ষার আবেদনের বিষয়ে মীর কাসেম কী বলেছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যেহেতু আমাদের ছেলে একজন ল’ইয়ার এবং পরিবারেরও একজন সদস্য। এ জন্য পরিবারের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলেছেন। আমরা অপেক্ষা করছি, ছেলেকে পাওয়া যায় কি না?”

ব‌্যারিস্টার আহমেদের সন্ধান পাওয়া পর্যন্ত কী সময় পাবেন- প্রশ্ন করা হলে আয়েশা বলেন, “যদি সময় শেষ হয়ে যায়, সেটা ভিন্ন কথা। যতক্ষণ সময় আছে, আমি অপেক্ষা করতে চাই।

“অন্তত বাবার শেষ মুহূর্তেও ছেলের কাছে থাকা অত্যন্ত দরকার।  যদি ছেলেকে না পাই আমরা মনের সন্তুষ্টির সাথে বিদায় দিতে পারব না।”

একাত্তরে নির্মমতার জন‌্য চট্টগ্রামে ‘বাঙালি খান’ নামে কুখ‌্যাত  মীর কাসেম তার স্ত্রীকে বলেছেন, মতামত জানানোর জন্য তিনি ছেলের সঙ্গেই পরামর্শ করতে চান।

ক্ষমা চাওয়ার সময়সীমার বিষয়ে ‘যুক্তিযুক্ত’ সময় পর্যন্ত অপেক্ষার কথা বলেছেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার উদ্দিন।  আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কারাবিধি অনুসারে সাত দিনের কথা বলেছেন।

বুধবার মীর কাসেমের সঙ্গে দুই ঘণ্টা কথা বলেন তার স্বজনা। স্ত্রীর সঙ্গে দুই মেয়ে সুমাইয়া রাবেয়া ও তাহেরা তাসনীম, দুই পুত্রবধূ সাহেদা তাহমিদা ও তাহমিনা আক্তার, ভাতিজা হাসান জামান খান ও চার নাতি-নাতনী তার সঙ্গে দেখা করে আসেন।

মীর কাসেম আলী (ফাইল ছবি)

মঙ্গলবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিলে কারাগারে বসে এক ব‌্যান্ডের রেডিওর মাধ্যমে সে খবর জানতে পারেন মীর কাসেম।

বুধবার সকালে তাকে তার রিভিউ খারিজের রায় পড়ে শোনায় কারা কর্তৃপক্ষ। 

কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না- সে সিদ্ধান্ত জানাতে কাসেম সময় চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেল সুপার।

সব বিচারিক প্রক্রিয়ার নিষ্পত্তি হওয়ায় জামায়াতের অর্থ যোগানদাতা হিসেবে পরিচিত মীর কাসেমের সামনে এখন কেবল ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগই বাকি।

তিনি প্রাণভিক্ষার সুযোগ নিতে চাইলে তার দরখাস্ত রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের পরই দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

আর আবেদন না করলে, অথবা আবেদন করেও রাষ্ট্রপতির অনুকম্পা না পেলে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষ দণ্ড কার্যকর করবে।

কারাগারের এক কর্মকর্তা জানান, সকালে রায় পড়ে শোনানোর পর কিছুটা চিন্তিত দেখাচ্ছিল মীর কাসেমকে। তার চোখে-মুখে ছিল উদ্বেগ।

৬৩ বছর বয়সী মীর কাসেম আলী ২০১২ সাল থেকে এ কারাগারে রয়েছেন। শুরুতে কারাগারে ডিভিশন পেলেও ২০১৪ সালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ট্রাইব‌্যুনালে মৃত‌্যুদণ্ডের রায়ের পর তাকে পাঠানো হয় কনডেম সেলে।