সচিবালয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “এমন তো কথা নাই যে বিদেশে থাকলে উনি (রাষ্ট্রপতি) ফাইল দেখতে পারবেন না, এ রকম তো আইনের মধ্যে নাই।
“তারা যদি ক্ষমা চেয়ে দরখাস্ত করে, সেটাকে ত্বরিত নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থা আইনে যেটা আছে সেটাই করা হবে।”
স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গত রোববার লন্ডনে গেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আগামী ৪ সেপ্টেম্বর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মঙ্গলবার খারিজ করে দেওয়ায় তার দণ্ড কার্যকরে আর কোনো আইনি বাধা নেই।
নিয়ম অনুযায়ী তিনি এখন কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন। এর নিষ্পত্তি হলেই সরকার দণ্ড কার্যকর করবে।
যুদ্ধাপরাধীদের আগের রায়গুলো কার্যকরের প্রক্রিয়া তুলে ধরে আইনমন্ত্রী বলেন, “(প্রাণভিক্ষার আবেদনের জন্য) সাত দিনের অপেক্ষা আমরা করে থাকি। আমাদের কাছে মনে হয় সাত দিন অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত সময়।”
মন্ত্রী বলেন, দণ্ড কার্যকরের জন্য রায়ের অনুলিপি আপিল বিভাগ থেকে বিচারিক আদালত হয়ে কারাগারে যেতে হবে; সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে।
“মীর কাসেমের রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার অধিকার আছে। সেটা যদি তিনি প্রয়োগ করেন, তবে সেটা রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছাবে, সেই প্রক্রিয়া শেষ হলেই রায় কার্যকর হবে।”
‘আজ স্বস্তির দিন’
রিভিউ রায়েও মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করে আইনমন্ত্রী বলেন, “আজ আমাদের সকলের জন্য একটি স্বস্তির দিন। সকলের জন্য স্বাধীনতা আরও ভালভাবে ভোগ করার দিন। বাংলাদেশের জনগণের সাথে আমিও আজ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছি।”
আগের রায়গুলোর মত মীর কাসেমের রায়ও যথানিয়মে কার্যকর করার প্রত্যয়ের কথা জানান তিনি।
আনিসুল বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনগণের উপর অত্যাচার চালিয়ে, নির্বিচারে হত্যা করেও ‘কিছু শাসকের কারণে’ সেই হত্যাকারীরা ‘নির্ভয়ে বুক ফুলিয়ে’ ২১ বছর বাংলাদেশের মানুষকে ‘শোষণ করে গেছে’।
“আজ আমি বাংলাদেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানাই, তাদের ধৈর্যের জন্য, বিশ্বাসের জন্য। তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে একদিন এই বিচারকাজ সম্পন্ন হবে। এর সঙ্গে আমি ধন্যবাদ জানাই আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে। দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে তিনি এই বিচারের অঙ্গীকার জনগণকে দিয়েছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত কথা রেখেছেন।”
‘বিচারপতি মন্তব্য প্রনিধানযোগ্য’
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন নিয়ে প্রধান বিচারপতির অসন্তোষ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, “প্রধান বিচারপতি যখন কোনো মন্তব্য করেন তখন সেটা প্রণিধানযোগ্য, সেটাকে বিচেবনা করা উচিত। কিন্তু বিবেচনারও একটা সময় দিতে হয়।”
আপিল বিভাগে এ মামলার শুনানির সময় প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থার কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।
রিভিউ শুনানিতে তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে মীর কাসেমের মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে যারা যুক্ত ছিলেন এবং যিনি তাদের দায়িত্ব দিয়েছেন (প্রধান প্রসিকিউটর), তাদের ওই দায়িত্বে থাকা ‘উচিত নয়’।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও শুনানিতে বলেন, যে দুই অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে কাসেমের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল, তার একটিতে তিনি আপিলে খালাস পেয়ে যান প্রসিকিউটার ও তদন্ত সংস্থার ‘অযোগ্যতার’ কারণে।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, “আমি মনে করি, আমরা খতিয়ে দেখব- প্রধান বিচারপতি কেন এটা বলেছেন। তার কথাটার যৌক্তিকতা নিশ্চয়ই আছে। সেই ক্ষেত্রে আমরা খতিয়ে দেখার পরে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।”
ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তর প্রসঙ্গে
ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তরে বিষয়ে ‘আলাপ-আলোচনা করে জেনে-বুঝে’ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তরের ক্ষেত্রে বিবেচনা ও আলেচনার প্রয়োজন আছে। সার্বিকভাবে সবকিছু জেনে বুঝে তারপরে ব্যবস্থা নেব। এখানে সব থেকে বেশি কাজ করবে জনগণের ইচ্ছা। সেটাই বেশি প্রাধান্য পাবে।”
পুরনো হাই কোর্ট ভবন থেকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য স্থাপিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নিতে সম্প্রতি আইন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ইতোমধ্যে বলেছেন, ট্রাইব্যুনাল সরলেও তাতে বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো প্রভাব পড়বে বলে তিনি মনে করেন না।