রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় মান্নার জামিন

রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গুলশান থানায় করা এক মামলায় জামিন পেয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2016, 09:02 AM
Updated : 30 August 2016, 09:02 AM

বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়ার বেঞ্চ মঙ্গলবার এ বিষয়ে এক রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে তার জামিন মঞ্জুর করেন।

মান্নার পক্ষে আদালতে শুনানি করেন শাহদীন মালিক ও মো. ইদ্রিসুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির উল্লাহ।

বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার সাথে টেলিকথোপকথনে রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কথা বলার অভিযোগে মাহমুদুর রহমান মান্না ও খোকার বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ৫ মার্চ গুলশান থানায় এই মামলা দায়ের করা হয়।

ওই ঘটনায় সেনাবিদ্রোহে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে এর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি একই থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করার পর দিন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

হাই কোর্টে আবেদন করার পর এ বছরের ২১ মার্চ উভয় মামলার জামিনের বিষয়ে রুল দেয় বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ।

ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি করে একটি মামলায় তাকে জামিন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন উভয়পক্ষের আইনজীবী।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বশির উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রুলের চূড়ান্ত শুনানি করে আদালত তাকে নিয়মিত জামিন দিয়েছে। আমরা এই জামিনের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা আদালতে বলেছি, তিনি (মান্না) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলার কথা বলেছেন। সেনাবাহিনীকে উসকানি দিতে চেয়েছেন। রাষ্ট্রদ্রোহমূলক ভয়ঙ্কর এই অপরাধে তার জামিন হতে পারে না।”

আসামিপক্ষের আইনজীবী ইদ্রিসুর রহমান বলেন, “আমরা আদালতে বলেছি, তিনি ভাইবারে কথা বলেছেন। এটাতে অভিযোগ আনলে টেলিযোগাযোগ আইনে যেতে পারে। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা যেতে পারে না। কারণ এখানে রাষ্ট্রদ্রোহের কোনো উপাদান নাই।

“তা ছাড়া দীর্ঘদিন পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোন প্রতিবেদন দিতে পারেনি। তিনি অসুস্থ, তাই তাকে আটক রাখা যেতে পারে না। আদালত শুনানি করে জামিন দিয়েছে।”

আগামী ২৪ অক্টোবর সেনা বিদ্রোহে উসকানির মামলায় পুলিশের প্রতিবেদন দেওয়ার দিন রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট জামিন আবেদনটি এরপর শুনানি হবে বলে আদালত বলেছে।

অন্য মামলার জামিনের বিষয়ে ৩০ অক্টোবর পরবর্তী শুনানি হবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বশির জানান।

মামলা দায়ের হওয়ার পর সেই সময় গুলশান থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৈধ সরকারকে অবৈধভাবে উচ্ছেদের চেষ্টার অংশ হিসাবে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালানোর পরিকল্পনা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হত্যাচেষ্টার মদদ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে এই দুজনের বিরুদ্ধে।”

মান্নার সঙ্গে নিউ ইয়র্কে অবস্থানরত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খোকার টেলিআলাপের একটি অডিও ক্লিপ ২০১৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রকাশ করলে তা নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়।

ফাঁস হওয়া টেলিফোন কথোপকথনে ঢাকার সাবেক মেয়র খোকার সঙ্গে আলাপচারিতায় সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদারে বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলা নিয়ে মান্নাকে কথা বলতে শোনা গেছে।

একই দিন অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গেও মান্নার কথোপকথনের আরেকটি অডিও ক্লিপ প্রকাশ হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে, যাতে চলমান পরিস্থিতিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের বিষয়ে তাকে আগ্রহ প্রকাশ করতে শোনা যায়।

ছাত্রজীবনে বামপন্থি সংগঠনে যুক্ত মান্না ডাকসুতে দুই বার ভিপি নির্বাচিত হন, চাকসুতে জিএস ছিলেন তিনি। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় সংস্কারপন্থি হিসেবে আওয়ামী লীগে চিহ্নিত হওয়ার পর তিনি দলে অপাঙক্তেয় হয়ে পড়েন। বর্তমানে নাগরিক ঐক্য নামে একটি সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।