দেশের পথে শহীদ কাদরীর মরদেহ

কবি শহীদ কাদরীর ইচ্ছাতেই তার মরদেহ দেশে আনা হচ্ছে। এরই মধ‌্যে দেশের পথে রয়েছে তার মরদেহবাহী বিমান।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2016, 06:45 AM
Updated : 30 August 2016, 07:28 AM

সোমবার স্থানীয় সময় রাত ৯টায় নিউ ইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দর থেকে কবির মরদহে নিয়ে রওনা হয় এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট।

দুবাই হয়ে বুধবার সকালে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে কবির মরদেহ।

বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. শামীম আহসান, ডেপুটি কনসাল জেনারেল শাহেদ আহমেদসহ দূতাবাসের কর্মকর্তারা।

কবির ছেলে আদনান কাদরী, লেখক-সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস, কম্যুনিটি অ‌্যাক্টিভিস্ট রানু ফেরদৌস, যুক্তরাষ্ট্র উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জীবন বিশ্বাস ও চলচ্চিত্রকার কবীর আনোয়ারও বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।

বিমানে তোলার আগে কবিপত্নী নীরা কাদরী কফিনে শায়িত শহীদ কাদরীকে শেষবারের মত ছুঁয়ে দেখেন, অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন- ‘গুড বাই, গুড বাই শহীদ’।

অন্য একটি ফ্লাইটে ঢাকায় রওনা হয়েছেন কবির স্ত্রী নীরা ও ছেলে আদনান কাদরী। লাশবাহী কফিনের আগেই তাদের ঢাকায় পৌঁছানোর কথা।

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন শহীদ কাদরী। গত পাঁচ বছর ধরে হুইল চেয়ারে ছিল তার চলাফেরা। সম্প্রতি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন তিনি। রোববার নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতালে মারা যান ৭৪ বছর বয়সী এ কবি।

দেশে পৌঁছার পরপরই কবির মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে বলে সোমবার জানিয়েছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।

জোটের উদ্যোগে সেখানে সামাজিক-রাজনীতিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ সর্বস্তরের মানুষ তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

পঞ্চাশোত্তর বাংলা কবিতায় আধুনিক মনন ও জীবনবোধ সৃষ্টিতে যে কজন কবি উল্লেখযোগ্য তাদের মধ্য অন্যতম শহীদ কাদরী।

আধুনিক নাগরিক জীবনের সুখ-দুঃখ, প্রেম, স্বদেশচেতনার পাশাপাশি বিশ্ব-নাগরিক বোধের সম্মিলন ঘটে তার কবিতায়।

‘উত্তরাধিকার’, ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’, ‘কোথাও কোন ক্রন্দন নেই’ ও ‘আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও’ এই চারটি কাব্যগ্রন্থ দিয়েই বাংলার জনপ্রিয় কবিদের একজন শহীদ কাদরী। ১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমি ও ২০১১ সালে তাকে একুশে পদক দেওয়া হয়।

১৯৪২ সালের ১৪ অগাস্ট কলকাতায় জন্ম নেওয়া শহীদ কাদরী সাতচল্লিশে দেশভাগের পর বাংলাদেশে আসেন। ১৯৭৮ সালের পর থেকেই বাংলাদেশের বাইরে তিনি; জার্মানি, ইংল্যান্ড হয়ে ১৯৮৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হন।

বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন

কবি শহীদ কাদরীর মরদেহ ঢাকার শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল।

মঙ্গলবার নিজের ফেইসবুকে শাকিল লিখেছেনে, “কবি শহীদ কাদরী আগামীকাল সকাল ৮.৪০ মিনিটে দেশের মাটি ছোঁবেন। তিনি আসবেন এমিরেটস এর ফ্লাইটে।

“এর আগে ভোর ৫.১০ মিনিটে কাতার এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে ঢাকা আসবেন নীরা ভাবী। সাথে থাকবে কবিপুত্র আদনান কাদরী এবং পারিবারিক বন্ধু সাবিনা হাই উর্বি।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে কবির মরদেহ দেশে আনার ব্যবস্থা করেছেন বলে জানিয়েছেন মাহবুবুল হক শাকিল।

তিনি লিখেছেন, “কৃতজ্ঞতা হৃদয় থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি, কবি এবং কবিতার জন্য যার অন্তরে সদা ভালোবাসা। সরকারী অর্থে নয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত খরচে কবি এবং তার পরিবার স্বদেশের মাটিতে আসছেন।”

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কবির জন্য বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও লিখেছেন শাকিল।

সোমবার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছও বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শহীদ কাদরীকে দাফনের কথা বলেছিলেন। তবে বুধবারই দাফন হবে কিনা তা বলতে পারেননি।