মঙ্গলবার সকাল ৮টায় টিকেট বিক্রি শুরু হলেও কাঙ্ক্ষিত টিকেট পাওয়া নিশ্চিত করতে অনেকেই নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন স্টেশনে। ৮ সেপ্টেম্বরের টিকেট নিতে কেউ কেউ সোমবার দুপুর থেকেও অপেক্ষায় ছিলেন।
সকালে সরেজমিনে কমলাপুর স্টেশনে দেখা যায়, কাউন্টারের সামনে থেকে লাইন হল ছাড়িয়ে চলে গেছে সামনের রাস্তায়। দীর্ঘ এই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের চোখে মুখে ছিল উৎকণ্ঠার ছাপ।
তিন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে রাজশাহীর টিকেট কিনতে সোমবার দুপুর ২টায় স্টেশনে এসেছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী হৃদয়; শুরুতেই টিকেট পেয়েছেন তিনি।
“সারারাত দাঁড়িয়ে থাকা কি যে কষ্টের! তারপরও টিকেট পাওয়ার পর আর কোনো কষ্ট নেই। খুব ভালো লাগছে বাবা-মার সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাব।”
একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আবুল বাশার কিশোরগঞ্জে যাবেন; এগারসিন্ধুর ট্রেনের টিকেটের জন্য সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় স্টেশনে এসেছেন তিনি।
“আজকে যে ভিড় তাতে ভোরে এসে টিকেট পাওয়া সম্ভব না। এজন্য আগের রাতে এসেছি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আবু তালেব লিমনেরও রাত কেটেছে স্টেশনে। হলে খাওয়া-দাওয়া শেষে রাত ৮টায় কমলাপুরে এসেছেন তিনি।
বন্ধুরা সঙ্গে ছিল বলে সময়টা ভালই কেটেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “রাতে কার্ড, লুডু খেলে সময় কাটিয়েছি। এবার বাসের টিকেট পাইনি বলে এখানে এসেছি। আশা করছি টিকেট পেয়ে যাব।”
প্রায় ১৮ ঘণ্টা অপেক্ষার পর সকাল সোয়া ৮টায় কাঙ্খিত টিকেট পেলেন ঢাকার মগবাজারে বাসিন্দা আইনুদ্দীন।
সপরিবারে গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় যাবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “সবাই মিলে বাড়ি যাব। এজন্য দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার এই কষ্ট সহ্য করেছি। তবে টিকেট পাওয়ার পর আর কোনো কষ্ট নেই।”
রাজধানীর একটি আবাসিক হোটেলের কর্মকর্তা মো. আসলাম হাওলাদার যাবেন চট্টগ্রামে; কমলাপুর এসেছেন সোমবার রাত ১১টার দিকে।
সকাল সাড়ে ৮টায় টিকেট পাওয়ার পরও কষ্টকর অপেক্ষার জন্য বিরক্তি প্রকাশ করলেন তিনি: “এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে খুবই বিরক্ত লাগে। কিন্তু কি আর করা। বাড়ি যেতে হবে তো।”
তবে সিলেটের ট্রেনের টিকেটের জন্য এতোটা আগে আসতে হয়নি ব্যবসায়ী আবদুল কুদ্দুসকে; মঙ্গলবার ভোর ৬টায় এসে সাড়ে ৮টার দিকেই প্রত্যাশিত টিকেট পেয়েছেন।
নারীদের জন্য নির্ধারিত মাত্র দুটি কাউন্টারের একটি থেকে টিকেট দেওয়া হচ্ছিল রেলওয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন টিকেট নিতে আসা নারীরা।
ভোর ৬টায় কমলাপুর এসে বেলা ১১টায় রাজশাহীর টিকেট পেয়েছেন রুমানা পারভিন; জানালেন ভোগান্তির কথা।
“নারীদের লাইনটা অনেক দীর্ঘ। দুইটা কাউন্টার হলে ভালো হতো। পাঁচঘণ্টা একটানা দাঁড়িয়ে থাকা খুবই কষ্টের।”
পরে বেলা সোয়া ১১টার দিকে দুটি কাউন্টার থেকেই নারীদের টিকেট দেওয়া শুরু হয়।
শুরুতেই কাউন্টার থেকে এসি এবং বার্থ শ্রেণির টিকেট শেষ হওয়ার কথা বলা হয় বলে জানালেন একাধিক যাত্রী।উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন রুটের যাত্রীরাও কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের টিকেট না পাওয়ার অভিযোগ করেন।
কিশোরগঞ্জের এগারোসিন্ধুর ট্রেনের বার্থের টিকেট নিতে আসা মো. ফরিদ উদ্দিনের অভিযোগ, কাউন্টার খোলার পর লাইনের শুরুতে থাকলেও বার্থের টিকেট দেওয়া হয়নি তাকে।
“কাউন্টার থেকে আমাকে জানায় কোনো কেবিন নাই। আমি কারণ জানতে চাইলে কাউন্টার থেকে বলে, ‘এগুলো মন্ত্রীরা নিয়া গেছে’।”
“যাব চাটমোহর। কিন্তু সেখানকার টিকেট নাকি শেষ। আমাকে রাজশাহীর টিকেট দিল।”
বেলা ১০টায় কমলাপুর স্টেশন ঘুরে দেখে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক সাংবাদিকদের বলেন, এ বছর ঈদের সময় সারাদেশে প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।
“আমাদের হাতে পর্যাপ্ত টিকেট আছে। আশা করি সবাই টিকেট নিয়ে বাড়ি যেতে পারবেন।”
যাত্রীদের এসি ও বার্থ টিকেট না পাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, “এমন হওয়ার কথা নয়। তারপরও এরকম হলে আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে তারা ব্যবস্থা নিতে পারেন।”
লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রথম ব্যক্তিও টিকেট পাননি সাংবাদিকরা এমন তথ্য জানালে এড়িয়ে যান রেলমন্ত্রী।
আগামী ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে মোহনগঞ্জ পর্যন্ত মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস নামে একটি নতুন ট্রেন চালু হচ্ছে বলে জানান তিনি।
চাঁদ দেখাসাপেক্ষে আগামী ১২ বা ১৩ সেপ্টেম্বর কোরবানির ঈদ হবে। সে অনুযায়ী ট্রেনের আগাম টিকেট বিক্রি শুরু করেছে রেলওয়ে।
রেলওয়ে জানিয়েছে, ঈদযাত্রায় প্রতিদিন কমলাপুর থেকে ৬৯টা ট্রেন ছেড়ে যাবে। তবে রেলওয়ে ৩১টি ট্রেনের প্রায় ২৩ হাজার ৫০০ অগ্রিম টিকেট বিক্রি হচ্ছে।
কমলাপুর ছাড়াও বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, যশোর ঈশ্বরদী, রাজশাহী, দিনাজপুর ও লালমনিরহাটসহ বড় স্টেশনগুলো থেকেও অগ্রিম টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে।
সোমবার সকাল ৮টা থেকে কমলাপুরের ২৩টি কাউন্টার থেকে শুরু হয় অগ্রিম টিকেট বিক্রি।
এবার রেলের বহরে থাকা একহাজার ছয়টি কোচের সঙ্গে আরও ১৪০টি কোচ যোগ করা হয়েছে। নিয়মিতভাবে চলাচলকারী ২০২টি ইঞ্জিনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও ১৮টি ইঞ্জিন।
৭ সেপ্টেম্বর থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত উপকূল এক্সপ্রেস, বিজয় এক্সপ্রেস ও সুন্দরবন এক্সপ্রেস ছাড়া অন্য সব আন্তঃনগর ট্রেনের সাপ্তাহিক বিরতি থাকবে না।
ঈদের তিন দিন আগ থেকে আগামী ৯, ১০ ও ১১ সেপ্টেম্বর এবং ঈদের পরের সাত দিন আগামী ১৪ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন জোড়া করে বিশেষ ট্রেন চলবে বলেও জানান রেলমন্ত্রী।
ঈদকে সামনে রেখে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা রেল কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। রেল ভবনে একটি কন্ট্রোল রুম করা হয়েছে, সেখান থেকে তারা দায়িত্ব পালন করবেন।