সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মঙ্গলবার মীর কাসেমের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেওয়ার পর ট্রাইব্যুনালে এ মামলায় সাক্ষ্য দেওয়া হাসিনা খাতুন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “রায় বহাল আছে, রায় কার্যকর হলে আমরা খুশি হব। দ্রুত ফাঁসি হয়ে গেলেই ভালো হয়।”
একাত্তরের নভেম্বর মাসে ঈদুল ফিতরের পরদিন চট্টগ্রাম নগরীর বেপারিপাড়ায় তার বাসায় এসে পোলাও খেতে চেয়েছিলেন কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম। ফুফাতো ভাইয়ের আবদার মেটাতে তাকে পোলাও রান্না করে খাওয়ান তিনি। ওই বাসা থেকে বের হওয়ার পরই জসিমকে ধরে নিয়ে যায় আল-বদর বাহিনী।
এ মামলায় প্রসিকিউশনের আনা একাদশ অভিযোগে বলা হয়, মীর কাসেমের পরিকল্পনায় এবং তার নেতৃত্বে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণ করে আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। তাকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের ফলে জসিমের মৃত্যু হলে আরও পাঁচজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির লাশসহ তার মৃতদেহ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
“ডালিম হোটেলে আটকে রেখে জসিমকে অমানুষিক নির্যাতন করা হত। একদিন নির্যাতন করার পর জসিম একটু পানি খেতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা তা দেয়নি।”
সেখানে থাকা আরেক বন্দি অ্যাডভোকেট শফিউল আলম জমিয়ে রাখা হাত ধোয়া পানি জসিমকে খেতে দিয়েছিলেন সেদিন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শফিউল আলমসহ আরও কয়েকজন ডালিম হোটেল থেকে মুক্তি পান। তখন শফিউলের কাছ থেকেই জসিমের সেই নির্যাতনের কথা জানতে পারেন বলে জানান হাসিনা খাতুন।
সেই সময়ের চট্টগ্রামের ত্রাস মীর কাসেম অর্থ-বিত্তে এখনও অনেক ‘শক্তিশালী’ মন্তব্য করে জসিমের এই বোন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনি ধনী মানুষ, অর্থ আছে। আপিল আর রিভিউ মিলে উনি যে সময় পেয়েছেন, ততখানি আর কেউ পায় নাই।”
শেষ বিচারেও মীর কাসেমের প্রাণদণ্ড বহাল থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করে হাসিনা খাতুন বলেন, “আমি ভাই হত্যার বিচার পেয়েছি এবং এটা বহাল আছে। দ্রুত ফাঁসির রায় কার্যকর হবে বলে এখন আশা করি।”
একাত্তরের ঘৃণিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার পাশাপাশি বাকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ‘সঠিকভাবে’ শেষ করার দাবি জানান তিনি।